ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর গাজায় ব্যবহারের জন্য ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধের আহ্বানকে “অসম্মানজনক” বলে অভিহিত করেছেন। নেতানিয়াহু বলেন, ইসরায়েল তার সমর্থন নিয়ে বা ছাড়াই এই যুদ্ধে বিজয়ী হবে এবং ম্যাক্রোঁর মতো নেতাদের অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার আহ্বান লজ্জাজনক। এই মন্তব্যের পর থেকে ইসরায়েল ও ফ্রান্সের মধ্যে উত্তেজনা বাড়ছে, বিশেষ করে যখন ম্যাক্রোঁ লেবাননে ইসরায়েলি সেনা প্রেরণেরও সমালোচনা করেছেন।

হোয়াইট হাউসের সাংবাদিকরা বিডেনকে চাপ দেওয়ার সুযোগে হারিকেন হেলিন নিয়ে শূন্য প্রশ্ন করলেন

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রোঁ সম্প্রতি ফ্রান্স ইন্টার রেডিওতে এক সাক্ষাৎকারে বলেন, “আমাদের অগ্রাধিকার হওয়া উচিত গাজায় যুদ্ধের জন্য অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করা এবং একটি রাজনৈতিক সমাধানের দিকে এগিয়ে যাওয়া।” তিনি আরও বলেন যে, “ইসরায়েলের প্রতি অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা প্রয়োগ করা উচিত” এবং গাজায় চলমান যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আরও মনোযোগী হওয়ার আহ্বান জানান।

শনিবার প্যারিসে অনুষ্ঠিত ১৯তম ফ্রাঙ্কোফোনি শীর্ষ সম্মেলনে ম্যাক্রোঁ যুদ্ধবিরতির আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করেন এবং লেবাননে ইসরায়েলের স্থল অভিযান শুরু করার সিদ্ধান্তের কঠোর সমালোচনা করেন। তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, “লেবানন একটি নতুন গাজা হতে পারে না।”

ম্যাক্রোঁর মতে, গাজা ও লেবাননের মধ্যে চলমান উত্তেজনা এবং যুদ্ধ আন্তর্জাতিক নিরাপত্তার জন্য বড় হুমকি তৈরি করছে এবং এই পরিস্থিতি দ্রুত সমাধানের প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন, “এটি ঘৃণার দিকে নিয়ে যাচ্ছে এবং আমরা সংঘাত এড়ানোর জন্য যা প্রয়োজন তা করছি না।”

‘আমাকে ধর্ষণ করো, আমার মেয়েদের নয়’ – সুদানের ভয়াবহ যুদ্ধ।

নেতানিয়াহু ম্যাক্রোঁর এই বক্তব্যের তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়ে বলেন, “তাদের জন্য লজ্জা।” তিনি আরও বলেন, ইরানের নেতৃত্বে বিশ্বের অনেক দেশই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে এবং ইসরায়েলকে অস্ত্র সরবরাহ বন্ধ করার আহ্বানকে তিনি একটি “অপমানজনক” পদক্ষেপ হিসেবে দেখেন। তার মতে, ইসরায়েল একটি সভ্য দেশ হিসেবে বর্বরতার বিরুদ্ধে লড়াই করছে এবং এই যুদ্ধে বিশ্বের সব সভ্য দেশগুলোর উচিত ইসরায়েলের পাশে দাঁড়ানো।

নেতানিয়াহু আরও বলেন, “ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার আহ্বান ইরান এবং তার মিত্রদের প্রতি সহানুভূতির ইঙ্গিত দেয়।” তিনি দৃঢ়ভাবে বলেন, ইসরায়েল তাদের অস্তিত্ব রক্ষার জন্য যুদ্ধে অব্যাহত থাকবে এবং যেকোনো মূল্যে বিজয় অর্জন করবে।

ম্যাক্রোঁর কার্যালয় থেকে পরে জানানো হয় যে, ফ্রান্স ইসরায়েলের “অবিচল বন্ধু” এবং ইসরায়েলের প্রতি তাদের নীতির কোনো পরিবর্তন হয়নি। তারা নেতানিয়াহুর প্রতিক্রিয়াকে “অত্যধিক এবং বাস্তবতা থেকে বিচ্ছিন্ন” বলে অভিহিত করে। ফরাসি প্রেসিডেন্টের কার্যালয় আরও জানায় যে, তাদের কূটনৈতিক অবস্থান ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক নষ্ট করতে নয়, বরং সহিংসতা বন্ধের লক্ষ্যে।

ম্যাক্রোঁ লেবাননে ইসরায়েলের স্থল অভিযান নিয়ে তার উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তার মতে, লেবাননের মাটিতে এই ধরনের অভিযান সংঘাত আরও তীব্র করবে এবং অঞ্চলের স্থিতিশীলতাকে হুমকির মুখে ফেলবে। তিনি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশগুলির সাথেও যোগাযোগ রাখছেন যাতে লেবাননে যুদ্ধবিরতির জন্য চাপ দেওয়া হয়।

যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও ইসরাইল হিজবুল্লাহকে পূর্ণ শক্তি দিয়ে আঘাত করছেযুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও ইসরাইল হিজবুল্লাহকে পূর্ণ শক্তি দিয়ে আঘাত করছে

ইসরায়েল, অন্যদিকে, দাবি করছে যে তারা লেবাননে হামাস ও হিজবুল্লাহর মতো সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে লড়াই করছে, যারা ইরানের সমর্থনে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছে।

এই সংঘাতের সূত্রপাত হয়েছিল ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর, যখন হামাস ইসরায়েলের উপর আক্রমণ চালায়। সেই হামলায় প্রায় ১,২০০ ইসরায়েলি নাগরিক নিহত হয় এবং ২৫১ জনকে জিম্মি করা হয়। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, এই সংঘর্ষে এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০,০০০ মানুষ নিহত হয়েছে, যার মধ্যে অনেক বেসামরিক নাগরিকও রয়েছেন।

ইসরায়েল মনে করছে যে, এই সংঘাতটি শুধুমাত্র তাদের নিরাপত্তার প্রশ্ন নয়, বরং এটি একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতের অংশ, যেখানে ইরান, হামাস, এবং অন্যান্য প্রক্সি বাহিনীগুলি ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে

অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের মধ্যে ঘনিষ্ঠ অংশীদারিত্বের পুনর্ব্যক্ত

ম্যাক্রোঁর বক্তব্যের পর, আন্তর্জাতিক মঞ্চে বিভিন্ন দেশের প্রতিক্রিয়াও দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক পশ্চিমা দেশ ইসরায়েলের আত্মরক্ষার অধিকারকে সমর্থন জানিয়েছে। তবে একইসঙ্গে তারা গাজায় মানবিক সহায়তার জন্য আহ্বান জানিয়েছে এবং বেসামরিক মানুষের সুরক্ষার উপর গুরুত্ব দিয়েছে।

ম্যাক্রোঁর মতো অনেক নেতা মনে করছেন যে, এই সংঘাত বন্ধ করা এখন সময়ের দাবি। যাইহোক, ইসরায়েলি পক্ষ থেকে যে ধরনের প্রতিক্রিয়া আসছে, তা সংকটের সমাধানকে আরও জটিল করে তুলছে।

ইসরায়েল ও ফ্রান্সের মধ্যে এই সাম্প্রতিক উত্তেজনা উভয় দেশের কূটনৈতিক সম্পর্কের উপর দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব ফেলতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ইসরায়েল বিশেষ করে ইউরোপীয় মিত্রদের সমর্থন ধরে রাখতে চাইছে, কিন্তু ফ্রান্সের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দেশের সাথে সম্পর্কের অবনতি ইসরায়েলের জন্য একটি চ্যালেঞ্জ হতে পারে।

কিরবি হামাস প্রধান সিনওয়ারকে ইসরায়েলের সাথে যুদ্ধবিরতি, জিম্মি মুক্তির চুক্তিতে ‘প্রধান বাধায়’ নিন্দা

ফ্রান্সও চায় যে, ইসরায়েল এবং ফিলিস্তিনের মধ্যে শান্তি আলোচনা পুনরায় শুরু হোক এবং এই সংঘাতের দ্রুত একটি সমাধান আসুক। তবে, এই মুহূর্তে উভয় পক্ষই তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সরে আসতে প্রস্তুত নয় বলে মনে হচ্ছে।

ইসরায়েল ও ফ্রান্সের মধ্যে সাম্প্রতিক এই উত্তেজনা বৈশ্বিক রাজনীতির এক নতুন দৃষ্টিকোণ খুলে দিয়েছে। ফ্রান্স ইসরায়েলের বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার আহ্বান জানিয়ে বলেছে যে, গাজায় যুদ্ধ বন্ধ হওয়া প্রয়োজন। অন্যদিকে, ইসরায়েল মনে করছে যে তাদের অস্তিত্বের জন্য এই যুদ্ধ অপরিহার্য এবং অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার মতো কোনো পদক্ষেপ তাদের নিরাপত্তা আরও বিপদের মুখে ফেলবে।

যুদ্ধের অবসান হবে কি না, সেটি সময়ই বলে দেবে। তবে স্পষ্টতই, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অব্যাহত থাকবে, এবং তারা এই সংকটের সমাধান খুঁজতে কাজ করবে।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version