ঝিনাইদহ জেলার সদর উপজেলার পাগলা কানাই ইউনিয়নের বাড়ীবাথান গ্রামে সম্প্রতি ঘটে যাওয়া জমি দখল ও গাছ কাটার ঘটনা স্থানীয় পর্যায়ে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। জমি সংক্রান্ত এই বিরোধ ধীরে ধীরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে, যেখানে দীর্ঘদিনের ভূমি মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব, গাছ কাটার অভিযোগ এবং স্থানীয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হস্তক্ষেপ সব মিলিয়ে পরিস্থিতি জটিল হয়ে উঠেছে।

ঘটনার ভুক্তভোগী রফিকুল আলম খালেক, যিনি ঝিনাইদহ পুলিশ লাইন্স স্কুলে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে কাজ করেন, জানান যে তার পৈত্রিক সূত্রে পাওয়া ৪০ শতক জমিতে তিনি দীর্ঘ ৫০ বছর ধরে আবাদ করে আসছেন। জমিতে বিভিন্ন প্রজাতির ফলজ ও বনজ গাছ লাগানো ছিল, যা তার পরিবারের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ হিসেবে বিবেচিত ছিল। কিন্তু সম্প্রতি প্রতিবেশী শাহজাহান ও আফজাল সহ আরও কিছু লোক এই জমি জোরপূর্বক দখল করে নেয়। দখলের সময় তারা জমিতে থাকা ১৫টি মেহগনি ও ৬টি কাঠাল গাছ কেটে নেয়।

ঝিনাইদহে ভার্চুয়ালি সমাবেশে তারেক রহমান: অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের রোডম্যাপ নির্দিষ্ট করতে হবে

রফিকুল আলম জানান, “আমরা আমাদের জমিতে আবাদ করছিলাম। গায়ের জোরে এই জমি দখল করে নেওয়া হয়েছে। জমিতে গেলে তারা আমাদের হত্যার হুমকি দেয়। এর আগেও তারা জমি নিয়ে মামলা করেছিল। সেই মামলায় হেরে যাওয়ার পরও তারা জোরপূর্বক জমি দখল করেছে।”

তিনি আরও বলেন, “আমি থানায় অভিযোগ দিয়েছি। ২৪ সেপ্টেম্বর ঝিনাইদহ থানায় একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে পুলিশ শাহজাহানকে জমিতে যেতে নিষেধ করে। কিন্তু সেই আদেশ উপেক্ষা করে তারা আবার গাছ কেটে জমি দখল করে নেয়। আমি এর সুষ্ঠু বিচার চাই।”

অন্যদিকে, অভিযুক্ত শাহজাহান তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ অস্বীকার করেননি। তিনি সরাসরি স্বীকার করেছেন যে জমিটি তার নিজের এবং তিনি গাছগুলো কেটেছেন। তার ভাষ্যমতে, “জমি আমার, তাই আমি গাছ কেটে নিয়েছি।” তার এই স্পষ্ট বক্তব্যে জমির মালিকানা নিয়ে দ্বন্দ্ব আরও ঘনীভূত হয়েছে। তবে তার দাবি আইন অনুযায়ী সঠিক কি না, তা তদন্ত সাপেক্ষে নিশ্চিত হতে হবে।

ঝিনাইদহের মহেশপুরে ৩৫ কোটি টাকার মাদকদ্রব্য ধ্বংস

এই ঘটনার পর পুলিশ উভয় পক্ষের মধ্যে শান্তি স্থাপন করার চেষ্টা করেছে। ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন উদ্দিন জানান, “গাছ কাটার সংবাদ পেয়ে আমরা ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠিয়েছিলাম। পুলিশ গিয়ে গাছ কাটা বন্ধ করে উভয় পক্ষকে শান্ত থাকার নির্দেশ দিয়েছে। পরবর্তীতে তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

এই ঘটনা প্রমাণ করে যে জমি সংক্রান্ত বিরোধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ না করে কেউ যদি জোরপূর্বক নিজের দাবি প্রতিষ্ঠা করতে চায়, তাহলে সেটি শুধু বিরোধকেই তীব্র করে তোলে। এখানে পুলিশ প্রশাসন দায়িত্ব পালন করেছে এবং তদন্তের ভিত্তিতে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। তবে এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি বন্ধে আরও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন স্থানীয়রা।

বাড়ীবাথান গ্রামের মানুষ এবং পাশের এলাকাগুলোর বাসিন্দাদের মধ্যে এই ঘটনা নিয়ে ব্যাপক আলোচনা চলছে। স্থানীয়ভাবে জমি দখলের ঘটনা নতুন কিছু নয়, কিন্তু গাছ কাটা এবং হুমকির ঘটনা পরিস্থিতিকে আরও উদ্বেগজনক করে তুলেছে। স্থানীয়রা বলছেন, জমি নিয়ে বিরোধের ঘটনা বাড়ছে, আর এগুলোর বেশিরভাগই সমাধান না পেয়ে আইনি প্রক্রিয়ার জটিলতায় আটকে যাচ্ছে।

ছাত্র জনতার আন্দোলনে ঢাকায় নিহত ঝিনাইদহের সাব্বির ও প্রকৌশলী রাকিব হত্যার প্রতিবাদে ,ঝিনাইদহে শনিবার তারেক রহমানের ভার্চুয়ালি সমাবেশ

একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “জমি নিয়ে ঝামেলা আমাদের এলাকায় নতুন কিছু নয়। কিন্তু এখন দেখছি লোকজন গায়ের জোরে জমি দখল করে নিচ্ছে এবং হুমকি দিচ্ছে। এ ধরনের ঘটনার জন্য প্রশাসনের উচিত আরও দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া।”

এ ধরনের জমি বিরোধের ক্ষেত্রে আইনি প্রক্রিয়ার গুরুত্ব অপরিসীম। জমির মালিকানা নিশ্চিত করার জন্য জমির দলিলপত্র, খাজনা প্রদানের রেকর্ড, এবং পূর্ববর্তী আইনি মামলার ফলাফল সবকিছুকেই গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করা উচিত। জমি নিয়ে যেকোনো দ্বন্দ্বের সমাধান আদালতের মাধ্যমে হওয়া উচিত, যাতে সকল পক্ষের ন্যায় বিচার নিশ্চিত হয়।

রফিকুল আলমের অভিযোগ অনুযায়ী, পূর্বের একটি মামলায় তিনি বিজয়ী হয়েছিলেন, কিন্তু তারপরও অভিযুক্তরা জমি দখল করেছে। এই ধরনের ঘটনা আইনি প্রক্রিয়ার প্রতি মানুষের আস্থার সংকট সৃষ্টি করতে পারে। জমি বিরোধের ক্ষেত্রে মামলার রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং আইন মেনে চলা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

এই ধরনের জমি দখল এবং গাছ কাটার ঘটনা শুধু ব্যক্তিগত ক্ষতির মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে না, এটি একটি সামাজিক সমস্যা হিসেবেও বিবেচিত হয়। কারণ এতে স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে শত্রুতা বৃদ্ধি পায় এবং সহিংসতার ঝুঁকি থাকে। জমি নিয়ে বিরোধের কারণে অনেক সময় গ্রামীণ এলাকায় সামাজিক শান্তি নষ্ট হয় এবং উভয় পক্ষের মানুষকে ভোগান্তির শিকার হতে হয়।

শলকুপায় অস্ত্র ও গুলিসহ আটক-২

বাড়ীবাথান গ্রামের এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে স্থানীয়রা আরও সচেতন হওয়ার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করছেন। জমির মালিকানা নিয়ে যে কোনো ধরনের দ্বন্দ্ব নিরসনের ক্ষেত্রে স্থানীয় প্রশাসন এবং বিচার বিভাগীয় পদক্ষেপ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাশাপাশি সমাজের সকল স্তরে আইন মেনে চলার সংস্কৃতি গড়ে তোলা জরুরি, যাতে কেউই আইন নিজের হাতে তুলে না নিতে পারে।

পুলিশের তদন্তের পর চূড়ান্ত পদক্ষেপ নির্ধারণ হবে, তবে এই ধরনের ঘটনাগুলো প্রতিরোধে আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। প্রথমত, জমি নিয়ে বিরোধের দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য স্থানীয় পর্যায়ে একটি কার্যকর এবং সহজলভ্য আইনি ব্যবস্থা থাকা উচিত। দ্বিতীয়ত, যারা জমি নিয়ে বিরোধে লিপ্ত, তাদের জন্য স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা যেতে পারে, যাতে আইনি প্রক্রিয়ার গুরুত্ব সম্পর্কে তারা সঠিকভাবে অবগত হয়।

ঝিনাইদহ চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক-কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিক্ষোভ ও মানববন্ধন

অন্যদিকে, প্রশাসনের পক্ষ থেকে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করে বিরোধ মীমাংসা করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে পরবর্তীতে এ ধরনের ঘটনা এড়ানো যায়। গ্রামীণ এলাকায় জমি নিয়ে বিরোধের কারণে সহিংসতার ঘটনা যেন না ঘটে, তা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

ঝিনাইদহের বাড়ীবাথান গ্রামে জমি দখল এবং গাছ কাটার এই ঘটনা জমি সংক্রান্ত বিরোধের এক জ্বলন্ত উদাহরণ। এখানে জমির আইনি মালিকানা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে এবং সামাজিক, আইনি এবং প্রশাসনিক পর্যায়ে নানা ধরনের পদক্ষেপের প্রয়োজনীয়তা অনুভূত হচ্ছে। ভুক্তভোগী রফিকুল আলম খালেকের দাবির ভিত্তিতে পুলিশ তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা নেবে বলে আশা করা হচ্ছে, তবে এমন ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে আরও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত জরুরি।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version