ঝিনাইদহ, ৩ অক্টোবর –ভারতে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা:) এবং ইসলাম সম্পর্কে কটূক্তির প্রতিবাদে ঝিনাইদহে ব্যাপক বিক্ষোভ ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ ঘটনাটি শুধুমাত্র ঝিনাইদহ নয়, গোটা দেশজুড়ে মুসলিম সম্প্রদায়ের মধ্যে গভীর ক্ষোভ ও বেদনার জন্ম দিয়েছে। ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের কারণে ঝিনাইদহের জনগণও বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে এবং এই অনুভূতির প্রকাশ হিসেবে তারা ব্যাপক বিক্ষোভ ও সমাবেশের আয়োজন করেছে।

ঝিনাইদহে জমি দখল ও গাছ কাটায় ভূমি বিরোধ ও আইনি পদক্ষেপের টানাপোড়েন

ভারতে সাম্প্রতিক সময়ে কিছু রাজনৈতিক ও ধর্মীয় নেতার বক্তব্যে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এবং ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এর ফলে মুসলিম বিশ্বে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। ভারতের এই ঘটনা আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও নিন্দার জন্ম দিয়েছে, এবং মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলো এ ঘটনার তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছে। বাংলাদেশের জনগণ, বিশেষ করে তরুণ সমাজও এর প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছে। ঝিনাইদহে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ তারই একটি উদাহরণ।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সাধারণ ছাত্রদের ব্যানারে ঝিনাইদহ শহরের উজির আলী স্কুল মাঠ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করা হয়। এই মিছিলটি শহরের বিভিন্ন প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে এবং পায়রা চত্বরে গিয়ে শেষ হয়। মিছিলের সময় বিভিন্ন ইসলামপন্থী স্লোগান এবং মহানবী (সা:) এর প্রতি ভালবাসার প্রকাশ্যে স্লোগান শোনা যায়। শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করে এবং ভারতের ঘটনায় জড়িতদের শাস্তির দাবি জানায়।

মিছিল শেষে পায়রা চত্বরে সমাবেশের আয়োজন করা হয়, যেখানে বিভিন্ন ছাত্রনেতা, ইসলামী চিন্তাবিদ এবং সাধারণ মানুষ বক্তব্য রাখেন। বক্তারা তাদের বক্তব্যে ভারতের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানান এবং ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের ফলে যে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে, তার যথার্থতা ব্যাখ্যা করেন।

ঝিনাইদহে ভার্চুয়ালি সমাবেশে তারেক রহমান: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রোডম্যাপ নির্দিষ্ট করতে হবে

জেলা ছাত্রদলের সভাপতি সেমেনুজ্জামান সোমেন তার বক্তব্যে বলেন, “মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) এর প্রতি অসম্মাকরা মানে শুধু মুসলমানদের ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত নয়, এটি মানবতার ওপর একটি আঘাত। আমরা এমন আচরণ কখনও সহ্য করবো না।”

ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক মুশফিকুর রহমান মানিকও সমাবেশে বক্তব্য রাখেন। তিনি বলেন, “ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা আন্তর্জাতিক আইনে দণ্ডনীয় অপরাধ হওয়া উচিত। যারা মহানবী (সা:) সম্পর্কে কটূক্তি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হোক। আমরা বিশ্ব সম্প্রদায়কে আহ্বান জানাই, যাতে তারা এই ঘটনার নিন্দা জানায় এবং দোষীদের শাস্তির ব্যবস্থা করে।”

সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা মুফতি মোহাম্মদ জুবায়ের হোসেন, যিনি ইসলামী চিন্তাবিদ হিসেবে দীর্ঘদিন ধরে সমাজে সক্রিয় রয়েছেন। তিনি বলেন, “মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা:) এর শিক্ষা মানবতার শিক্ষা, শান্তির শিক্ষা। যারা তার বিরুদ্ধে কথা বলছে, তারা শুধুমাত্র মুসলমানদের আঘাত করছে না, বরং তারা মানবতার বিরুদ্ধেও অপরাধ করছে।”

ছাত্র জনতার আন্দোলনে ঢাকায় নিহত ঝিনাইদহের সাব্বির ও প্রকৌশলী রাকিব হত্যার প্রতিবাদে ,ঝিনাইদহে শনিবার তারেক রহমানের ভার্চুয়ালি সমাবেশ

তিনি আরও বলেন, “এ ধরনের অশান্তির মূল উৎস হচ্ছে ধর্ম সম্পর্কে অজ্ঞতা এবং অসহিষ্ণুতা। আমরা সবাইকে আহ্বান জানাই, তারা যেন ধর্মীয় সহনশীলতার শিক্ষা গ্রহণ করে এবং একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে।”

বিক্ষোভে অংশগ্রহণকারীরা ভারতের ঘটনার নিন্দা জানিয়ে আরও কিছু দাবিও তুলে ধরেন। তাদের প্রধান দাবি ছিলো:

১. দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি: ভারতের যারা এই কটূক্তি করেছে, তাদের বিরুদ্ধে দ্রুততম সময়ে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ এবং দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক।

২. আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপ: আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলোর সরকারকে ভারতের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে হবে, যাতে এই ধরনের আচরণ আর কখনও না ঘটে।

  1. ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা: বক্তারা বলেন, পৃথিবীতে ধর্মীয় সম্প্রীতি রক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। ইসলাম শান্তির ধর্ম, এবং এটি কখনও কোনো আঘাত মেনে নেবে না। তবে তারা এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে দাবি জানান যে, এই ঘটনার সমাধান হতে হবে আইনগত এবং নৈতিক ভিত্তিতে, সহিংসতার মাধ্যমে নয়।

শুধু শিক্ষার্থী বা ছাত্রনেতারাই নয়, এই বিক্ষোভে সাধারণ মানুষও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করেন। গ্রামের মানুষ থেকে শুরু করে শহরের সাধারণ জনগণ পর্যন্ত সবাই এই বিক্ষোভে সামিল হন। তাদের ভাষায়, “মহানবী (সা:) এর অপমান কখনো মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এর প্রতিবাদ করব শান্তিপূর্ণভাবে, কিন্তু আমাদের দাবি অবিলম্বে মানতে হবে।”

শলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ আটক-২

ভারতের এই ঘটনার পর মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নেতারা তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন। সৌদি আরব, পাকিস্তান, তুরস্কসহ বেশ কিছু মুসলিম দেশের সরকার এবং জনগণ এই ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এমনকি ভারত সরকারের মধ্যেও কিছু স্তরে অস্বস্তি তৈরি হয়েছে এবং তারা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছে।

বাংলাদেশের জনগণও এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানাচ্ছে, এবং ঝিনাইদহের এই বিক্ষোভ তারই একটি প্রমাণ। বাংলাদেশ সরকারও ভারতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে, তারা যেন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করার এই ধরনের কাজ বন্ধ করে এবং দোষীদের যথাযথ শাস্তি নিশ্চিত করে।

ঝিনাইদহে এই বিক্ষোভটি শান্তিপূর্ণভাবে সমাপ্ত হলেও দেশের বিভিন্ন স্থানে এই ধরনের বিক্ষোভ আরও প্রসারিত হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। বিশেষ করে ছাত্র সমাজ এবং ইসলামপন্থী দলগুলো এই ইস্যুতে আরও সোচ্চার হতে পারে।

এ ধরনের আন্দোলন ও বিক্ষোভ যাতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়, সেজন্য স্থানীয় প্রশাসন সতর্কতার সঙ্গে কাজ করছে। ঝিনাইদহে পুলিশের একটি দল বিক্ষোভের সময় নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে এবং জনসাধারণকে উস্কানিমূলক কোনো কাজ না করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে।

ঝিনাইদহ চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

ভারতে মহানবী হযরত মুহাম্মাদ (সা:) ও ইসলাম সম্পর্কে কটূক্তির প্রতিবাদে ঝিনাইদহের সাধারণ ছাত্র ও জনসাধারণের এই বিক্ষোভ ও সমাবেশ ধর্মীয় অনুভূতির প্রতি তাদের গভীর সম্মান ও ভালবাসার প্রকাশ। তারা শান্তিপূর্ণভাবে এই প্রতিবাদ জানিয়েছে, এবং তাদের দাবি ছিল আন্তর্জাতিক আইনের মাধ্যমে দোষীদের শাস্তি নিশ্চিত করা। ধর্মীয় সহনশীলতা ও সম্প্রীতি রক্ষার গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে, বিক্ষোভকারীরা আশা প্রকাশ করেছেন যে, এমন ঘটনা আর কখনও ঘটবে না এবং বিশ্ব সম্প্রদায় এই ইস্যুতে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে।

এই বিক্ষোভ শুধু স্থানীয় বা জাতীয় পর্যায়েই সীমাবদ্ধ নয়, বরং এটি আন্তর্জাতিক মঞ্চেও ধর্মীয় সহিষ্ণুতা এবং শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের গুরুত্ব তুলে ধরছে। বিক্ষোভকারীরা আশা করছেন, তাদের এই শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতের সংশ্লিষ্টরা উপলব্ধি করবে যে, ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করা কেবলমাত্র একটি জাতির নয়, বরং সমগ্র মানবজাতির অনুভূতির প্রতি একটি অপরাধ।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version