মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলি একটি সতর্কবার্তা দিয়েছে যে রাশিয়া এবং অন্যান্য দেশগুলি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার (এআই) ব্যবহার করে মার্কিন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করছে। এই প্রচেষ্টাগুলি বিশেষ করে ২০২৪ সালের নির্বাচনের দিকে লক্ষ্য করে পরিচালিত হচ্ছে। রাশিয়া, চীন এবং ইরান সহ বেশ কিছু দেশ এআই ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর মাধ্যমে নির্বাচনের ফলাফলে প্রভাব ফেলার চেষ্টা করছে। তবে, চীন এখনও সরাসরি মার্কিন নির্বাচনে প্রভাব বিস্তারের জন্য এআই ব্যবহার করছে বলে কোনও প্রমাণ পাওয়া যায়নি।

মার্কিন গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানিয়েছেন যে, রাশিয়া এআই ব্যবহার করে বিপুল পরিমাণ মিথ্যা তথ্য তৈরি করেছে, যার মাধ্যমে তারা রিপাবলিকান প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্পকে সমর্থন করতে এবং ডেমোক্র্যাট প্রার্থী কমলা হ্যারিসকে অসম্মান করতে চেয়েছে। রাশিয়ার এই প্রচেষ্টা তাদের ২০১৬ এবং ২০২০ সালের নির্বাচনের কৌশলের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। তারা সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মে বিভ্রান্তিকর কন্টেন্ট, ভিডিও এবং ছবি ছড়িয়ে দিয়ে জনগণের মনোযোগ আকর্ষণ এবং তাদের মতামত প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে।

গ্রীক দ্বীপে অভিবাসী জাহাজ ডুবিতে অন্তত চারজনের মৃত্যু

রাশিয়ার এআই ব্যবহার করে কন্টেন্ট তৈরি করার প্রমাণ হিসেবে গত জুলাই মাসে বিচার বিভাগ একটি রুশ-সমর্থিত প্রচারণা ব্যাহত করে, যা এআই দ্বারা চালিত সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে এবং অন্যান্য দেশে ক্রেমলিনপন্থী বার্তা ছড়িয়ে দিচ্ছিল। এই প্রচারণায় এমন একটি ভিডিও তৈরি করা হয়েছিল, যেখানে একজন মহিলা দাবি করেছিলেন যে তিনি কমলা হ্যারিসের দ্বারা চালিত একটি হিট-এন্ড-রান দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। যদিও এই ভিডিওটি মঞ্চস্থ করা হয়েছিল এবং এআই দ্বারা তৈরি করা হয়নি, এটি রাশিয়ার কৌশলের একটি উদাহরণ।

চীন এআই ব্যবহার করে তাদের বৈশ্বিক দৃষ্টিভঙ্গি প্রচার করছে এবং মার্কিন রাজনৈতিক ইস্যুতে বিভেদ সৃষ্টির চেষ্টা করছে। তবে, মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলির মতে, চীন এখনো সরাসরি মার্কিন নির্বাচনে প্রভাব ফেলার জন্য কোনও নির্দিষ্ট এআই অপারেশন চালায়নি। চীন মূলত তাদের বৈশ্বিক অবস্থান এবং প্রভাবকে জোরদার করার জন্য এআই ব্যবহার করছে। এই প্রচেষ্টা আন্তর্জাতিক স্তরে চীনের ভাবমূর্তি এবং নীতি সম্পর্কিত ভুল ধারণা ছড়ানোর জন্য পরিচালিত হয়।

ট্রাম্প শোনেন কিন্তু মার্কিন অর্থনীতিতে চীনের প্রভাব সম্পর্কে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নীরব থাকেন

ইরানও এআই ব্যবহার করে বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের জন্য কনটেন্ট তৈরি করছে। তারা ইংরেজি এবং স্প্যানিশ ভাষায় পোস্ট তৈরি করছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক বিতর্ক এবং মতামতকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করছে। ইরানি প্রভাবকরা ইস্রায়েল-গাজা সংঘাত এবং অন্যান্য রাজনৈতিক ইস্যুতে আমেরিকান ভোটারদের লক্ষ্যবস্তু করছে। এই প্রচেষ্টা মূলত বিভ্রান্তিকর সংবাদ, ব্লগ পোস্ট এবং সোশ্যাল মিডিয়া পোস্ট তৈরি করে পরিচালিত হচ্ছে। ইরানের কৌশলগুলিও রাশিয়ার মতো মিথ্যা তথ্য প্রচারের ওপর ভিত্তি করে।

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অন্যান্য রূপের মতো, জেনারেটিভ এআই (Generative AI) অতীত ডেটা থেকে শিখে এবং সেই প্রশিক্ষণ ব্যবহার করে নতুন কনটেন্ট তৈরি করে, যা মানুষের তৈরি কনটেন্টের মতোই বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। এটি পাঠ্য, ছবি এবং ভিডিও তৈরি করতে সক্ষম, যা খুব সহজেই বিশ্বাসযোগ্য মনে হতে পারে। এর ফলে জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি সৃষ্টি এবং মিথ্যা তথ্যের বিস্তার সহজ হয়ে যায়।

যদিও এআই-নির্মিত সামগ্রী নির্বাচন প্রভাবিত করার জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে, এখনও এআই ব্যবহারের মাত্রা এবং প্রভাব পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। এআই প্রযুক্তির অগ্রগতির সাথে সাথে, মিথ্যা তথ্য প্রচারের ঝুঁকি আরও বাড়ছে। মার্কিন নির্বাচনকে প্রভাবিত করার জন্য এআই দ্বারা তৈরি কনটেন্টের ব্যবহার একটি নতুন ঝুঁকি সৃষ্টি করেছে, যা সঠিক এবং নির্ভুল তথ্য যাচাইয়ের প্রয়োজনীয়তাকে আরও গুরুত্বপূর্ণ করে তুলেছে।

শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?

এআই প্রযুক্তির দ্রুত অগ্রগতি বিশ্বব্যাপী রাজনৈতিক এবং সামাজিক স্থিতিশীলতায় একটি নতুন চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে। যেহেতু এআই ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য তৈরি করা এবং তা ছড়িয়ে দেওয়া সহজ হয়ে উঠছে, তাই সরকার এবং প্রযুক্তি সংস্থাগুলির জন্য এটি একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে ভুয়া খবর এবং বিভ্রান্তিকর তথ্য ছড়িয়ে দেওয়া রোধ করতে কড়া নীতি ও প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে।

এআই প্রযুক্তি বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে রাজনৈতিক প্রোপাগান্ডা এবং মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর জন্য ব্যবহৃত হচ্ছে। বিশেষ করে, রাশিয়া, চীন এবং ইরান এই প্রযুক্তি ব্যবহার করে তাদের নিজস্ব রাজনৈতিক স্বার্থ রক্ষা করতে চাইছে। এই পরিস্থিতিতে, গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এবং সরকারগুলির মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে।

ইসরায়েল রামাল্লায় আল জাজিরা ব্যুরো বন্ধ করে: আপনার যা জানা দরকার

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং অন্যান্য দেশগুলোকে এআই দ্বারা সৃষ্ট মিথ্যা তথ্য এবং প্রোপাগান্ডা থেকে নিজেদের রক্ষা করতে কার্যকরী পদক্ষেপ নিতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে:

  1. এআই বিষয়বস্তু সনাক্তকরণের প্রযুক্তি উন্নয়ন: গবেষক এবং প্রযুক্তি সংস্থাগুলি এআই দ্বারা তৈরি মিথ্যা তথ্য সনাক্তকরণের জন্য উন্নত প্রযুক্তি এবং অ্যালগরিদম তৈরি করতে পারে।
  2. সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির ভূমিকা: সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির উচিত তাদের নীতিমালা কঠোর করা এবং এআই দ্বারা তৈরি মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
  3. গণসচেতনতা বৃদ্ধি: জনগণকে এআই দ্বারা সৃষ্ট মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে সচেতন করা এবং তাদের তথ্য যাচাই করার জন্য উৎসাহিত করা।
  4. আন্তর্জাতিক সহযোগিতা: বিভিন্ন দেশের সরকারগুলির মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি এবং একযোগে কাজ করে এআই দ্বারা সৃষ্ট মিথ্যা তথ্যের বিরুদ্ধে লড়াই করা।
  5. আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ: আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলি এআই ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো এবং জনগণের মাঝে বিভ্রান্তি সৃষ্টির জন্য দায়ী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

এআই প্রযুক্তি যেমন মানব জীবনে উন্নয়ন এবং সুবিধা নিয়ে আসছে, তেমনি এর অপব্যবহার সমাজে বিশৃঙ্খলা এবং নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে।

ইসরায়েলি সেনাদের দ্বারা আল জাজিরা অফিস বন্ধের আদেশ: পশ্চিম তীরে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর নতুন আঘাত

রাজনীতি, নির্বাচন এবং আন্তর্জাতিক সম্পর্কের মতো সংবেদনশীল বিষয়ে এআই ব্যবহার করে মিথ্যা তথ্য ছড়ানো একটি গুরুতর সমস্যা। এটি শুধু একটি দেশের নিরাপত্তার জন্যই নয়, বৈশ্বিক স্থিতিশীলতার জন্যও একটি হুমকি।

গোয়েন্দা সংস্থাগুলি এবং সরকারগুলির মধ্যে সমন্বয় বৃদ্ধি এবং কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ অপরিহার্য হয়ে পড়েছে। এআই প্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টা প্রয়োজন। গণমাধ্যম, প্রযুক্তি সংস্থা, সরকার এবং জনগণের সমন্বিত উদ্যোগেই কেবল এই চ্যালেঞ্জের মোকাবিলা করা সম্ভব।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version