ঝিনাইদহ সদর উপজেলার সাগান্না ইউনিয়নের বকসিপুর মাঠে আড়াই বিঘা জমির পাকা ধান পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা। এই মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে বুধবার গভীর রাতে। ক্ষতিগ্রস্ত জমির মালিক স্থানীয় কৃষক নাসির উদ্দীন জানান, তার সারা বছরের পরিশ্রম ও ফসল মুহূর্তের মধ্যে আগুনে পুড়ে গেছে, এতে তার প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে।

ঝিনাইদহে স্কুল শিক্ষক হত্যা মামলায় দুইজনের যাবজ্জীবন

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাসির উদ্দীন তার বাড়ির পাশের মাঠে আড়াই বিঘা জমির পাকা ধান কেটে স্তুপ করে রেখেছিলেন। গভীর রাতে অজ্ঞাত দুর্বৃত্তরা সেই ধানের স্তুপে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনে পুরো জমির ধান পুড়ে ছাই হয়ে যায়। ফসলের এই অপূরণীয় ক্ষতি দেখে নাসির উদ্দীন হতাশা প্রকাশ করেন এবং তার সারা বছরের পরিশ্রম নষ্ট হয়ে যাওয়ায় তিনি অত্যন্ত ব্যথিত।

নাসির উদ্দীন বলেন, “আমার পাকা ধান মাঠে বেঁধে স্তুপ করে রাখা ছিল। দুর্বৃত্তরা রাতে এসে আমার ধানে আগুন ধরিয়ে দেয়। সব ধান পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আমার প্রায় লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি হয়েছে। আমি এখন কী করবো বুঝতে পারছি না।”

গোসল করতে নেমে ঝিনাইদহে পানিতে ডুবে প্রাণ গেল দুই শিক্ষার্থীর

এই ঘটনার পর স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে আতঙ্ক ও ক্ষোভ ছড়িয়ে পড়েছে। তারা এই ধরনের ঘটনা যে কোনো কৃষকের জন্যই বড় ধরনের আঘাত হতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন। অনেকেই মনে করছেন, পরিকল্পিতভাবে কেউ এই ক্ষতি করেছে। স্থানীয় কৃষকরা দোষীদের শাস্তির দাবি জানিয়েছেন এবং এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে আরও সতর্ক থাকার আহ্বান করেছেন।

ঝিনাইদহ সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন জানান, “এ ঘটনাটি সম্পর্কে আমার কাছে কোনো অভিযোগ আসেনি। তবে ভুক্তভোগীরা যদি অভিযোগ করেন, তাহলে আমরা তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেব।”

পুলিশ এখনও তদন্ত শুরু করেনি, তবে স্থানীয় জনগণ দ্রুত তদন্তের দাবি জানিয়েছে। তারা বলছে, কৃষকদের সঙ্গে এই ধরনের আচরণ গ্রামাঞ্চলে আরও বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে। ফসলের ক্ষতি শুধু একজন ব্যক্তির নয়, এটি পুরো গ্রামের জন্যই ধাক্কা। কারণ, গ্রামীণ এলাকাগুলোতে কৃষি প্রধান আয়ের উৎস।

নারায়ণগঞ্জের জেলার মামুনুর রশিদের কোটি কোটি টাকার সম্পদ ঝিনাইদহে!

বকসিপুর গ্রামের কৃষকদের মতে, এমন ঘটনা সাধারণত বিরোধ বা শত্রুতার কারণে ঘটে। কেউ হয়তো ব্যক্তিগত রেষারেষির কারণে ফসলের ক্ষতি করেছে। একজন কৃষক বলেন, “আমাদের জীবিকা নির্ভর করে ফসলের ওপর। ফসল নষ্ট হলে আমাদের সবকিছু নষ্ট হয়। তাই যারা এই ক্ষতি করেছে, তাদের দ্রুত খুঁজে বের করা উচিত এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া উচিত।”

কৃষকদের আশঙ্কা, এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হলে অন্যান্য কৃষকও আর্থিক সংকটে পড়তে পারে। বিশেষ করে এই মৌসুমে ধান কাটা ও মাড়াইয়ের সময়। ধান কেটে রাখার পর সেগুলো সংরক্ষণের জন্য নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন তারা।

নারায়ণগঞ্জের জেলার মামুনুর রশিদের কোটি কোটি টাকার সম্পদ ঝিনাইদহে!

এই ধরণের ঘটনাগুলোতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর আরও তৎপর হওয়া উচিত বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কৃষকরা প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, তারা যেন দ্রুত তদন্ত করে দোষীদের খুঁজে বের করে এবং তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

এছাড়া কৃষি বিভাগকেও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পাশে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়েছেন অনেকে। কারণ, ফসলের ক্ষতি শুধু ব্যক্তিগত নয়, এটি জাতীয় অর্থনীতির ওপরও প্রভাব ফেলতে পারে। বিশেষত যখন দেশের বেশিরভাগ মানুষই কৃষির ওপর নির্ভরশীল।

এ ধরনের ঘটনা রোধে স্থানীয় পর্যায়ে সচেতনতা বাড়ানো এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সক্রিয়তা নিশ্চিত করা জরুরি। এছাড়া, ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের দ্রুত সহায়তা প্রদান করতে স্থানীয় প্রশাসন ও কৃষি বিভাগেরও এগিয়ে আসা উচিত।

এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় ঝিনাইদহে এক ছাত্রীর আত্মহত্যা

কৃষক নাসির উদ্দীনের মতো যারা পুরো সিজনের পরিশ্রম এক মুহূর্তে হারিয়ে ফেলেছেন, তাদের জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থাও থাকা উচিত। এমনকি স্থানীয় সমবায় বা কৃষি সংগঠনগুলোও তাদের পাশে দাঁড়াতে পারে, যাতে তারা তাদের পরবর্তী ফসলের মৌসুমে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে।

এই ধরণের ঘটনা ভবিষ্যতে রোধে নজরদারি বাড়ানো এবং ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের সাহায্যের জন্য প্রশাসনের দৃঢ় পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version