চীনে তাইওয়ানের আইফোন নির্মাতা ফক্সকনের চার কর্মীকে আটক করার ঘটনা তাইপেইয়ের কাছে “অদ্ভুত” বলে মনে হয়েছে। এই ঘটনা তাইওয়ান এবং চীনের মধ্যকার সংবেদনশীল ভূ-রাজনৈতিক সম্পর্ক এবং শিল্পক্ষেত্রে তাদের সম্পর্কের উপর নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। তাইওয়ানের মেইনল্যান্ড অ্যাফেয়ার্স কাউন্সিল (MAC) থেকে জানা গেছে যে, হেনান প্রদেশের ঝেংঝুতে “বিশ্বাস লঙ্ঘনের” অভিযোগে এই কর্মীদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

ইলন মাস্ক টেসলা রোবোট্যাক্সি ইভেন্টে সাইবারক্যাব উন্মোচন করেছেন

ফক্সকন, যা যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তি জায়ান্ট অ্যাপলের জন্য সবচেয়ে বড় আইফোন উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে পরিচিত, এই মামলায় চীনের পুলিশ কর্তৃক তার কর্মীদের আটক হওয়ার ঘটনা নিয়ে মন্তব্য করেনি। তবে তাইওয়ানের কর্তৃপক্ষ এই আটকগুলিকে চীনের পুলিশের “ক্ষমতার অপব্যবহার” বলে আখ্যায়িত করেছে। তারা বলেছে যে এই ধরনের ঘটনা চীনে পরিচালিত তাইওয়ানি ব্যবসাগুলোর আস্থাকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করতে পারে।

চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেন, তারা এই বিষয়ে অবগত নন এবং তাৎক্ষণিক কোনো মন্তব্য করতে অপারগ। অন্যদিকে, ফক্সকনের পক্ষ থেকেও এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য আসেনি।

ফক্সকন বিশ্বের অন্যতম বৃহত্তম ইলেকট্রনিক্স উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এবং অ্যাপলের আইফোন উৎপাদনের প্রধান অংশীদার। চীনের ঝেংঝুতে অবস্থিত তাদের কারখানাটি “আইফোন সিটি” নামে পরিচিত এবং এটি বিশ্বব্যাপী আইফোনের প্রধান উৎপাদন কেন্দ্র।

নেতানিয়াহু বলেছেন অস্ত্র নিষেধাজ্ঞার জন্য ম্যাক্রোঁর আহ্বান ‘একটি অসম্মানজনক’

গত বছর অক্টোবরে চীনের কর ও ভূমি কর্তৃপক্ষ ফক্সকনের বিরুদ্ধে একটি তদন্ত শুরু করে। এই তদন্তের সময় ফক্সকনের প্রতিষ্ঠাতা টেরি গৌ তাইওয়ানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন। যদিও এই তদন্তের কোনো সরাসরি সংযোগ নিয়ে তৎকালীন সময়ে আলোচনা হয়নি, কিন্তু এখন ফক্সকনের কিছু কর্মীর গ্রেপ্তার হওয়ার পর বিষয়টি নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে এসেছে।

তাইওয়ান এবং চীনের মধ্যে বহুদিন ধরেই একটি জটিল সম্পর্ক বিদ্যমান। বেইজিং তাইওয়ানকে চীনের একটি বিচ্ছিন্ন প্রদেশ হিসেবে দেখে, যা ভবিষ্যতে পুনরায় সংযুক্ত করা হবে। তারা এই লক্ষ্য অর্জনের জন্য সামরিক শক্তি ব্যবহার করতে পিছুপা হবে না বলে ঘোষণা করেছে। তবে তাইওয়ান নিজেদেরকে একটি স্বতন্ত্র রাষ্ট্র হিসেবে দেখতে চায়, যদিও তারা আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাধীনতা ঘোষণা করেনি বা চীনের সাথে একীভূত হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়নি।

ফক্সকনসহ অনেক তাইওয়ানের কোম্পানি চীনে তাদের কারখানা তৈরি করেছে, যা দ্বীপটির অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও, ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।

হোয়াইট হাউসের সাংবাদিকরা বিডেনকে চাপ দেওয়ার সুযোগে হারিকেন হেলিন নিয়ে শূন্য প্রশ্ন করলেন

চীন সম্প্রতি একটি নতুন নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে, যা তাইওয়ানের স্বাধীনতার পক্ষে কাজ করা ব্যক্তিদের জন্য অপরাধমূলক শাস্তির বিধান রাখে। এর ফলে, জুন মাসে তাইওয়ান সরকার তাদের নাগরিকদের চীন, হংকং, এবং ম্যাকাওতে “অপ্রয়োজনীয় ভ্রমণ” এড়াতে সতর্ক করেছে।

চীনের ঝেংঝুতে গ্রেপ্তার হওয়া ফক্সকনের কর্মীদের ওপর কী ধরনের অভিযোগ আনা হয়েছে, তা বিস্তারিতভাবে জানা যায়নি। তবে MAC-এর মতে, তাদের বিরুদ্ধে “বিশ্বাস লঙ্ঘনের” অভিযোগ তোলা হয়েছে, যা একজন কর্মীর দায়িত্ব পালনে বিশ্বাসঘাতকতা বা তথ্য ফাঁসের সঙ্গে সম্পর্কিত হতে পারে।

ফক্সকন এই মুহূর্তে একটি সংকটময় পরিস্থিতির মুখোমুখি। তাদের কর্মীদের গ্রেপ্তার কেবল কোম্পানির উৎপাদন কার্যক্রমকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে না, এটি চীন এবং তাইওয়ানের মধ্যে রাজনৈতিক উত্তেজনাকেও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

‘আমাকে ধর্ষণ করো, আমার মেয়েদের নয়’ – সুদানের ভয়াবহ যুদ্ধ।

ফক্সকন এখনও আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া জানায়নি, তবে তাদের মূল কাজ হলো আইফোনের উৎপাদন, যা অ্যাপলের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সরবরাহ শৃঙ্খল। চীনের মধ্যে তাদের বিশাল উৎপাদন কারখানা থাকা সত্ত্বেও, ফক্সকন বেশ কিছু সময় ধরে ভৌগোলিক বৈচিত্র্য আনতে চেষ্টা করছে। তারা চীন ছাড়াও ভারত, ভিয়েতনাম, মেক্সিকোসহ অন্যান্য দেশে তাদের উৎপাদন কেন্দ্র সম্প্রসারণের পরিকল্পনা করছে।

ফক্সকনের এই সমস্যা চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের সম্পর্কের ওপর একটি নতুন চাপ হিসেবে দেখা দিতে পারে। তাইওয়ানের বেশিরভাগ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান চীনে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে গেলেও, দ্বীপটির রাজনৈতিক অবস্থান এবং স্বাধীনতার প্রশ্নে চীনের প্রতি অব্যাহত চাপ আরও জটিলতা তৈরি করছে।

এক্ষেত্রে, ফক্সকন যেমন একটি বহুজাতিক কোম্পানি হিসেবে অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখার চেষ্টা করবে, তেমনি ভূ-রাজনৈতিক পরিস্থিতি তাদের কৌশলগত সিদ্ধান্তগুলিকে প্রভাবিত করতে পারে।

ফক্সকনের কর্মীদের আটক নিয়ে চীনের সঙ্গে তাইওয়ানের সম্পর্ক আরও উত্তপ্ত হতে পারে। যদিও এখন পর্যন্ত এই ঘটনার সঙ্গে সরাসরি রাজনৈতিক সংযোগ পাওয়া যায়নি, তবে চীনের নতুন আইনি নির্দেশিকা এবং ভূ-রাজনৈতিক অস্থিরতা দুই দেশের মধ্যে সম্পর্কের নতুন দিক উন্মোচন করেছে।

যুদ্ধবিরতির আহ্বান সত্ত্বেও ইসরাইল হিজবুল্লাহকে পূর্ণ শক্তি দিয়ে আঘাত করছে

ফক্সকনের মতো বড় প্রতিষ্ঠানগুলির জন্য, এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসা পরিচালনা করা অত্যন্ত চ্যালেঞ্জিং হতে পারে। চীনে উৎপাদন কেন্দ্র থাকা সত্ত্বেও তারা অন্য দেশগুলোতে তাদের কার্যক্রম বাড়ানোর চেষ্টা করবে, যাতে ভবিষ্যতে এমন ঝুঁকি থেকে মুক্ত থাকতে পারে।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version