ঝিনাইদহের শহরের পৌর এলাকার ভুটিয়ারগাতী গ্রামে একটি মর্মান্তিক দুর্ঘটনায় বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাসান আলী মণ্ডল (৩৫) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে। বুধবার দুপুরে উত্তরপাড়ায় এ ঘটনা ঘটে, যা গ্রামবাসী এবং পরিবারের জন্য গভীর শোকের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। হাসান আলী মণ্ডল, যিনি ওই গ্রামের সেলুন মণ্ডলের ছেলে, একটি দৈনন্দিন কাজ করতে গিয়ে জীবনের শেষদিনটি পার করেন।

সাবেক ভুমি মন্ত্রী ভারতে পালানোর সময় মহেশপুর সীমান্ত থেকে বিজিবি আটক করে

স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, হাসান আলী মণ্ডল গ্রামের মতিয়ার মিয়ার বাড়ির পাশে একটি কড়াইগাছ থেকে খড়ি ভাঙছিলেন। খড়ি ভাঙার কাজে তিনি একটি লম্বা বাঁশ বা কোটা ব্যবহার করছিলেন। দুর্ভাগ্যবশত, সেই কোটাটি উপর দিয়ে যাওয়া মেনলাইন বা প্রধান বিদ্যুতের তারের সাথে স্পর্শ করে। তারের সাথে স্পর্শ হওয়া মাত্রই হাসান আলী বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন এবং তার শরীরে আগুন ধরে যায়। স্থানীয়রা তৎক্ষণাৎ ঘটনাস্থলে ছুটে এসে তাকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে নিয়ে যান।

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক ডা. নবী নেওয়াজ জানান, হাসান আলী হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই তার মৃত্যু হয়। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার পর থেকে শরীরের ক্ষতিগ্রস্ত অংশ এবং শরীরে আগুন ধরে যাওয়ার কারণে তাৎক্ষণিকভাবে তিনি প্রাণ হারান। স্থানীয়রা দ্রুত হাসপাতালে নেওয়ার চেষ্টা করলেও সময়মতো চিকিৎসা পাওয়া সম্ভব হয়নি।

পাঁচ উপায়ে আপনি আপনার রাউটার আপগ্রেড না করেই আপনার Wi-Fi গতি উন্নত করতে পারেন৷

ঘটনার পর ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শাহীন উদ্দীন ঘটনাটি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, হাসানের পরিবারের সদস্যরা থানায় এসে সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন। পুলিশ এ ঘটনায় একটি প্রাথমিক তদন্ত শুরু করেছে। বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হওয়ার এই ধরনের ঘটনা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং অনাকাঙ্ক্ষিত বলে তিনি মন্তব্য করেন।

বাংলাদেশে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে মৃত্যুর ঘটনা নতুন কিছু নয়। দেশব্যাপী প্রতিনিয়ত এমন ঘটনার সম্মুখীন হচ্ছে মানুষ। বিশেষত গ্রামীণ এলাকায়, যেখানে বিদ্যুতের লাইন সঠিকভাবে নিরাপত্তা বজায় রেখে স্থাপন করা হয়নি, সেখানে এই ঝুঁকি আরও বেশি। মেনলাইন বা প্রধান বিদ্যুৎ সঞ্চালন তার খুবই শক্তিশালী এবং এটি স্পর্শ করলে তাৎক্ষণিকভাবে শরীরের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক প্রবাহ চলতে শুরু করে, যা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে ধ্বংস করে ফেলে। বিদ্যুতের সাথে স্পর্শ হলে শরীরের কোষগুলো তৎক্ষণাৎ পুড়ে যেতে থাকে এবং হৃদযন্ত্র বিকল হয়ে যায়, ফলে মৃত্যু ঘটে। হাসান আলীর ক্ষেত্রেও ঠিক এমনটাই ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

শৈলকুপায় নিখোঁজের ৩ দিন পর মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার

স্থানীয় মোফাজ্জেল হোসেনের মতে, এই ধরনের ঘটনা গ্রামবাসীদের মধ্যে আতঙ্ক তৈরি করেছে। হাসান আলী ছিলেন একজন সাধারণ গ্রামীণ মানুষ, যিনি প্রতিদিনের জীবিকা নির্বাহের জন্য কাজ করতেন। তার মৃত্যুতে পরিবার এবং স্থানীয় মানুষ শোকাহত। গ্রামের মানুষ এ ধরনের দুর্ঘটনা থেকে বাঁচার জন্য আরো সতর্ক হওয়ার প্রয়োজনীয়তা বোধ করছেন। বিদ্যুতের তারের কাছাকাছি গিয়ে কাজ করার সময় প্রয়োজনীয় সতর্কতা না নিলে এ ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

বাংলাদেশে বিদ্যুৎস্পৃষ্টে মৃত্যুর হার ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে গ্রামীণ এলাকায় অব্যবস্থাপনা, পুরোনো তারের অবস্থা খারাপ হওয়া এবং পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকার কারণে এমন ঘটনা বেশি ঘটে। বিদ্যুৎ সঞ্চালন তারের আশেপাশে কাজ করার সময় ব্যক্তিগত নিরাপত্তার দিকে সবারই খেয়াল রাখা উচিত। বিদ্যুতের তারের সাথে কোনো কিছু স্পর্শ করানোর আগে যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করা প্রয়োজন।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন এবং শিশু রাতুলের করুণ মৃত্যু

এই ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে কিছু কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে:

  1. নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা: মেনলাইন বা উচ্চ ভোল্টেজের তারের কাছাকাছি গিয়ে কাজ করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। এ ধরনের কাজ করার আগে বৈদ্যুতিক সংযোগ বন্ধ করার ব্যবস্থা নিশ্চিত করা উচিত।
  2. শিক্ষা ও সচেতনতা বৃদ্ধি: গ্রামাঞ্চলে মানুষের মধ্যে বিদ্যুৎ সঞ্চালন ও এর ঝুঁকি নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। বিশেষ করে যাদের বাড়ির আশেপাশে বিদ্যুতের প্রধান লাইন রয়েছে, তাদের বিদ্যুতের তার থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার প্রশিক্ষণ দেওয়া উচিত।
  3. সঠিক মানের বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা: অনেক গ্রামীণ এলাকায় পুরোনো বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা রয়েছে, যা দুর্বল এবং ঝুঁকিপূর্ণ। সরকার এবং বিদ্যুৎ বিভাগকে এই বিষয়গুলোতে নজর দিতে হবে এবং সঠিকভাবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
  4. প্রযুক্তির উন্নয়ন: বিদ্যুতের তার এবং অন্যান্য সরঞ্জামের মান উন্নত করা এবং নিয়মিতভাবে রক্ষণাবেক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। তারগুলো যেন পর্যাপ্ত উচ্চতায় স্থাপন করা হয় এবং তা যেন মানুষের দৈনন্দিন কাজের জন্য কোনও ঝুঁকি না তৈরি করে।

হাসান আলীর মৃত্যুতে তার পরিবারের উপর এক গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। তিনি ছিলেন পরিবারের একজন প্রধান উপার্জনকারী ব্যক্তি। তার হঠাৎ মৃত্যুতে পরিবারে অর্থনৈতিক সংকট দেখা দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তার মৃত্যুতে গ্রামের মানুষ এবং পরিবারের সদস্যরা গভীরভাবে শোকাহত। তাদের আশা, এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা আর না ঘটে এবং সরকার এ বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নেবে।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করলেন প্রধান উপদেষ্টা

ঝিনাইদহে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে হাসান আলীর মর্মান্তিক মৃত্যু আমাদের বিদ্যুৎ নিরাপত্তা নিয়ে আবারো প্রশ্ন তুলছে। এই ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধে নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও কঠোর করা প্রয়োজন এবং বিদ্যুতের আশেপাশে কাজ করার সময় সকলকে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। সরকারি উদ্যোগ, জনগণের সচেতনতা এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এ ধরনের দুর্ঘটনা প্রতিরোধ করা সম্ভব।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version