ভারতের মহারাষ্ট্রের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও সাবেক মন্ত্রী বাবা সিদ্দিকি হত্যার ঘটনায় চাঞ্চল্যকর তথ্য প্রকাশ পেয়েছে। মুম্বাইয়ের বান্দ্রা এলাকায় দশেরা উৎসবের সময় তাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে কুখ্যাত জেলবন্দি লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের হাত রয়েছে বলে ধারণা করছে পুলিশ। লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের একজন সদস্য সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্টের মাধ্যমে স্বীকার করে যে, সলমন খানের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তারা বাবা সিদ্দিকিকে টার্গেট করেছিল। যদিও এই গ্যাং আনুষ্ঠানিকভাবে হত্যার দায় স্বীকার করেনি, তবু পুলিশের তদন্তে ক্রমশ স্পষ্ট হচ্ছে যে, এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড ছিল।

ভর্কুটা এখন রাশিয়ার সবচেয়ে শীতলতম এবং সবচেয়ে পরিত্যক্ত শহরগুলির একটি হিসেবে পরিচিত।

মুম্বাইয়ের বান্দ্রায় বাবা সিদ্দিকির ছেলে জিশান সিদ্দিকির অফিসে দশেরা উৎসব চলাকালীন, তিনজন দুষ্কৃতী অটোতে করে এসে আধুনিক বন্দুক দিয়ে এলোপাতাড়ি গুলি চালায়। তাদের ছোঁড়া গুলিতে বাবা সিদ্দিকির বুক লক্ষ্য করে কয়েকটি গুলি লাগে। সঙ্গে সঙ্গে তাকে লীলাবতী হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়, কিন্তু সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

এ ঘটনায় উপস্থিত নিরাপত্তারক্ষীরা দ্রুত দুইজন হামলাকারীকে ধরতে সক্ষম হন, তবে তৃতীয় ব্যক্তি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। হামলাকারীদের কাছ থেকে ২৮টি জীবন্ত কার্তুজ উদ্ধার করা হয়েছে এবং তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পুলিশ তাদের ১৪ দিনের জেল হেফাজতে নেয়ার আবেদন করেছে এবং পালিয়ে যাওয়া তৃতীয় অভিযুক্তের সন্ধানে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে।

ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলা নেতানিয়াহুর পরবর্তী পদক্ষেপ

বাবা সিদ্দিকি একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী, রাজনীতিবিদ এবং বলিউড তারকাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের জন্য পরিচিত ছিলেন। বিশেষ করে বলিউড অভিনেতা সলমন খানের সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা ব্যাপক পরিচিতি লাভ করেছিল। প্রাথমিক তদন্তে দেখা গেছে, এই সম্পর্কের কারণেই তাকে টার্গেট করা হতে পারে। লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং বলিউডের সঙ্গে সম্পৃক্ত একাধিক ব্যক্তির বিরুদ্ধে নানা সময়ে আক্রমণের হুমকি দিয়ে এসেছে। বিষ্ণোই গ্যাংয়ের অন্যতম উদ্দেশ্য ছিল বলিউডের প্রভাবশালী ব্যক্তিদের উপর আক্রমণ চালিয়ে তাদের ভয় দেখানো এবং তাদের কাছ থেকে অর্থ আদায় করা।

লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাং ভারতের একটি কুখ্যাত অপরাধী সংগঠন। এই গ্যাং মাদক চোরাচালান, অস্ত্র পাচার, হত্যাকাণ্ড, এবং অন্যান্য অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। লরেন্স বিষ্ণোই বর্তমানে জেলবন্দি থাকলেও, তার গ্যাং দেশের বিভিন্ন স্থানে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। তারা একাধিক বলিউড তারকাকে হত্যার হুমকি দিয়েছে, যার মধ্যে সলমন খানও অন্যতম। বিষ্ণোই গ্যাং এর আগে পাঞ্জাবের প্রখ্যাত গায়ক সিধু মুসেওয়ালার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার দায়ও স্বীকার করেছিল।

বাবা সিদ্দিকির হত্যার ঘটনায় বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সরাসরি জড়িত থাকার বিষয়টি এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত না হলেও, পুলিশ এই দিকটি বিশেষভাবে খতিয়ে দেখছে। গ্যাংটির বিরুদ্ধে আগেও একই ধরনের আক্রমণ চালানোর অভিযোগ রয়েছে, তাই এটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

বাবা সিদ্দিকি মহারাষ্ট্রের একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি মহারাষ্ট্রের বান্দ্রা পশ্চিম আসনে তিনবারের বিধায়ক ছিলেন এবং এনসিপির (ন্যাশনালিস্ট কংগ্রেস পার্টি) সদস্য ছিলেন। তিনি কংগ্রেসের সঙ্গে দীর্ঘ সময় ধরে যুক্ত ছিলেন এবং মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী বিলাসরাও দেশমুখের অধীনে খাদ্য ও বেসামরিক সরবরাহ মন্ত্রী এবং শ্রম প্রতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। তবে এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে তিনি কংগ্রেস ছেড়ে এনসিপিতে যোগ দেন। তার রাজনৈতিক জীবনের নানা উত্থান-পতনের পরেও তিনি মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে অত্যন্ত সম্মানিত ব্যক্তি ছিলেন।

লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের ওপর গুলি চালানো বন্ধ করতে ইসরাইলকে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

বাবা সিদ্দিকি শুধুমাত্র রাজনীতিতেই সক্রিয় ছিলেন না, তিনি একজন সফল ব্যবসায়ীও ছিলেন এবং বলিউডের তারকাদের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন। বিশেষ করে, সলমন খানের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব অত্যন্ত আলোচিত ছিল। সিদ্দিকির ইফতার পার্টিগুলিতে সলমন খানসহ বলিউডের অনেক প্রখ্যাত তারকা অংশগ্রহণ করতেন, যা তাকে বলিউড মহলে বিশেষভাবে পরিচিত করে তুলেছিল।

বাবা সিদ্দিকির হত্যাকাণ্ডে মহারাষ্ট্রের রাজনৈতিক অঙ্গনে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। মহারাষ্ট্রের উপ-মুখ্যমন্ত্রী অজিত পাওয়ার এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়ে বলেছেন, ‘‘এটি একটি কাপুরুষোচিত আক্রমণ এবং আমরা এর সঠিক তদন্ত করব।’’ তিনি আরও বলেন যে, ‘‘এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারীকে খুঁজে বের করা হবে এবং তাকে শাস্তির আওতায় আনা হবে।’’

অন্যদিকে, বিরোধী দলের নেতারা এই ঘটনার পর মহারাষ্ট্রের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, এই ধরনের হত্যাকাণ্ড প্রমাণ করে যে, রাজ্যে অপরাধমূলক কার্যকলাপ ক্রমশ বেড়ে চলেছে এবং সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা হুমকির মুখে পড়ছে।

লেবাননে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষীদের ওপর গুলি চালানো বন্ধ করতে ইসরাইলকে আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র

মুম্বাই পুলিশ ঘটনার পর থেকেই তদন্তে জোর দিয়েছে। ধৃত দুই অভিযুক্তকে জিজ্ঞাসাবাদ করে লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশ গ্যাংটির আরও সদস্যদের খুঁজে বের করার জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান পরিচালনা করছে। তৃতীয় সন্দেহভাজনকে ধরার জন্য মুম্বাই ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। এ ঘটনায় পুলিশের অপরাধ দমন শাখাও (Crime Branch) তদন্তে সক্রিয় রয়েছে।

বাবা সিদ্দিকির পরিবার এই হত্যাকাণ্ডে গভীরভাবে শোকাহত। তার ছেলে জিশান সিদ্দিকি, যিনি নিজেও একজন রাজনীতিবিদ, বাবার আকস্মিক মৃত্যুতে হতবাক। পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, ‘‘আমরা কখনও ভাবিনি যে, এমন এক কাপুরুষোচিত হামলায় আমাদের প্রিয়জনকে হারাতে হবে।’’

সিদ্দিকির পরিবারের পক্ষ থেকে পুলিশকে দ্রুত তদন্ত শেষ করে দোষীদের শাস্তির আওতায় আনার আহ্বান জানানো হয়েছে।

গাজার স্কুলে ইসরায়েলি হামলায় বাস্তুচ্যুত ২৮ জন নিহত -, প্যারামেডিক

বাবা সিদ্দিকির হত্যাকাণ্ড মহারাষ্ট্রের রাজনীতিতে একটি বড় ধাক্কা হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই হত্যাকাণ্ড কেবলমাত্র একটি ব্যক্তির মৃত্যু নয়, বরং এটি মহারাষ্ট্রের বর্তমান নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপরও প্রশ্ন তুলেছে। লরেন্স বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেলে, এটি বলিউড এবং রাজনীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জন্য একটি নতুন হুমকি হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।

তদন্তের অগ্রগতি ও ফলাফল নির্ধারণ করবে এই হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ এবং এর পেছনে কাদের হাত রয়েছে। তবে এটুকু স্পষ্ট যে, বাবার সিদ্দিকির হত্যাকাণ্ড কেবল ব্যক্তিগত শত্রুতার ফল নয়, বরং একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version