অনূঢ়া কুমারা দিশানায়েকে ফেব্রুয়ারি মাসে ভারত সফরে আসার সময় কেউ অনুমান করতে পারেনি যে সাত মাসের মধ্যে তিনি শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট হবেন। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের সঙ্গে বৈঠকের পরে, মি. জয়শঙ্কর দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরও মজবুত করার জন্য সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন। দিশানায়েকে এখন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন। গত রোববার নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়, যেখানে জনতা ভিমুক্তি পেরামুনা (জেভিপি) ও ন্যাশনাল পিপলস পাওয়ার (এনপিপি) এর পক্ষ থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন তিনি।

ইসরায়েল রামাল্লায় আল জাজিরা ব্যুরো বন্ধ করে: আপনার যা জানা দরকার

২০১৯ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে মাত্র ৩% ভোট পেয়েছিলেন দিশানায়েকে, কিন্তু এবারে তিনি প্রথম দফায় ৪২.৩১% ভোট পেয়েছেন। দ্বিতীয় রাউন্ডের গণনা শেষে ৫৫ বছর বয়সী মি. দিশানায়েকেকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ফলাফল ঘোষণার পরেই তাকে অভিনন্দন জানান ভারতীয় হাইকমিশনার সন্তোষ ঝা ও প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ভারতের ‘প্রতিবেশী প্রথমে’ নীতিতে শ্রীলঙ্কার বিশেষ স্থান থাকার বার্তা দেন মি. মোদি।

দিশানায়েকে বামপন্থী নেতা, যা সাধারণত চীনের প্রতি সহানুভূতিশীল বলে মনে করা হয়। ভারতীয় জনতা পার্টির (বিজেপি) ডানপন্থী মতাদর্শের সাথে দিশানায়েকের নীতি মিল না থাকায়, প্রশ্ন উঠছে তার নেতৃত্বে ভারত-শ্রীলঙ্কা সম্পর্ক কোন পথে এগোবে। ২০২২ সালে অর্থনৈতিক সংকটের সময়, দিশানায়েকে গোতাবায়া রাজাপাকসার কঠোর বিরোধিতা করেছিলেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই এবং সুশাসনের ওপর জোর দেওয়ায় তার জনপ্রিয়তা বেড়েছিল।

ইসরায়েলি সেনাদের দ্বারা আল জাজিরা অফিস বন্ধের আদেশ: পশ্চিম তীরে গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর নতুন আঘাত

দিশানায়েকের সামনে রয়েছে অর্থনৈতিক সঙ্কট, দুর্নীতি ও জাতিগত উত্তেজনার মতো অভ্যন্তরীণ চ্যালেঞ্জ। পাশাপাশি, বিদেশ নীতিতে ভারসাম্য বজায় রাখা তার জন্য গুরুত্বপূর্ণ হবে। অধ্যাপক হর্ষ ভি পন্থের মতে, জেভিপি অতীতে ভারত-বিরোধী ছিল। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই নীতিতে পরিবর্তন এসেছে। এখন তারা সুশাসন, ভারসাম্য ও জোট নিরপেক্ষ পররাষ্ট্রনীতির ওপর গুরুত্ব দিচ্ছে।

অধ্যাপক পন্থ মনে করেন, ২০২২ সালে মহিন্দা রাজাপাকসার সরকার পতনের পর রনিল বিক্রমাসিংহে ক্ষমতায় আসায় ভারত শ্রীলঙ্কাকে যে সাহায্য করেছিল, সেটি মাথায় রেখে নতুন সরকারকে কাজ করতে হবে। অধ্যাপক গ্ল্যাডসন জেভিয়ার মনে করেন, দিশানায়েকে কিছু ভারতীয় প্রজেক্টের সমালোচনা করলেও, চীনের সমালোচনা করেননি। শ্রীলঙ্কার অর্থনৈতিক সংকটের সময়ে ভারতের আর্থিক সহায়তা ছিল তাৎক্ষণিক। তাই দিশানায়েকে ভারতকে উপেক্ষা করে শ্রীলঙ্কাকে কঠিন পরিস্থিতিতে ফেলবেন না বলে মনে করেন তিনি।

লেবাননের বৈরুতে উপশহরে ইসরায়েলি হামলায় মৃতের সংখ্যা বেড়ে ৩৭ জনে দাঁড়িয়েছে

বিবিসি তামিল সার্ভিসের মুরলীধরন কাশী বিশ্বনাথনের মতে, জেভিপি এখন মধ্যপন্থী দলে পরিণত হয়েছে। দিশানায়েকে ভারতের পক্ষ থেকে তেমন অনুকূল না হলেও, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক খারাপ হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ভারত ও চীন দীর্ঘদিন ধরে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে কূটনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক বজায় রেখেছে। শ্রীলঙ্কার ভৌগোলিক অবস্থান বাণিজ্য ও সামরিক দৃষ্টিকোণ থেকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই পরিস্থিতিতে দিশানায়েকে কীভাবে ভারসাম্য বজায় রাখবেন, তা সময়ই বলে দেবে।

নির্বাচনের আগে দিশানায়েকে ভারতীয় আদানি গোষ্ঠীর বায়ু শক্তি প্রকল্পের বিরোধিতা করেছিলেন। তবে শুধু জেভিপি নয়, অন্যান্য দলও পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক কারণে এই প্রকল্পের সমালোচনা করেছে। শ্রীলঙ্কার ভৌগোলিক অবস্থান খুবই গুরুত্বপূর্ণ। চীন দীর্ঘদিন ধরেই সেদিকে নজর রেখেছে, তাই নতুন সরকার কীভাবে এই বিষয়গুলো সামলাবে, তা গুরুত্বপূর্ণ।

৯০০ জন উপজাতীয় বিদ্রোহী মায়ানমারের উপজাতীয় গোষ্ঠীর সদস্য রাজনৈতিক সংকট এবং সামরিক সংঘর্ষের কারণে বাসস্থান ছেড়ে এসেছে।

ভারতকে আগে বুঝতে হবে শ্রীলঙ্কার নতুন সরকারের অর্থনৈতিক নীতি কী। দিশানায়েকে যদি এমন নীতি নিয়ে আসেন যা শ্রীলঙ্কাকে স্থিতিশীল রাখতে পারে, তাহলে তা ভারতের জন্য মঙ্গলজনক হবে। শ্রীলঙ্কার ভৌগোলিক অবস্থান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের জন্য সংবেদনশীল বিষয়ে নতুন সরকার কীভাবে ভারসাম্য বজায় রাখে, সেটি দেখতে হবে।

গণমাধ্যমে উপস্থিতির দিক থেকে ট্রাম্প-ভ্যান্স টিকিট অনেক এগিয়ে

অধ্যাপক পন্থের মতে, মালদ্বীপের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক উন্নতির উদাহরণ থেকে শ্রীলঙ্কাও শিক্ষা নিতে পারে। মালদ্বীপের নতুন প্রেসিডেন্ট মোহামেদ মুইজ নির্বাচনি প্রচারে ‘ইন্ডিয়া আউট’ স্লোগান দিলেও, এখন তিনি ভারত সফরে আসতে পারেন। সুতরাং, দিশানায়েকেও এমন ভারসাম্য রক্ষার পথে হাঁটতে পারেন।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version