এভারেস্টের পর্বতারোহণের ইতিহাসে দীর্ঘদিনের এক রহস্য পুনরায় সামনে এসেছে। ১৯২৪ সালে নিখোঁজ হওয়া ব্রিটিশ পর্বতারোহী অ্যান্ড্রু কমিন “স্যান্ডি” আরভিনের পা সংরক্ষিত অবস্থায় পাওয়ার পর তার পরিবার এটি নিয়ে “স্বস্তির” কথা প্রকাশ করেছে। ১০০ বছর আগে এভারেস্টের শীর্ষে ওঠার চেষ্টায় নিখোঁজ হওয়া আরভিন এবং তার সঙ্গী জর্জ ম্যালরির মৃত্যু পর্বতারোহী বিশ্বে এক গভীর রহস্য হয়ে ছিল। সম্প্রতি এক ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক ডকুমেন্টারি দলের পর্বতারোহীরা আরভিনের একটি বুট আবিষ্কার করেছেন, যা সম্ভবত এই শতাব্দীপ্রাচীন রহস্যের সমাধান করতে পারে।

গাজার স্কুলে ইসরায়েলি হামলায় বাস্তুচ্যুত ২৮ জন নিহত -, প্যারামেডিক

ডকুমেন্টারি চিত্রগ্রহণের সময়, হিমালয়ের কেন্দ্রীয় রোংবুক হিমবাহের বরফের নিচে লুকিয়ে থাকা আরভিনের বুটটি আবিষ্কার হয়। বরফ গলে যাওয়ার ফলে এই বুটটি প্রকাশিত হয়, এবং এটি আরভিনের বলে ধারণা করা হয়। আরভিনের মোজা, যার ওপর তার নাম “A.C. Irvine” সূচিকর্ম করা ছিল, এই দাবিকে আরও শক্তিশালী করে। আরভিন ১৯২৪ সালে এভারেস্টের শীর্ষে ওঠার চেষ্টা করছিলেন যখন তিনি নিখোঁজ হন। এই আবিষ্কারটি শুধু তার মৃত্যুর স্থান নির্ধারণ করতেই সাহায্য করছে না, বরং এডমন্ড হিলারি এবং তেনজিং নোরগের ১৯৫৩ সালের আগে তিনি এবং ম্যালরি কি সত্যিই এভারেস্টের শীর্ষে পৌঁছাতে পেরেছিলেন কিনা, সেই বিতর্কও জাগিয়ে তুলেছে।

আরভিনের পরিবার, বিশেষ করে তার ভাইঝি জুলি সামারস, এই আবিষ্কারের পর বিশেষভাবে আবেগময় প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। জুলি বলেছেন, “আমি কাঁপছিলাম… আমরা সবাই ধরে নিয়েছিলাম যে তার কোনো হদিস আর পাওয়া যাবে না।” তিনি আরও যোগ করেন যে তাদের পরিবারের সবাই আরভিনের সঙ্গে যুক্ত সেই ক্যামেরাটি খুঁজে পাওয়ার আশা করছিল, যা সম্ভবত তাদের শীর্ষে পৌঁছানোর প্রমাণ ধারণ করে আছে।

অদ্ভুত’ মামলায় আইফোন নির্মাতা কর্মীদের আটক করেছে চীন

আরভিনের দেহ খুঁজে পাওয়ার চেষ্টা অনেকদিন ধরেই চলছে। তার দেহের অভ্যন্তরে একটি ক্যামেরা ছিল, যা এক সম্ভাব্য প্রমাণ হতে পারে যে তারা কি শীর্ষে পৌঁছাতে পেরেছিল কিনা। ১৯৭০-এর দশকে একজন চীনা পর্বতারোহী আরভিনের দেহ দেখার দাবি করেছিলেন, কিন্তু তারপর থেকে তার কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। এবার আরভিনের পরিবারের সঙ্গে ডিএনএ পরীক্ষা করার জন্য নমুনা নেওয়া হয়েছে।

১৯২৪ সালের জুন মাসে আরভিন ও ম্যালরি এভারেস্টের শীর্ষে পৌঁছানোর চেষ্টায় নিখোঁজ হন। তাদের শেষবার জীবিত অবস্থায় দেখা যায় ৮ জুন, যখন তারা শীর্ষে যাত্রা করছিলেন। কিন্তু এরপর থেকে তাদের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। ১৯৯৯ সালে জর্জ ম্যালরির দেহ এভারেস্টের উত্তরের ঢালে খুঁজে পাওয়া যায়, তবে আরভিনের দেহের কোনো হদিস পাওয়া যায়নি। তাদের রহস্যময় অন্তর্ধান পর্বতারোহণ বিশ্বকে এক শতাব্দী ধরে মুগ্ধ করে রেখেছে।

আরভিনের বুট পাওয়ার পর, অনুসন্ধানকারী দল হিমবাহের চারপাশে আরও খোঁজাখুঁজি করে। তারা ১৯৩৩ সালে আরভিনের অভিযান চলাকালে ব্যবহৃত একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার খুঁজে পায়। এই আবিষ্কারের পর আরও অনুসন্ধান চালানো হয়েছিল। তবে চূড়ান্তভাবে আরভিনের দেহ এখনো পাওয়া যায়নি।

ইলন মাস্ক টেসলা রোবোট্যাক্সি ইভেন্টে সাইবারক্যাব উন্মোচন করেছেন

চীনা কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে এই ধরনের আবিষ্কারের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া পাওয়ার পর, এটি নিশ্চিত করা হয়েছে যে আরভিনের বুটটি সংরক্ষণের জন্য পাহাড় থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। তবে পর্বত থেকে পা সরিয়ে নেওয়ার পেছনে কিছু বিতর্কও রয়েছে, যেখানে বলা হয়েছে কাকরা এটিকে বিরক্ত করছে বলে আশঙ্কা ছিল।

আরভিন এবং ম্যালরি কি সত্যিই এভারেস্টের শীর্ষে পৌঁছাতে পেরেছিলেন, এটি নিয়ে অনেক গবেষণা হয়েছে। ম্যালরির দেহ পাওয়ার সময়ও এই প্রশ্ন উঠেছিল, কিন্তু সুনির্দিষ্ট কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ হতে পারে আরভিনের ক্যামেরা, যা তাদের চূড়ায় ওঠার মুহূর্ত ধারণ করে থাকতে পারে। সেই ক্যামেরা যদি খুঁজে পাওয়া যায় এবং তার ফিল্মটি এখনও সুস্থ থাকে, তাহলে এভারেস্টের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় লেখা হতে পারে।

নেতানিয়াহু বলেছেন অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার জন্য ম্যাক্রোঁর আহ্বান ‘একটি অসম্মানজনক’

জুলি সামারস ও আরভিনের পরিবারের অন্যান্য সদস্যরা আশা করছেন যে ক্যামেরাটি কখনো খুঁজে পাওয়া যাবে। সামারস বলেছেন যে ক্যামেরাটি যদি পাওয়া যায়, তাহলে এটি ইতিহাসের একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা হবে। আরভিন ও ম্যালরি যদি শীর্ষে পৌঁছাতে সক্ষম হয়ে থাকেন, তাহলে এটি এভারেস্ট পর্বতারোহণের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় মুহূর্তগুলোর একটি হয়ে দাঁড়াবে।

তবে পরিবারটি এক অদ্ভুত প্রশান্তি অনুভব করছে এই নতুন আবিষ্কারের পর। জুলি বলেছেন, “এভারেস্ট তার সমাধি।” তার মতে, আরভিন পাহাড়ে হারিয়ে গেছেন এবং সেখানেই শান্তি পেয়েছেন। যদিও তারা নিশ্চিত প্রমাণের অপেক্ষায় আছেন, তবে তারা মনে করেন যে আরভিনের সাহসিকতা এবং তার অভিযান ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

হোয়াইট হাউসের সাংবাদিকরা বিডেনকে চাপ দেওয়ার সুযোগে হারিকেন হেলিন নিয়ে শূন্য প্রশ্ন করলেন

এভারেস্টের রহস্যময় ইতিহাসে ১৯২৪ সালের নিখোঁজ অভিযানের কাহিনী এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। আরভিনের পা এবং বুট পাওয়া গিয়েছে, যা তার অন্তর্ধানের এক নতুন দিক খুলেছে। এখন ক্যামেরা বা অন্য কোনো প্রমাণ পাওয়া গেলে এটি ইতিহাসের সবচেয়ে বড় পর্বতারোহণ রহস্যগুলোর সমাধান হতে পারে।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version