বিএনপির প্রভাবশালী নেতা হারিছ চৌধুরীর মরদেহ উত্তোলনের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। আদালতের আদেশ অনুযায়ী, হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নিশ্চিত করতে মরদেহ থেকে ডিএনএ নমুনা সংগ্রহ করা হবে। ঢাকা জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কার্যালয় থেকে গত ৮ই অক্টোবর এই নির্দেশনা জারি করা হয়, যাতে সাভারের জামিয়া খাতামুন নবীঈনের কবরস্থান থেকে মরদেহ উত্তোলন করার সময় একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উপস্থিত থাকার কথাও বলা হয়েছে। এই নির্দেশনা হাইকোর্ট বিভাগের রিট পিটিশন নং-১০৭৮৭/২৪-এর ভিত্তিতে জারি করা হয়, যা হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরীর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত থেকে এসেছে।

ঢাকার মোহাম্মদপুরে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ৮, পাঁচজন বিভিন্ন বাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্য : র‍্যাব

হাইকোর্ট গত ৫ই সেপ্টেম্বর হারিছ চৌধুরীর মরদেহ উত্তোলনের আদেশ দেয়, যাতে তার পরিচয় প্রমাণের জন্য ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। হারিছ চৌধুরীর মেয়ে সামিরা তানজিন চৌধুরী এই রিট পিটিশন করেন, যেখানে তিনি দাবি করেন যে, তার বাবাকে মাহমুদুর রহমান নামে সাভারের কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। সামিরার দাবি, তার বাবার সঠিক পরিচয় নিশ্চিত করে তাকে যথাযথ মর্যাদায় দাফন করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এছাড়া, তিনি আদালতের কাছে ইন্টারপোলের রেড নোটিশ থেকে তার বাবার নাম মুছে ফেলার এবং মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে তাকে সম্মানিত করে পুনরায় দাফন করার আবেদন জানান।

হারিছ চৌধুরীর মৃত্যু নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে নানা বিতর্ক চলছে। ২০২২ সালের জানুয়ারিতে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয় যে, হারিছ চৌধুরী করোনায় আক্রান্ত হয়ে ঢাকায় মারা গেছেন। হারিছের মেয়ে সামিরা এই তথ্য নিশ্চিত করেন এবং বলেন, তার বাবা ২০২১ সালের ৩রা সেপ্টেম্বর এভারকেয়ার হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু হারিছের চাচা আশিক চৌধুরী তখন দাবি করেছিলেন যে, হারিছ ঢাকায় নয়, লন্ডনে মারা গেছেন। এই বিবৃতি নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচনা ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়।

কুড়িগ্রামে মহানবী (সা.)–কে নিয়ে কটূক্তি করায় গ্রেপ্তার ২

এরপর, গণমাধ্যমে আরও অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়, যেখানে দাবি করা হয় যে, হারিছ চৌধুরী আসলে দীর্ঘদিন ধরে আত্মগোপনে ছিলেন এবং তার পরিচয় পরিবর্তন করে মাহমুদুর রহমান নামে পরিচিত ছিলেন। অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, হারিছ চৌধুরী ওয়ান ইলেভেনের সময় থেকে বাংলাদেশের মধ্যেই আত্মগোপনে ছিলেন এবং কখনও লন্ডন বা অন্য কোনো দেশে যাননি।

হারিছ চৌধুরী তার নতুন পরিচয়ে দীর্ঘদিন ধরে ঢাকায় ছিলেন এবং মাহমুদুর রহমান নামে পরিচিত হন। তিনি ঢাকার পান্থপথে ১১ বছর ধরে এই নামেই বাস করতেন এবং একজন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক হিসেবে পরিচয় দিতেন। এমনকি তিনি এই নামেই পাসপোর্ট ও জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করেছিলেন। পাসপোর্ট নম্বর BW0952982 এবং এনআইডি নম্বর ১৯৫৮৩৩৯৫০৭। এই পরিচয়ে তিনি সিলেটের শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজারে ঠিকানা ব্যবহার করেছিলেন।

দুর্গাপূজা মন্ডপে দুর্গাপূজা মন্ডপেপাঠ করে ভাইরাল জামায়াতের কেন্দ্রীয় নেতা

মানবজমিন পত্রিকার অনুসন্ধানে জানা যায়, হারিছ চৌধুরী তার চেহারায় পরিবর্তন এনে নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন। তার সাদা চুল, দাড়ি এবং বয়সের ছাপ তার নতুন পরিচয়কে আরও বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছিল। দীর্ঘ ১৪ বছর ধরে তিনি গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর নজর এড়িয়ে আত্মগোপনে ছিলেন।

মরদেহ উত্তোলনের মূল উদ্দেশ্য হলো, হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নিশ্চিত করা এবং তার প্রকৃত মৃত্যুর তথ্য যাচাই করা। তার মেয়ে সামিরা চৌধুরী আদালতে তার পিতার মরদেহ উত্তোলন করে ডিএনএ পরীক্ষা করার আবেদন করেন, যাতে তার পরিচয় নিশ্চিত হওয়া যায় এবং তাকে যথাযথ সম্মান দিয়ে দাফন করা হয়। এই পরীক্ষা সম্পন্ন হলে হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নিয়ে চলমান বিতর্কের অবসান হবে বলে আশা করা হচ্ছে।

হারিছ চৌধুরীর পরিচয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে যে রহস্য ও বিতর্ক চলছিল, তা এই ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে সমাধান হতে পারে। একসময় বিএনপির প্রভাবশালী নেতা হিসেবে পরিচিত হারিছ চৌধুরীর আত্মগোপনের সময় এবং মৃত্যুর পর তার পরিচয় পরিবর্তন নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনা ও বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছিল। এখন আদালতের নির্দেশনায় ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে তার পরিচয় নিশ্চিত হলে এই বিতর্কের সমাপ্তি ঘটবে বলে মনে করছেন অনেকে।

ঝিনাইদহে বিদ্যুৎ স্পৃষ্টে এক যুবকের মৃত্যু

এই ঘটনায় বিএনপির ভেতরেও মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। অনেক নেতারা এই বিষয়টি নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি, তবে কিছু নেতা হারিছ চৌধুরীর মৃত্যুর বিষয়ে এখনও সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তবে ডিএনএ পরীক্ষার ফলাফলই এই রহস্যের সমাধান দিতে পারে।

অন্যদিকে, সাধারণ মানুষ ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা এই ঘটনায় নতুন করে আলোচনার সৃষ্টি করেছেন। তারা বলছেন, রাজনৈতিক নেতাদের আত্মগোপনের এমন ঘটনা খুবই বিরল এবং এটি বাংলাদেশের রাজনীতিতে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় হয়ে থাকবে।

ঝিনাইদহে মুরগীর দোকান দখল করে নিলো বিএনপির সমর্থকরা

বিএনপির নেতা হারিছ চৌধুরীর মরদেহ উত্তোলন ও ডিএনএ পরীক্ষার নির্দেশনা বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে একটি বিশেষ অধ্যায় হয়ে থাকবে। তার মৃত্যু ও পরিচয় নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে চলা বিতর্ক এবং রহস্যের অবসান হতে যাচ্ছে এই পরীক্ষার মাধ্যমে। আদালতের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে মরদেহ উত্তোলন ও পরীক্ষার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হলে এই ঘটনা নিয়ে নতুন করে আলোড়ন সৃষ্টি হতে পারে।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version