গ্রীসের সামোস দ্বীপের কাছে পূর্ব এজিয়ান সাগরে একটি অভিবাসীবাহী ছোট নৌকা ডুবিতে অন্তত চারজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে। সোমবার সকালে সামোস দ্বীপের উপকূলের কাছে এ ঘটনা ঘটে। গ্রিক কর্তৃপক্ষ জানায়, নৌকাটি তুরস্কের উপকূল থেকে যাত্রা শুরু করেছিল এবং এতে বিভিন্ন দেশ থেকে আগত অভিবাসী ছিল, যারা ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশের চেষ্টা করছিল। এই ঘটনার পর থেকে জীবিতদের উদ্ধার এবং নিখোঁজ ব্যক্তিদের সন্ধানে একটি বিশাল অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হয়।

উপকূলরক্ষী বাহিনী জানায়, তারা তিনজন নারী এবং একটি শিশুর মৃতদেহ সাগর থেকে উদ্ধার করেছে। এছাড়াও, তারা সমুদ্র থেকে পাঁচজন অভিবাসীকে জীবিত উদ্ধার করে। এদিকে, আরও ২৬ জন অভিবাসী, যারা নিরাপদে তীরে পৌঁছেছিল, তাদেরও উদ্ধার করা হয়। বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা জানান, নৌকাটিতে আরও বেশ কয়েকজন যাত্রী ছিল, যারা এখনও নিখোঁজ রয়েছে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

ট্রাম্প শোনেন কিন্তু মার্কিন অর্থনীতিতে চীনের প্রভাব সম্পর্কে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই নীরব থাকেন

উদ্ধার অভিযানটি বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল, কারণ ওই এলাকায় প্রবল বাতাস ও প্রতিকূল আবহাওয়া পরিস্থিতি উদ্ধারকার্যকে বাধাগ্রস্ত করছিল। উপকূলরক্ষী বাহিনী, বিমান বাহিনী এবং স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবকদের সমন্বয়ে একটি বৃহৎ অনুসন্ধান ও উদ্ধার অভিযান পরিচালিত হয়। তবে, এখনো নিখোঁজদের সঠিক সংখ্যা জানা যায়নি এবং মৃতদের পরিচয় কিংবা জাতীয়তা সম্পর্কেও কোনো নির্দিষ্ট তথ্য প্রকাশ করা হয়নি।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, তারা প্রথমে সমুদ্র থেকে সাহায্যের জন্য চিৎকার ও আর্তনাদ শুনতে পান। এর পরপরই তারা স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে সতর্ক করেন এবং উদ্ধার অভিযানের জন্য সাহায্য চান। অনেক বাসিন্দা নিজেরাই নৌকা এবং অন্যান্য সামগ্রী নিয়ে উদ্ধারকাজে অংশ নেন। তাদের দ্রুত সাড়া দেওয়ার ফলে অনেক জীবিত মানুষকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়।

শ্রীলঙ্কার চীনপন্থি প্রেসিডেন্ট দিশানায়েকে কি ভারতের জন্য চ্যালেঞ্জ?

গ্রীসের উপকূলে অভিবাসী জাহাজডুবি একটি নিয়মিত ঘটনা। আফ্রিকা, এশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের দারিদ্র্য, রাজনৈতিক অস্থিরতা বা যুদ্ধ থেকে পালিয়ে আসা লোকেরা ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রবেশের জন্য গ্রীসকে একটি প্রধান প্রবেশপথ হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। তুরস্ক থেকে গ্রীসের দ্বীপগুলির মধ্যে দূরত্ব কম হওয়ায়, অভিবাসীরা প্রায়ই ছোট ছোট নৌকা কিংবা ডিঙ্গিতে এই বিপজ্জনক যাত্রা শুরু করেন।

তুরস্ক ও গ্রীসের মধ্যকার স্থল ও সমুদ্র সীমান্তের কড়া নিরাপত্তা সত্ত্বেও, প্রতি বছর হাজার হাজার অভিবাসী এই ঝুঁকিপূর্ণ পথ বেছে নেয়। গ্রীসের উপকূলে অভিবাসনপ্রবণতা এবং জাহাজডুবির ঘটনা প্রায়শই ঘটে। বিশেষ করে, সামোস, লেসবস, এবং কোসের মতো দ্বীপগুলো অভিবাসীদের জন্য প্রধান গন্তব্য।

ইসরায়েল রামাল্লায় আল জাজিরা ব্যুরো বন্ধ করে: আপনার যা জানা দরকার

অভিবাসন সংকটকে কেন্দ্র করে চোরাচালানকারীরা ক্রমশ শক্তিশালী স্পিডবোট এবং উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার শুরু করেছে। আগে যেখানে ক্ষীণ, অস্থির ডিঙ্গি নৌকায় যাত্রা করা হত, এখন চোরাচালানকারীরা শক্তিশালী স্পিডবোট ব্যবহার করে এই বিপজ্জনক পথ অতিক্রমের চেষ্টা করছে। এটি একদিকে যেমন বিপজ্জনক, তেমনি অনেক ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গ্রীস, তুরস্ক এবং অন্যান্য ইউরোপীয় দেশগুলো অভিবাসন সংকট মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০১৬ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং তুরস্কের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়, যেখানে তুরস্ক প্রতিশ্রুতি দেয় যে তারা তাদের উপকূল থেকে অভিবাসীদের ইউরোপে প্রবেশ রোধে ব্যবস্থা নেবে। বিনিময়ে, তুরস্ককে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হবে এবং তুর্কি নাগরিকদের জন্য ইউরোপে ভিসা মুক্ত ভ্রমণের সুবিধা দেওয়া হবে।

ইসরায়েলি সেনাদের দ্বারা আল জাজিরা অফিস বন্ধের আদেশ: পশ্চিম তীরে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর নতুন আঘাত

এই চুক্তির ফলে কিছুটা প্রভাব পড়লেও, অভিবাসন প্রবণতা পুরোপুরি বন্ধ হয়নি। অনেক অভিবাসী এখনও বিপজ্জনক পথ বেছে নিচ্ছেন, যা প্রাণঘাতী হতে পারে। তাছাড়া, ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিভিন্ন দেশের অভিবাসন নীতির কঠোরতা এবং বিভিন্ন দেশে শরণার্থীদের গ্রহণের জন্য জনমতও একটি বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

অভিবাসীদের নিরাপত্তা ও মানবাধিকার রক্ষা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। জাতিসংঘ এবং বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা অভিবাসন সংকটের মানবিক দিকগুলো নিয়ে কাজ করে আসছে। তবে, এই ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে চোরাচালানকারী নেটওয়ার্ক ভেঙে ফেলা এবং নিরাপদ ও আইনানুগ অভিবাসনের পথ তৈরি করাও জরুরি।

গ্রীসে অভিবাসী সংকট মোকাবিলায় কঠোর আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি, আন্তর্জাতিক সহযোগিতাও গুরুত্বপূর্ণ। তুরস্কের সঙ্গে চুক্তি পুনর্বিবেচনা এবং গ্রীসের অভিবাসন ব্যবস্থার উন্নয়ন নিয়ে আলোচনা চলছে। অভিবাসন সংকটের স্থায়ী সমাধান পেতে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বিভিন্ন কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

লেবাননের বৈরুতে উপশহরে ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৭ জনে দাঁড়িয়েছে

এ ধরনের ঘটনা এড়ানোর জন্য আরও কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। এর মধ্যে রয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা, চোরাচালানকারী নেটওয়ার্ক ধ্বংস করা এবং আন্তর্জাতিক সহযোগিতার মাধ্যমে অভিবাসীদের জন্য নিরাপদ ও সুরক্ষিত আশ্রয় প্রদানের ব্যবস্থা করা। তবে, এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য অভিবাসনপ্রবণ দেশগুলোতে দারিদ্র্য, যুদ্ধ এবং রাজনৈতিক অস্থিরতা দূর করাও জরুরি। অভিবাসন সংকট সমাধানে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের একযোগে কাজ করা প্রয়োজন।

এদিকে, এই ধরনের মর্মান্তিক দুর্ঘটনা প্রমাণ করে যে, অভিবাসন সংকট একটি গুরুতর বৈশ্বিক সমস্যা, যার সমাধান পেতে স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক সকল স্তরে সহযোগিতা এবং মানবিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে কাজ করতে হবে।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version