ঝিনাইদহ প্রতিনিধি- ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার স্বরূপপুর ইউনিয়নের ভূমি অফিস যেন ঘুষ, দুর্নীতি, এবং হয়রানির একটি কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হয়েছে। স্থানীয় জনগণ অভিযোগ করেছেন যে, এই ইউনিয়নের ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা নিকুঞ্জ কুমার বিশ্বাস ভূমি সংক্রান্ত সেবা প্রদানে ব্যাপক দুর্নীতির আশ্রয় নিচ্ছেন এবং সেবা গ্রহীতাদের নানাভাবে হয়রানি করছেন। অভিযোগ রয়েছে, তিনি নিয়মিতভাবে জমির নামজারি, ডিসিআর, মিসকেসসহ বিভিন্ন সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে নিয়মবহির্ভূতভাবে অতিরিক্ত টাকা দাবি করছেন।

ভারতে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) ও ইসলাম সম্পর্কে কটুক্তির প্রতিবাদে ঝিনাইদহে বিক্ষোভ ও সমাবেশ

স্বরূপপুর ইউনিয়নের বাসিন্দারা জানিয়েছেন যে, জমি সংক্রান্ত সেবা নিতে গেলে ঘুষ না দিলে কোনো কাজ হয় না। নিকুঞ্জ কুমার বিশ্বাস জমির নামজারি, দাখিলা কাটা, এবং মিসকেসগুলোর জন্য অতিরিক্ত অর্থ দাবি করেন। অনলাইনে আবেদন করা সত্ত্বেও, প্রতিবেদন সংগ্রহ করতে ৪ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত ঘুষ দিতে হয়। যদি ঘুষের টাকা প্রদান করা না হয়, তবে সেবা প্রদান করতে অযথা দেরি করা হয়, এবং জমির মালিকদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করা হয়।

গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে একজন, কোশাডাঙ্গা গ্রামের আবু বক্কর, অভিযোগ করেন যে, তার পিতা-মাতার জমির ভূমি উন্নয়ন কর দিতে গিয়ে তিনি নিকুঞ্জের কাছ থেকে হয়রানির শিকার হন। তিনি বলেন, নিকুঞ্জ তার কাছ থেকে ১ হাজার টাকা ঘুষ নিয়ে ১০২ টাকার দাখিলা দেন। এ ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছেন আরও অনেকেই, এবং তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে জমির খাজনা প্রদান প্রক্রিয়া আরও জটিল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

ঝিনাইদহে জমি দখল ও গাছ কাটায় ভূমি বিরোধ ও আইনি পদক্ষেপের টানাপোড়েন

স্বরূপপুর ইউনিয়নের সাধারণ জনগণও ভূমি অফিসে ঘুষের ব্যাপারে সরাসরি অভিযোগ করেছেন। একই গ্রামের বাসিন্দা আনোয়ার হোসেন জানান, তাকে ৮০ টাকার দাখিলা দিতে গিয়ে ১ হাজার টাকা আদায় করা হয়েছে। কুসুমপুর গ্রামের আবুল কাসেম বলেন, নিকুঞ্জ কুমার বিশ্বাস তার ৭২ শতক জমির নামজারি ও ভূমি কর পরিশোধের জন্য ৫ হাজার টাকা ঘুষ দাবি করেন। পরে সাড়ে ৪ হাজার টাকায় রফা হয় বলে তিনি জানান।

অন্যদিকে, কেশবপুর গ্রামের হোসেন আলীও একই ধরনের হয়রানির শিকার হয়েছেন। তিনি অভিযোগ করেন যে, ১৮০ টাকার দাখিলা দিতে তাকে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়েছে। জমির মালিকেরা যদি ঘুষ দিতে ব্যর্থ হন, তবে তাদের খাজনা নেওয়া হয় না বলে অভিযোগ উঠেছে। এই দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্য দীর্ঘদিন ধরে চললেও তার বিরুদ্ধে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না।

ঝিনাইদহে ভার্চুয়ালি সমাবেশে তারেক রহমান: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রোডম্যাপ নির্দিষ্ট করতে হবে

স্বরূপপুর ইউনিয়নের স্থানীয় জনগণ ভূমি অফিসের এই দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যাপকভাবে ক্ষুব্ধ। তারা অভিযোগ করছেন যে, ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা নিকুঞ্জ কুমার বিশ্বাস প্রতিনিয়ত জনগণকে হয়রানি করছেন এবং সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ হাতিয়ে নিচ্ছেন। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, ঘুষ ছাড়া কোন সেবা পাওয়া একপ্রকার অসম্ভব হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কুশাডাঙ্গা গ্রামের আব্দুল হাকিমও বলেন, তিনি বহুবার খাজনা দিতে গিয়ে হয়রানির শিকার হয়েছেন। প্রতিবারই নিকুঞ্জ কুমার ঘুষ দাবি করেন এবং টাকা না দিলে খাজনা নিতে অস্বীকৃতি জানান। অন্যদিকে, একই গ্রামের মাজেদা বেগমও নিকুঞ্জের বিরুদ্ধে একই ধরনের অভিযোগ তুলেছেন। তিনি বলেন, তাকে ৩ হাজার টাকা দিতে হয়েছে, অথচ তার জমির প্রকৃত খাজনা ছিল মাত্র ১৮০ টাকা।

অভিযুক্ত ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা নিকুঞ্জ কুমার বিশ্বাস অবশ্য তার বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, “যদি জমির মালিকরা খুশি হয়ে বেশি টাকা দেন, তবে সেটা তার কোনো দোষ নয়। তিনি কখনও স্বেচ্ছায় কারো কাছ থেকে অতিরিক্ত অর্থ গ্রহণ করেন না।” তবে স্থানীয়রা তার এই বক্তব্যকে পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন এবং বলেছেন, ঘুষ ছাড়া কাজ করানো একপ্রকার অসম্ভব।

ঝিনাইদহে ভার্চুয়ালি সমাবেশে তারেক রহমান: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রোডম্যাপ নির্দিষ্ট করতে হবে

স্থানীয় জনগণের মধ্যে জমির খাজনা দেওয়া এবং অন্যান্য ভূমি সেবা পেতে হয়রানির এই অভিযোগগুলো মহেশপুর উপজেলা প্রশাসনের কাছেও পৌঁছেছে। মহেশপুর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) শরিফ শাওন বলেছেন, “যদি ভুক্তভোগীরা আমার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন, তবে আমি নিজে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেব।” তিনি আরও আশ্বস্ত করেন যে, “কেউ যদি দুর্নীতি করে থাকে, তবে সে পার পাবে না।”

স্বরূপপুর ইউনিয়নের ভূমি অফিসে দুর্নীতির এই চিত্র শুধু স্থানীয় সমস্যার একটি উদাহরণ নয়, বরং এটি বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে ভূমি অফিসগুলোতে চলমান দুর্নীতির একটি প্রতিফলন। সাধারণ জনগণ যারা ভূমি সংক্রান্ত সেবা গ্রহণ করতে আসে, তারা প্রতিনিয়তই দুর্নীতির শিকার হচ্ছে। তারা চায় এই দুর্নীতির অবসান হোক এবং প্রশাসন যেন তাদের অভিযোগ গুরুত্ব সহকারে নেয়।

এ ধরনের দুর্নীতি কেবল স্থানীয় জনগণের জন্যই নয়, বরং দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক ও সামাজিক ব্যবস্থার ওপরও নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। যখন সরকারি কর্মকর্তারা নিজেদের ক্ষমতার অপব্যবহার করে সেবা গ্রহীতাদের হয়রানি করেন, তখন সাধারণ মানুষের মধ্যে সরকারের প্রতি আস্থা হ্রাস পায়। এতে করে জনগণের মধ্যে হতাশা সৃষ্টি হয় এবং তারা নিজেদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়।

মহেশপুরের স্বরূপপুর ইউনিয়ন ভূমি অফিসের দুর্নীতি এবং হয়রানি সাধারণ জনগণের জীবনে ব্যাপকভাবে প্রভাব ফেলছে। ভূমি উপ-সহকারী কর্মকর্তা নিকুঞ্জ কুমার বিশ্বাসের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো প্রমাণ করে যে, গ্রামাঞ্চলের ভূমি অফিসগুলোতে কতটা অরাজকতা চলছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের অঙ্গীকার দেওয়া হলেও, তা কতটা কার্যকর হবে, সেটাই এখন দেখার বিষয়।

শলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ আটক-২

এই ধরনের পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পেতে স্থানীয় জনগণ এবং প্রশাসনের মধ্যে সহযোগিতামূলক সম্পর্ক স্থাপন জরুরি। দুর্নীতি মুক্ত এবং জনবান্ধব সেবা নিশ্চিত করার জন্য প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে সাধারণ মানুষ তাদের জমি সংক্রান্ত সেবা গ্রহণ করতে পারে কোনো হয়রানি ছাড়াই।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version