নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারের জেলার মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে উঠেছে কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি অর্জনের অভিযোগ। ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তার নামে-বেনামে বিপুল সম্পদ রয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ঝিনাইদহের বাইপাস, ভুটিয়ারগাতি, হাটগোপালপুরসহ বিভিন্ন স্থানে জমি কিনেছেন তিনি, যার মধ্যে কিছু জমি তার নিজের নামে, আবার কিছু স্বজনদের নামে। বর্তমানে তিনি নারায়ণগঞ্জের জেলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন, তবে এর আগে দেশের বিভিন্ন জেলায় কর্মরত ছিলেন।

ঝিনাইদহ শহরের বাইপাস, ভুটিয়ারগাতি এবং হাটগোপালপুরে উল্লেখযোগ্য সম্পত্তির মালিক হয়েছেন মামুনুর রশিদ। অভিযোগ রয়েছে, সম্প্রতি তিনি ঝিনাইদহের হাটগোপালপুর বাজারের ব্যবসায়ী মোয়াজ্জেম হোসেনের ১২ শতক জমি, মার্কেটসহ দুটি তলা বাড়ি কেনার জন্য আড়াই কোটি টাকার বায়না করেছেন। এ ছাড়া যশোর ও ফরিদপুরেও তার নামে বা বেনামে আরও সম্পত্তি রয়েছে বলে জানা গেছে।

ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, যেখানেই তিনি কর্মরত ছিলেন, সেখানেই দুর্নীতি করে বিপুল অর্থ উপার্জন করেছেন এবং সেই অর্থ দিয়ে সম্পদ ক্রয় করেছেন। তার সম্পদের বেশিরভাগই বেনামে কেনা হয়েছে, যা তার স্বজন বা পরিচিতদের নামে রাখা হয়েছে।

মামুনুর রশিদ ফরিদপুরের বাসিন্দা, কিন্তু তিনি ঝিনাইদহসহ বিভিন্ন জেলায় কর্মরত থাকাকালীন বিপুল অর্থ আয় করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। তার ঘনিষ্ঠজনেরা জানিয়েছেন, তিনি ঝিনাইদহে ২০১২ সালে ডেপুটি জেলার হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে দেলোয়ার হোসেন দুর্লভ নামের এক দালালের সঙ্গে পরিচিত হন। সেই সময় থেকে তার সহযোগিতায় মামুনুর রশিদ ঝিনাইদহের বিভিন্ন এলাকায় জমি কিনতে শুরু করেন।

এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় ঝিনাইদহে এক ছাত্রীর আত্মহত্যা

স্থানীয়দের অভিযোগ, মামুনুর রশিদ নিজের ক্ষমতা ব্যবহার করে দুর্নীতি করেছেন এবং তার কর্মস্থলে বিভিন্ন অপকর্ম চালিয়েছেন। তার এসব কর্মকাণ্ডের ফলে তিনি বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন, যা তার প্রকৃত আয়ের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। স্থানীয় সচেতন মহল এই ব্যাপারে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং তার আয়ের উৎস খুঁজে বের করার দাবি তুলেছে।

মামুনুর রশিদের এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, মামুনুর রশিদের ঝিনাইদহে বিপুল সম্পত্তি রয়েছে। এসব সম্পত্তি তিনি ঝিনাইদহে কর্মরত থাকা অবস্থায় দুর্লভের সহযোগিতায় ক্রয় করেছেন। মামুনুর রশিদের সমস্ত অবৈধ অর্থ এবং সম্পত্তি তার কাছে রাখা হয়েছে, এবং সেই অর্থ দিয়ে আরও বেনামে সম্পত্তি কিনছেন তিনি। এ ছাড়া যশোর, কুমিল্লা ও ফরিদপুরেও মামুনুর রশিদের নামে বেনামে সম্পত্তি রয়েছে বলে তার আত্মীয় জানান।

মামলার পেছনের প্রেক্ষাপট : ‘ইচ্ছেমতো’ আসামি করা -মাঠপর্যায়ে অসঙ্গতি আসামি নির্বাচন, রাজনৈতিক প্রভাব এবং হুমকি

মামুনুর রশিদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে পরিচিত দেলোয়ার হোসেন দুর্লভ এই অভিযোগের কিছুটা সত্যতা স্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, “ঝিনাইদহ জেলা কারাগারে থাকাকালীন সময়ে আসামী দেখতে গিয়ে উনার সাথে আমার পরিচয় হয়। সেই থেকে আমাদের মধ্যে ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে।” দুর্লভ আরও জানান যে, মামুনুর রশিদ ঝিনাইদহের হামদহ বাইপাসে একটি জমি কিনেছেন এবং আরও জমি কেনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

তবে অন্য কোথাও মামুনুর রশিদের সম্পত্তি রয়েছে কি না, সে বিষয়ে দেলোয়ার হোসেন নিশ্চিত কোনো তথ্য দিতে পারেননি।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে হাইকোর্ট বিভাগের ছয় বিচারপতি সাক্ষাৎ

নারায়ণগঞ্জের জেলার হিসেবে দায়িত্ব পালন করা মামুনুর রশিদের এত বিপুল সম্পত্তির মালিক হওয়ার ঘটনা স্থানীয়দের মধ্যে চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করেছে। সচেতন মহল মনে করে, একজন জেলারের পক্ষে এত সম্পত্তির মালিক হওয়া সম্ভব নয়, যদি না তিনি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকেন।

স্থানীয় জনগণ মামুনুর রশিদের সম্পত্তির উৎস সম্পর্কে বিস্তারিত তদন্তের দাবি জানাচ্ছেন। তাদের মতে, দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) বা অন্য কোনো সুষ্ঠু তদন্তকারী সংস্থা এই অভিযোগের যথাযথ তদন্ত করলে মামুনুর রশিদের সম্পদ আহরণের প্রকৃত চিত্র বের হয়ে আসবে।

সাবেক বিমানমন্ত্রী ফারুক খান ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক গ্রেপ্তার

মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে এত অভিযোগ ওঠার পরও তার পক্ষ থেকে কোনো সরাসরি প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তার নীরবতা অনেকের কাছে সন্দেহজনক বলে মনে হচ্ছে, বিশেষ করে যখন তার সম্পত্তির বিষয়ে এত প্রশ্ন উঠছে।

নারায়ণগঞ্জের জেলার মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ এবং ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে তার বিপুল সম্পত্তির বিষয়টি স্থানীয় পর্যায়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। সাধারণ মানুষ এবং সচেতন মহল তার সম্পদের উৎস খুঁজে বের করার জন্য সুষ্ঠু তদন্তের দাবি তুলেছে। এ ধরনের অভিযোগ যদি প্রমাণিত হয়, তাহলে মামুনুর রশিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version