সম্প্রতি ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলার একটি দুর্গাপূজা মন্ডপে গীতা পাঠ করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক মাওলানা মতিয়ার রহমান। বৃহস্পতিবার রাতে বাজে বামনদহ হরিতলা পালপাড়া পূজামণ্ডপে বক্তৃতা দেওয়ার সময় তিনি গীতা থেকে একটি শ্লোক পাঠ করেন, যা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে। এই ঘটনা দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে।

জাতির উদ্দেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণ: আইন হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান

অধ্যাপক মতিয়ার রহমান, যিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় মজলিসে সূরার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তার এই কর্মকাণ্ড রাজনৈতিক ও ধর্মীয় মহলে নানা প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। তার গীতা পাঠের ঘটনাটি অনেকের কাছে জামায়াতের কঠোর ইসলামপন্থী ভাবমূর্তির বিপরীতে গিয়ে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহনশীলতার ইঙ্গিত হিসেবে দেখা হচ্ছে। তবে, অন্যদিকে, এই ঘটনা অনেকের কাছে বিভ্রান্তিকর এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে হয়েছে।

ঝিনাইদহে মুরগীর দোকান দখল করে নিলো বিএনপির সমর্থকরা

বৃহস্পতিবার রাত ১০টার দিকে বাজে বামনদহ হরিতলা পালপাড়া পূজামণ্ডপে উপস্থিত হয়ে অধ্যাপক মতিয়ার রহমান একটি বক্তৃতা প্রদান করেন। বক্তব্যের এক পর্যায়ে তিনি গীতা থেকে একটি শ্লোক পাঠ করেন, যা উপস্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বী নারীদের মধ্যে উলুধ্বনি ও শঙ্খ বাজানোর মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়। তার এই কর্মকাণ্ড মণ্ডপে উপস্থিত সনাতন ধর্মাবলম্বী দর্শনার্থীদের মধ্যে ভালো সাড়া ফেলে। বক্তৃতার সময় তিনি বলেন, “আমি একা আসিনি, আমার সাথে বিএনপির নেতারাও আছেন।” এছাড়াও তিনি হিন্দু সম্প্রদায়ের বিভিন্ন ধর্মীয় উৎসবে সহযোগিতার আশ্বাস দেন এবং নির্বাচনে জয়ী হলে হিন্দু সম্প্রদায়ের জন্য কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন।

অধ্যাপক মতিয়ার রহমান তার বক্তৃতায় ইসলাম ও সনাতন ধর্মের মধ্যে সম্পর্কের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। তিনি বলেন, “আমি ইসলামী আদর্শের ব্যক্তি হলেও আমার ভেতরে একজন ভালো সনাতনী হিন্দু ব্রাহ্মণ, একজন ভালো খ্রিস্টান এবং একজন ভালো মুসলিম বাস করে।” তিনি আরও উল্লেখ করেন, হিন্দু ধর্মের আবির্ভাব মুসলিমদের কোরআন পাওয়ার সাড়ে চার হাজার বছর পূর্বে হয়েছে। তার এই বক্তব্য ধর্মীয় ইতিহাস এবং বিভিন্ন ধর্মের সহাবস্থানের বিষয়ে একটি গভীর বার্তা বহন করে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কমিটি প্রকাশ্যে

অধ্যাপক মতিয়ার রহমানের গীতা পাঠের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তা দেশজুড়ে আলোচনার জন্ম দিয়েছে। অনেকেই তার এই পদক্ষেপকে প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন, এটি ধর্মীয় সহনশীলতার উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে। সনাতন ধর্মাবলম্বী অনেকে এই ঘটনাকে ইতিবাচক হিসেবে দেখছেন, যেখানে একজন ইসলামী নেতার এমন সহানুভূতিশীল আচরণ তাদের প্রতি সহমর্মিতা প্রদর্শন করে।

তবে, অন্যদিকে, রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সাধারণ মানুষের একটি বড় অংশ এই ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বলে মনে করছেন। তারা মনে করছেন, জামায়াত নেতা এই ধরনের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে রাজনৈতিক সমর্থন বাড়ানোর চেষ্টা করছেন, বিশেষ করে সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের সমর্থন পাওয়ার উদ্দেশ্যে। জামায়াতের অতীতের কর্মসূচি এবং হিন্দুদের বিরুদ্ধে সহিংসতা নিয়ে বিতর্কিত অবস্থান থাকায় অনেকেই তার এই পদক্ষেপকে কৌশলগত বলে মনে করছেন।

কোটচাঁদপুর এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বী জনগণ অধ্যাপক মতিয়ার রহমানের এই পদক্ষেপকে ইতিবাচকভাবে নিয়েছেন। হরিতলা পালপাড়া পূজামণ্ডপের আহ্বায়ক কমিটির সভাপতি গুরুদাস বিশ্বাস বলেন, “অধ্যাপক মতিয়ার রহমান আমাদের ধর্ম সম্পর্কে অনেক জ্ঞান দিয়েছেন এবং গীতা থেকে একটি শ্লোক পাঠ করেছেন, যা আমাদের অত্যন্ত ভালো লেগেছে।” স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে তার এই কর্মকাণ্ডের প্রশংসা পাওয়া গেছে।

আমান আযমী দলটির কোনো প্রতিনিধি নন এবং তার বক্তব্য জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনোভাবেই সংযুক্ত নয়।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, অধ্যাপক মতিয়ার রহমানের এই কর্মকাণ্ড জামায়াতে ইসলামী এবং বিএনপির মধ্যে একটি বৃহত্তর রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হতে পারে। বিএনপি ও জামায়াতের রাজনৈতিক জোটকে শক্তিশালী করতে এবং সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মধ্যে সমর্থন বাড়ানোর লক্ষ্যে এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশে রাজনৈতিক অঙ্গনে ধর্মীয় সহনশীলতা ও সমন্বয়ের উপর জোর দেওয়া হচ্ছে, এবং এই পদক্ষেপ সেই প্রবণতারই প্রতিফলন হতে পারে।

তবে, এর বিরোধিতাকারীরা মনে করেন, এই কর্মকাণ্ডের পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে, যা নির্বাচনের আগে সমর্থন জোগাড় করার প্রচেষ্টা হতে পারে। জামায়াতের অতীতের বিতর্কিত ভূমিকা এবং সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের ইতিহাস এই সন্দেহকে আরও দৃঢ় করে তুলেছে।

অধ্যাপক মতিয়ার রহমানের পূজা মণ্ডপে গীতা পাঠ এবং তার বক্তব্য সামাজিক ও রাজনৈতিক অঙ্গনে গভীর প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছে। ধর্মীয় সহনশীলতা ও সম্মিলনের বার্তা দেওয়া হলেও, এর পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে কিনা তা নিয়ে বিতর্ক রয়ে গেছে। তার এই পদক্ষেপ একটি গুরুত্বপূর্ণ বার্তা বহন করে, যা বাংলাদেশে ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং রাজনৈতিক কৌশলের এক নতুন দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version