ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান ই-অরেঞ্জ ডট শপের মাধ্যমে ৩৫৮ কোটি টাকা পাচার এবং মানি লন্ডারিংয়ের অভিযোগ নিয়ে আবারও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রায় তিন বছর ধরে চলমান এই মামলার তদন্ত এবং দাখিল করা অভিযোগপত্রে উঠে এসেছে কিভাবে এ বিপুল অর্থের লেনদেন এবং গ্রাহকদের সঙ্গে প্রতারণা করা হয়েছে।

নোটিফিকেশনে অ্যান্ড্রয়েডের নতুন সুবিধার কথা জানাচ্ছে গুগল

ই-অরেঞ্জ ডট শপ ২০১৯ সালের জুলাই থেকে ২০২১ সালের আগস্ট পর্যন্ত তিন বছরব্যাপী ব্যবসা পরিচালনা করে। প্রতিষ্ঠানটি বিশেষভাবে গ্রাহকদের কাছ থেকে আগাম টাকা নিয়ে মোটরসাইকেল, মুঠোফোন, রেফ্রিজারেটর, টেলিভিশন ইত্যাদি পণ্য সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিত। গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে তারা ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে পণ্য সরবরাহের প্রতিশ্রুতি দিয়ে ‘ডাবল টাকা ভাউচার অফার’ চালু করেছিল। এই অস্বাভাবিকভাবে কম দামের অফার দেখে অনেক গ্রাহক প্রতিষ্ঠানটিতে বিনিয়োগ করে, কিন্তু অধিকাংশই পণ্য পাননি।

এই সময়ে ই-অরেঞ্জ প্রায় ৩ লাখ ১৫ হাজার ৫৭০ জন গ্রাহকের কাছ থেকে ৯৫৭ কোটি টাকা সংগ্রহ করে। প্রতিষ্ঠানটির মূল কৌশল ছিল কম দামে পণ্য দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে গ্রাহকদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা আদায় করা। কিন্তু এসব অগ্রিম দেওয়া টাকার সিংহভাগই সরাসরি মানি লন্ডারিংয়ে ব্যবহার হয়।

সাবেক ভুমি মন্ত্রী ভারতে পালানোর সময় মহেশপুর সীমান্ত থেকে বিজিবি আটক করে

পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) দাখিল করা অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ই-অরেঞ্জের মাধ্যমে ৩৫৮ কোটি টাকার মানি লন্ডারিং হয়েছে। প্রধান অভিযুক্ত হচ্ছেন গুলশান থানার সাবেক পুলিশ পরিদর্শক শেখ সোহেল রানা, যিনি সরকারি চাকরির আড়ালে প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনা করতেন। সোহেল রানা, তাঁর বোন সোনিয়া মেহজাবিন, এবং তাঁদের আত্মীয়স্বজন এ মানি লন্ডারিংয়ের সঙ্গে সরাসরি জড়িত ছিলেন। এ ছাড়া অভিযুক্তদের মধ্যে আরও আছেন নাজমুল আলম রাসেল এবং তাঁর ভাই মঞ্জুর আলম পারভেজ, যারা আরপি করপোরেশন নামে একটি প্রতিষ্ঠানের মালিক।

অভিযোগপত্র অনুযায়ী, ই-অরেঞ্জে ব্যবহৃত সফটওয়্যার এবং ওয়েবসাইট পরিচালনার মূল দায়িত্বে ছিলেন নাজমুল আলম রাসেল। তিনিই ভুয়া ক্রয় আদেশ এবং গ্রাহকের তথ্য তৈরি করে বিপুল পরিমাণ অর্থ আত্মসাৎ করেন। তাঁর ভাই মঞ্জুর আলম পারভেজের সাথে মিলে তিনি এই কাজ সম্পন্ন করেন।

পাঁচ উপায়ে আপনি আপনার রাউটার আপগ্রেড না করেই আপনার Wi-Fi গতি উন্নত করতে পারেন৷

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়েছে, সোহেল রানা এবং তাঁর আত্মীয়স্বজনের নামে একাধিক ফ্ল্যাট ক্রয় করা হয়েছে। অন্যদিকে অল জোন নামক একটি প্রতিষ্ঠান মোটরসাইকেল সরবরাহের নামে ১৮৮ কোটি টাকা স্থানান্তর করেছে।

ই-অরেঞ্জের মাধ্যমে পাচার করা অর্থের একটি বড় অংশ বিভিন্ন ব্যাংক অ্যাকাউন্টে স্থানান্তর করা হয়। ব্র্যাক ব্যাংকের গুলশান শাখায় ২৯৪ কোটি ৬৪ লাখ টাকা এবং সিটি ব্যাংকের গুলশান শাখায় ৬০৫ কোটি ৫৭ লাখ টাকা স্থানান্তর করা হয়, যা মোট ৯০০ কোটি ২১ লাখ টাকা। এর মধ্যে ৩৪ কোটি ৫৬ লাখ টাকা আদালতের নির্দেশে জব্দ করা হয়েছে এবং ২২ কোটি ১৪ লাখ টাকা পেমেন্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠান এসএসএল কমিশন হিসেবে নিয়েছে।

এসএসএল (সফটওয়্যার শপ লিমিটেড) পেমেন্ট গেটওয়ে হিসেবে ই-অরেঞ্জের মানি লন্ডারিংয়ে সহায়তা করেছে বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে। এসএসএলের চেয়ারম্যান সাবরিনা ইসলাম, ব্যবস্থাপনা পরিচালক সাইফুল ইসলাম এবং চিফ এক্সটারনাল অ্যাফেয়ার্স অফিসার নূরুল হুদার বিরুদ্ধে বেশি কমিশন পাওয়ার আশায় এই লেনদেন পরিচালনার অভিযোগ আনা হয়েছে।

শৈলকুপায় নিখোঁজের ৩ দিন পর মাদরাসা ছাত্রীর লাশ উদ্ধার

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কাজী জিল্লুর রহমান মোস্তফা জানান, ই-অরেঞ্জের মাধ্যমে ৩৫৮ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের দায়ে ১২ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এখন বিষয়টি আদালতের বিচারাধীন।

তদন্তে আরও জানা গেছে যে, ই-অরেঞ্জের সাবেক প্রধান পরিচালন কর্মকর্তা (সিওও) নাজমুল আলম রাসেল এবং তাঁর ভাই মঞ্জুর আলম পারভেজ আরপি করপোরেশন নামের একটি প্রতিষ্ঠান চালাতেন। তবে আরপি করপোরেশনের ট্রেড লাইসেন্স ছিল নাজমুল আলম রাসেলের স্ত্রী ফারিয়া সুবাহারের নামে। এই প্রতিষ্ঠানটির মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে নেওয়া অর্থের অনেকটাই আত্মসাৎ করা হয়।

শেখ সোহেল রানা ভারতে পালানোর চেষ্টা করার সময় গ্রেপ্তার হন এবং কারাদণ্ড ভোগ করেন। বর্তমানে তিনি জামিনে রয়েছেন। তাঁর বোন সোনিয়া মেহজাবিন এবং তাঁর স্বামী মাসুকুর রহমান এখন গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে রয়েছেন।

ই-অরেঞ্জের এই প্রতারণার ঘটনা ই-কমার্স খাতের একটি বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। বাংলাদেশে ই-কমার্স খাতের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে প্রতারণামূলক কার্যক্রমও বেড়ে গেছে। ই-অরেঞ্জের ঘটনা থেকে দেখা যাচ্ছে, কীভাবে ই-কমার্সের আড়ালে বিশাল অর্থ পাচার এবং মানি লন্ডারিং করা যায়।

ই-কমার্স খাতে এমন প্রতারণার ঘটনা নতুন নয়। আগে থেকেই এ ধরনের অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে পণ্যের পরিবর্তে প্রতারণা বা অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ পাওয়া গেছে। কিন্তু ই-অরেঞ্জের ঘটনা এ খাতে গ্রাহকদের আস্থা অনেকটাই হ্রাস করেছে।

ই-অরেঞ্জের এই প্রতারণা এবং মানি লন্ডারিং ঘটনার পর ই-কমার্স খাতের জন্য কড়া নিয়ন্ত্রণমূলক পদক্ষেপ নেওয়ার প্রস্তাব উঠেছে। ই-কমার্স খাতের জন্য বিশেষ আইন এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থার প্রয়োজনীয়তা আরও জোরালোভাবে প্রতীয়মান হয়েছে।

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগ দিতে নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করলেন প্রধান উপদেষ্টা

ই-কমার্স খাতে এমন প্রতারণার ঘটনা প্রতিরোধে নীতিমালা এবং প্রযুক্তিগত পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা চালু করার প্রয়োজন। পেমেন্ট গেটওয়ে প্রতিষ্ঠানগুলোরও এ ধরনের প্রতারণামূলক কার্যক্রম প্রতিরোধে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।

ই-অরেঞ্জ ডট শপের মাধ্যমে ৩৫৮ কোটি টাকা মানি লন্ডারিংয়ের এই ঘটনা ই-কমার্স খাতে এক ভয়াবহ ধাক্কা হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এই প্রতারণা এবং মানি লন্ডারিংয়ে জড়িতদের বিরুদ্ধে বিচার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে এবং গ্রাহকরা এখন এই প্রতারণার শিকারদের বিচার ও ক্ষতিপূরণ পেতে আশাবাদী।

এই ঘটনার মাধ্যমে ই-কমার্স খাতের বিকাশের সঙ্গে সঙ্গে এর নিরাপত্তা এবং নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা আরও উন্নত করার প্রয়োজনীয়তা স্পষ্ট হয়েছে।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version