সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রধান উপদেষ্টা হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে নিউইয়র্কের উদ্দেশে রওনা দিয়েছেন। তার সফরসঙ্গী হিসেবে নিরাপত্তা, গণমাধ্যমসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মোট ৫৭ জন যুক্ত হয়েছেন। জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করতে এ সফর অনুষ্ঠিত হচ্ছে।

হত্যা মামলা দায়েরের ঘটনায় সাংবাদিক সমাজ ও সাংবাদিক সংগঠনগুলোতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি

প্রধান উপদেষ্টার এই সফরকে ঘিরে দেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মহলে উত্তেজনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ২৭ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনের উচ্চ পর্যায়ের সাধারণ বিতর্কে প্রধান উপদেষ্টা বক্তব্য রাখবেন। তার বক্তৃতায় বাংলাদেশে সাম্প্রতিক রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতি, আন্তর্জাতিক শান্তি, জলবায়ু পরিবর্তন, বৈশ্বিক সংঘাত, রোহিঙ্গা সংকটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উঠে আসবে বলে প্রত্যাশা করা হচ্ছে।

জাতিসংঘের অধিবেশনের ফাঁকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। দুই দেশের কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমে এ সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এই বৈঠকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি, মানবাধিকার, অর্থনৈতিক সহযোগিতা এবং নিরাপত্তা ইস্যুতে আলোচনা হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এ বৈঠকের মাধ্যমে দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও জোরদার হবে বলে আশাবাদী বিশ্লেষকরা।

ঝিনাইদহে শিক্ষার মান ও কলেজ ক্যাম্পাসের পরিবেশ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সংবাদ সম্মেলন

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন শনিবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে আয়োজিত মিডিয়া ব্রিফিংয়ে জানান, জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের অংশগ্রহণের বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তৃতায় গত দুই মাসে দেশে ঘটে যাওয়া গণ-অভ্যুত্থানের বিষয়টি তুলে ধরবেন এবং একটি গণমুখী, কল্যাণধর্মী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রতি তার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করবেন।

প্রেস ব্রিফিংয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা আরও উল্লেখ করেন, প্রধান উপদেষ্টার বক্তব্যে আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের অবদান, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলা, রোহিঙ্গা সংকট, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সমস্যাগুলো নিয়ে আলোচনা করবেন। এছাড়াও, সম্পদের অবৈধ পাচার রোধ এবং অভিবাসী অধিকার রক্ষার মতো বিষয়গুলিও তার বক্তৃতায় স্থান পাবে বলে আশা করা হচ্ছে।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যা মামলায় বরখাস্ত দুই পুলিশের চার দিনের রিমান্ড

জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে অংশগ্রহণ বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই অধিবেশনে অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তার অবস্থান তুলে ধরতে পারবে। বিশেষ করে, আন্তর্জাতিক শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের ভূমিকা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় দেশের পদক্ষেপগুলো বিশ্ব সম্প্রদায়ের নজরে আসবে।

প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে উন্নয়নশীল দেশগুলোর সমস্যাগুলোও তুলে ধরবেন। বিশেষ করে, সম্পদের অবৈধ পাচার রোধ, অভিবাসী অধিকার, এবং টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগিতার বিষয়ে জোর দেবেন বলে আশা করা হচ্ছে। এছাড়া, রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও কার্যকর ভূমিকার আহ্বান জানানো হবে।

ভাগ্যের নির্মম পরিহাস, সেই স্বপ্নগুলো কবর হয়ে গেল রবিউলের মৃত্যুর সঙ্গে।

প্রধান উপদেষ্টা এবারের সফরে পূর্ববর্তী সরকার প্রধানদের মতো চার্টার্ড ফ্লাইটের পরিবর্তে বাণিজ্যিক ফ্লাইট ব্যবহার করছেন। এতে করে তার এই সফরকে অনেকেই একটি মিতব্যয়ী এবং উদাহরণমূলক উদ্যোগ হিসেবে দেখছেন। তিনি নিউইয়র্কে মাত্র তিন দিন অবস্থান করবেন এবং এই সময়ে বিভিন্ন বৈঠক ও আলোচনা সভায় অংশগ্রহণ করবেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে সম্ভাব্য বৈঠকে মানবাধিকার, সুশাসন এবং গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আলোচনা হতে পারে। এছাড়াও, দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য সম্প্রসারণ, প্রতিরক্ষা সহযোগিতা এবং আঞ্চলিক নিরাপত্তা ইস্যুতেও আলোচনা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক উন্নয়নের জন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সুযোগ। প্রধান উপদেষ্টা যদি যুক্তরাষ্ট্রের উচ্চ পর্যায়ের নেতৃবৃন্দের সঙ্গে সফল আলোচনা করতে পারেন, তবে এর মাধ্যমে বাংলাদেশের জন্য নতুন অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক সুযোগ সৃষ্টি হতে পারে।

বাংলাদেশে সাম্প্রতিক সময়ে ঘটে যাওয়া গণ-অভ্যুত্থান এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে আলোচনা হচ্ছে। প্রধান উপদেষ্টা তার বক্তব্যে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাওয়ার অঙ্গীকার পুনর্ব্যক্ত করতে পারেন। তিনি দেশের জনগণের স্বার্থে একটি গণমুখী ও কল্যাণধর্মী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য তার প্রতিশ্রুতি পুনরায় ব্যক্ত করতে পারেন।

মাকে বলেছিলেন, “আমরা দেশ বদলাতে যাচ্ছি মা, আমি আসব, তুমি চিন্তা করো না।” কিন্তু সেই আসা আর হলো না।

জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু। দেশটি এর প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম। জাতিসংঘের মঞ্চে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বাংলাদেশের পদক্ষেপ এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি জোরালোভাবে তুলে ধরা হবে। এছাড়াও, রোহিঙ্গা সংকটের টেকসই সমাধানের জন্য মিয়ানমারের প্রতি আন্তর্জাতিক চাপ অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হতে পারে।

প্রধান উপদেষ্টার এই সফর বাংলাদেশের জন্য কূটনৈতিক দিক থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তার বক্তব্যে দেশের সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি এবং বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়ে স্পষ্ট অবস্থান তুলে ধরা হবে। এই সফর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বাংলাদেশের অবস্থানকে আরও সুসংহত করবে বলে আশা করা হচ্ছে।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version