জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার এক বিবৃতিতে স্পষ্ট করেছেন যে, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (বরখাস্ত) আবদুল্লাহিল আমান আযমী দলটির প্রতিনিধিত্ব করেন না। তাঁর সাম্প্রতিক বক্তব্যকে আমান আযমীর ব্যক্তিগত মতামত বলে উল্লেখ করেছেন এবং জামায়াতের সঙ্গে তাঁর কোনো সাংগঠনিক সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছেন।

এই বিবৃতি আসে এমন একটি প্রেক্ষাপটে, যখন আমান আযমী ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখেন। সেখানে তিনি আট বছরের বন্দিশালার অভিজ্ঞতা শেয়ার করার পাশাপাশি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা এবং জাতীয় সংগীতের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে মন্তব্য করেন। বিশেষ করে, তিনি জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি তুলেছিলেন এবং উল্লেখ করেন যে বর্তমানে প্রচলিত জাতীয় সংগীত ভারতের তৈরি করা, যা দুই বাংলার জন্য রচিত হয়েছিল। তাঁর মতে, বাংলাদেশের জন্য নতুন জাতীয় সংগীত রচনা করা উচিত।

ঝিনাইদহে প্রতারণার সময় জ্বীনের বাদশা পরিচয় দিয়ে ৩ জন আটক

আমান আযমীর এই বক্তব্যের ফলে সমাজে নানা প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়, যার প্রেক্ষিতে জামায়াতে ইসলামী থেকে এই বিবৃতি জারি করা হয়। গোলাম পরওয়ার বলেন, আমান আযমীর বক্তব্যকে জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করার কোনো সুযোগ নেই এবং তাঁর ব্যক্তিগত মতামতের কারণে দল সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়ানোরও কোনো অবকাশ নেই।

এ বিবৃতির মাধ্যমে জামায়াত স্পষ্ট করতে চেয়েছে যে, আমান আযমীর মন্তব্য দলীয় অবস্থান নয় এবং দল থেকে তাকে আলাদা হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।

জামায়াতে ইসলামীর সেক্রেটারি জেনারেল অধ্যাপক মিয়া গোলাম পরওয়ার সম্প্রতি এক বিবৃতিতে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (বরখাস্ত) আবদুল্লাহিল আমান আযমীর সাম্প্রতিক বক্তব্যকে তার ব্যক্তিগত মতামত হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন যে আমান আযমী দলটির কোনো প্রতিনিধি নন এবং তার বক্তব্য জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে কোনোভাবেই সংযুক্ত নয়। এ বিবৃতিটি আসে এমন সময়ে যখন আমান আযমীর একটি বক্তব্য বিভিন্ন জাতীয় দৈনিক ও অনলাইন পোর্টালে প্রকাশিত হয়, যা নিয়ে সমাজের বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।

আসামে সম্প্রতি জনপ্রিয় সংগীতশিল্পী আলতাপ হুসেনকে “দেশটা তোমার বাপের নাকি,” গান গাওয়ার কারণে গ্রেপ্তার

২০২৪ সালের ৩ সেপ্টেম্বর রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে একটি সংবাদ সম্মেলনে আমান আযমী অনলাইনে যুক্ত হয়ে নিজের আট বছরের বন্দিশালার অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন। সেই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে শহীদের সংখ্যা এবং জাতীয় সংগীতের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে কথা বলেন। বিশেষ করে, তিনি বাংলাদেশের বর্তমান জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের দাবি তোলেন। আমান আযমীর দাবি ছিল, বর্তমান জাতীয় সংগীতটি মূলত ভারতের রচিত এবং দুই বাংলার জন্য লেখা হয়েছিল, তাই এটি বাংলাদেশের জন্য উপযুক্ত নয়। তার মতে, স্বাধীন বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন জাতীয় সংগীত রচনা করা উচিত, যা দেশের নিজস্ব পরিচিতি ও সংস্কৃতিকে বহন করবে।

আমান আযমীর এই বক্তব্য বিভিন্ন মহলে বিতর্কের সৃষ্টি করে, বিশেষ করে জাতীয় সংগীত নিয়ে তার মন্তব্যে জনমনে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এমন অবস্থায় জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতি দিয়ে দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার জানান, আমান আযমীর এই বক্তব্য তার সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত মতামত। জামায়াতের সঙ্গে তার কোনো সাংগঠনিক সম্পর্ক নেই এবং তিনি দলটির কোনো প্রতিনিধি নন। পরওয়ার বলেন, “আমান আযমী যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা তার একান্ত ব্যক্তিগত মত। সুতরাং তার বক্তব্যকে জামায়াতের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করার কোনো সুযোগ নেই।”

আওয়ামী লীগ সমর্থকদের বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট,বিএনপি সমর্থককে কুপিয়ে আহত,

তিনি আরও বলেন, আমান আযমীর এই বক্তব্যকে কেন্দ্র করে জামায়াতে ইসলামীর ওপর কোনো বিভ্রান্তি বা ভুল ধারণা সৃষ্টি করা অনুচিত। দলের পক্ষ থেকে স্পষ্ট করা হয়েছে যে, আমান আযমীর বক্তব্য দলীয় অবস্থানকে প্রতিফলিত করে না এবং এটি শুধুমাত্র তার নিজের মতামত।

জাতীয় সংগীতের পরিবর্তন সংক্রান্ত আমান আযমীর মন্তব্যে জনমনে বিভিন্ন ধরনের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অন্যান্য ফোরামে অনেকেই তার মন্তব্যের তীব্র সমালোচনা করেছেন। বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত “আমার সোনার বাংলা” বিশ্ববিখ্যাত বাঙালি কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের রচনা, যা দেশের মানুষের সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে এটি সর্বজনীনভাবে স্বীকৃত এবং এ জাতীয় সংগীতের পরিবর্তন চাওয়া একটি অত্যন্ত স্পর্শকাতর বিষয় হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

অপরদিকে, কিছু মানুষ আমান আযমীর বক্তব্যের পক্ষে মত দিয়েছেন, যারা মনে করেন যে, একটি স্বাধীন দেশের জন্য একটি স্বতন্ত্র জাতীয় সংগীত থাকা উচিত, যা সেই দেশের নিজস্ব সংস্কৃতি, ইতিহাস, এবং পরিচিতি ফুটিয়ে তুলবে। তবে এই মতামত সংখ্যাগরিষ্ঠের নয় এবং এটি বিতর্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ রয়েছে।

ঝিনাইদহ চক্ষু হাসপাতালের সহকারী পরিচালকের বিরুদ্ধে পাহাড়সম অভিযোগ, ১২ দিনেও ব্যবস্থা নেয়নি সমাজসেবা কার্যালয়

সংবাদ সম্মেলনে আমান আযমী তার আট বছরের গোপন বন্দিশালায় আটক থাকার অভিজ্ঞতার কথা বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, তাকে দীর্ঘদিন ধরে বিচারের সম্মুখীন না করে আটক রাখা হয়েছিল এবং তার মুক্তির প্রক্রিয়ায়ও জটিলতা সৃষ্টি করা হয়েছিল। তার দাবি ছিল, তার সঙ্গে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে এবং তাকে যে নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে, তা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমতুল্য।

তিনি বলেন, গোপন বন্দিশালায় তার আটক থাকা একটি পরিকল্পিত রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ। তার পিতা, জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের নামের সঙ্গে যুক্ত থাকার কারণে তাকে এভাবে লক্ষ্যবস্তু করা হয়েছে বলে তার অভিমত। এ সময় তিনি মানবাধিকার সংস্থাগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করেন এবং এই ধরনের রাজনৈতিক বন্দিত্ব বন্ধ করার আহ্বান জানান।

আমান আযমীর বক্তব্য ও তার বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থান মূলত তার পিতা গোলাম আযমের দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনের একটি ধারাবাহিকতা। গোলাম আযম ছিলেন বাংলাদেশের একজন অন্যতম বিতর্কিত রাজনৈতিক ব্যক্তি, যিনি ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে, বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরেও তিনি জামায়াতে ইসলামী দলের নেতা হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। ২০১৩ সালে যুদ্ধাপরাধের দায়ে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে মামলার রায় হয় এবং তাকে কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

গোলাম আযমের ছেলে হিসেবে আমান আযমীর রাজনৈতিক জীবনও বিশেষভাবে আলোচিত। তবে, তার সাম্প্রতিক বক্তব্যগুলো তাকে জামায়াতের মূলধারা থেকে অনেকটাই আলাদা করেছে, বিশেষ করে জাতীয় সংগীত পরিবর্তনের মতো স্পর্শকাতর বিষয়ে তার মতামত।

জামায়াতে ইসলামী বর্তমানে বাংলাদেশের রাজনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ তবে বিতর্কিত দল হিসেবে টিকে রয়েছে। দলটি বিশেষত ধর্মভিত্তিক রাজনীতির উপর গুরুত্ব দেয় এবং দেশের একটি উল্লেখযোগ্য অংশের মানুষ তাদের সমর্থক। তবে, ২০১৩ সালের যুদ্ধাপরাধের বিচারের পরে দলের নেতাদের অনেকে কারাগারে আছেন এবং দলটি বর্তমানে রাজনৈতিকভাবে অনেকটা কোণঠাসা।

ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলায় র‌্যাব-৬-এর অভিযানে এক অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রেফতার

মিয়া গোলাম পরওয়ারের বিবৃতি থেকে বোঝা যায় যে, দলটি তাদের অবস্থান সুস্পষ্ট করতে চাইছে এবং কোনো ব্যক্তিগত মতামতকে দলীয় অবস্থানের সঙ্গে মিশিয়ে ফেলা হচ্ছে না। এটি মূলত দলটির ভেতরে এবং বাইরে যেকোনো ধরনের বিভ্রান্তি দূর করতে এবং তাদের সমর্থকদের মধ্যে এক ধরনের স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে করা হয়েছে।

তবে জামায়াতের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক পথে চলার ক্ষেত্রে এই ধরনের বিতর্ক এবং দলটির অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক চাপগুলো কেমন ভূমিকা রাখবে, তা সময়ই বলে দেবে।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version