ঝিনাইদহে এইচএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হওয়ার হতাশায় জান্নাতুল ফেরদৌস (১৮) নামে এক ছাত্রীর আত্মহত্যার ঘটনা ঘটেছে। এই হৃদয়বিদারক ঘটনা মঙ্গলবার সদর উপজেলার পাগলাকানাই ইউনিয়নের ভড়ুয়াপাড়া গ্রামে ঘটে। জান্নাতুল ছিলেন ওই এলাকার বাসিন্দা নজরুল ইসলামের কন্যা এবং লাউদিয়া মুক্তিযোদ্ধা মশিউর রহমান মহাবিদ্যালয়ের মানবিক বিভাগের ছাত্রী। তিনি সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিলেন, কিন্তু ফলাফল আশানুরূপ না হওয়ায় গভীর হতাশায় ডুবে গিয়ে জীবন শেষ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

মামলার পেছনের প্রেক্ষাপট : ‘ইচ্ছেমতো’ আসামি করা -মাঠপর্যায়ে অসঙ্গতি আসামি নির্বাচন, রাজনৈতিক প্রভাব এবং হুমকি

জান্নাতুলের বড় ভাই আলামিন বলেন, “আমার বোন এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করেছে শুনে সে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। এরপর ঘরের ভেতর ফ্যানের সঙ্গে ওড়না পেঁচিয়ে আত্মহত্যা করে। আমরা দরজা ভেঙে তাকে উদ্ধার করি, কিন্তু তখনই সে নিথর হয়ে পড়ে ছিল। পরে গ্রামের একজন চিকিৎসক এসে তাকে মৃত ঘোষণা করেন।” এই ঘটনার পর থেকে পুরো গ্রাম শোকে স্তব্ধ হয়ে গেছে, এবং জান্নাতুলের আত্মহত্যা তার পরিবারের জন্য গভীর শোকের কারণ হয়েছে।

ইউপি সদস্য রবিউল ইসলাম বলেন, “আমি ব্যবসায়িক কাজে ব্যস্ত ছিলাম, হঠাৎ খবর পেলাম যে জান্নাতুল আত্মহত্যা করেছে। দ্রুত বাসায় ফিরে দেখি সে আর বেঁচে নেই। মূলত পরীক্ষায় ফেল করার হতাশা থেকেই সে এই কঠিন সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।” এ সময় স্থানীয় লোকজনও এই ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে জানায় যে, জান্নাতুল সবসময় পড়াশোনায় মনোযোগী ছিল এবং তার এই ফলাফল তাকে মর্মাহত করে।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে হাইকোর্ট বিভাগের ছয় বিচারপতি সাক্ষাৎ

জান্নাতুলের আত্মহত্যার পরপরই তার পরিবার এবং গ্রামের মানুষজন শোকে স্তব্ধ হয়ে পড়ে। জান্নাতুলের পিতা-মাতা এবং আত্মীয়-স্বজন এই ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নিতে পারছেন না। তার অকাল মৃত্যুতে পুরো এলাকা নেমে আসে শোকের ছায়া। মঙ্গলবার রাতে জান্নাতুলের জানাজার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। দাফনের সময়ও পরিবারের কান্নার রোল ছিল থামবার নয়।

ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, “খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। স্থানীয় লোকজন এবং পরিবার আমাদের জানিয়েছেন যে, জান্নাতুল পরীক্ষায় ফেল করার কারণে মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে আত্মহত্যা করেছে। পরিবারের অনুরোধে আমরা মরদেহের ময়নাতদন্ত না করে তা পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেছি।”

এই ঘটনা থেকে আবারও স্পষ্ট হয় যে শিক্ষার্থীদের ওপর পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে চাপ এবং প্রত্যাশা কীভাবে তাদের মানসিকভাবে প্রভাবিত করতে পারে। বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থী তাদের পরিবার ও সমাজের চাপে পরীক্ষার ফলাফলের ওপর অস্বাভাবিক মানসিক চাপের মুখোমুখি হয়। ভালো ফলাফল করতে না পারলে তারা সমাজে অপমানিত বোধ করে এবং অনেকেই হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। এর ফলে অনেকেই চরম সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলে, যেমনটি জান্নাতুল করেছেন।

সাবেক বিমানমন্ত্রী ফারুক খান ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক গ্রেপ্তার

শিক্ষাবিদরা মনে করেন, পরীক্ষার ফলাফলের ওপর অতিরিক্ত জোর দেওয়ার পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য এবং মনোবলকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত। প্রত্যেক শিক্ষার্থীর সাফল্য পরীক্ষার ফলাফলের ওপর নির্ভর করে না, বরং জীবনে সফল হতে প্রয়োজন সঠিক দিকনির্দেশনা এবং মানসিক দৃঢ়তা। তাই পরিবারের সদস্যদের এবং শিক্ষকদের উচিত শিক্ষার্থীদের সব পরিস্থিতিতে সমর্থন দেওয়া এবং তাদের মনোবল বাড়ানোর চেষ্টা করা। এতে তারা ব্যর্থতাকে সহজভাবে মেনে নিতে পারবে এবং ভবিষ্যতে আরও ভালো করার জন্য প্রস্তুতি নিতে পারবে।

ফরিদপুরে অতিরিক্ত মদ পানে আরও এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু

এ ছাড়া, মানসিক স্বাস্থ্যসেবা আরও সহজলভ্য করা উচিত, যাতে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষার চাপ, ব্যর্থতা বা হতাশা নিয়ে কারও সঙ্গে কথা বলতে পারে এবং সমাধানের পথ খুঁজে পায়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলিতে মানসিক স্বাস্থ্য পরামর্শদাতা রাখার ব্যবস্থা করাও জরুরি, যারা শিক্ষার্থীদের মানসিক চাপে সহায়তা করতে পারবেন।

টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে দুর্ঘটনায় স্পিডবোট ডুবে ৯ জন র মধ্যে ৮ জন উদ্ধার একটি শিশু নিখোঁজ

এই ধরনের মর্মান্তিক ঘটনাগুলো আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়, কীভাবে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে আরও সচেতন হতে হবে। সমাজের প্রত্যেকটি স্তরে শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতিশীল আচরণ এবং তাদের মনোবল বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করতে হবে, যাতে তারা কোনো পরিস্থিতিতে হাল না ছাড়ে।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version