ঝিনাইদহ থেকে বিশেষ প্রতিবেদক: ঝিনাইদহ চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সহকারী পরিচালক মিলন হোসেনের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ মিছিল এবং মানববন্ধন করেছেন। বুধবার সকাল থেকে হাসপাতালের কর্মীরা একত্রিত হয়ে কর্মবিরতি পালন করে এবং হাসপাতালের সামনে থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন।

মিছিলটি শহরের প্রধান প্রধান সড়কগুলো প্রদক্ষিণ করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সেখানে এক মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়, যেখানে হাসপাতালের বিভিন্ন স্তরের কর্মকর্তা, কর্মচারী, চিকিৎসক এবং নার্সরা অংশ নেন।

যৌথ বাহিনীর অস্ত্র উদ্ধারের অভিযানে সেনাবাহিনীর তরুণ লেফটেন্যান্ট তানজিম ছারোয়ার নির্জন (২৩) নিহত

মানববন্ধনে চিকিৎসক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা সহকারী পরিচালক মিলন হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ তুলেছেন। তাদের বক্তব্য অনুযায়ী, মিলন হোসেনের বিরুদ্ধে তারা কর্তৃপক্ষকে একাধিকবার প্রমাণসহ অভিযোগ দিলেও, কোনো ধরনের কার্যকরী ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে তারা মিলন হোসেনের বহিষ্কারের দাবি জানিয়ে কর্মসূচি পালন করেন। যদি এ দাবি পূরণ না হয়, তবে তারা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতি ঘোষণা করার হুঁশিয়ারি দেন।

বক্তারা দাবি করেন, মিলন হোসেনের কার্যক্রম নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ থাকলেও, বিষয়টি বেশ কিছুদিন ধরে আরও প্রকট আকার ধারণ করেছে। তারা অভিযোগ করেন, তিনি হাসপাতালের আর্থিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থাপনায় গুরুতর দুর্নীতি এবং স্বজনপ্রীতির সঙ্গে জড়িত। হিসাব শাখা থেকে সহকারী পরিচালক পদে উন্নীত হওয়া মিলন হোসেনের বিরুদ্ধে যথেষ্ট প্রমাণসহ একাধিক অভিযোগ দেওয়ার পরও কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। ফলে, হাসপাতালের সাধারণ কর্মীরা তাঁর অপসারণের দাবি তুলে মানববন্ধনে অংশ নেন।

বেদখলে ঝিনাইদহের জিকে সেচ প্রকল্পের শত শত বিঘা জমি ও স্থাপনা

কর্মসূচিতে বক্তব্য রাখেন সিনিয়র চিকিৎসক আব্দুল হালিম, মেডিকেল অফিসার আরাফাত রহমান, খালিদ নাঈম, কানিশ ফাতেমা, জুই আক্তার, নাহিদ পারভেজ, সুবোধ রঞ্জন এবং সিনিয়র ল্যাব সহকারী টেকনিশিয়ান তরিকুল ইসলাম। তাঁদের বক্তব্যে উঠে আসে মিলন হোসেনের বিরুদ্ধে হাসপাতালের বিভিন্ন কার্যক্রমে ব্যাপক অনিয়ম, অর্থ আত্মসাৎ এবং হাসপাতালের প্রাতিষ্ঠানিক শৃঙ্খলা ভঙ্গ করার অভিযোগ।

প্রত্যক্ষদর্শী ও কর্মরত কর্মীদের দাবি অনুযায়ী, চক্ষু হাসপাতালটি দীর্ঘদিন ধরেই আর্থিক ও প্রশাসনিক সংকটের মধ্যে রয়েছে। তবে সহকারী পরিচালক পদে থাকা মিলন হোসেনের ভূমিকা নিয়ে বিশেষ করে প্রশ্ন উঠেছে গত কয়েক মাসে। কর্মীরা অভিযোগ করেন, মিলন হোসেন নিয়মিতভাবে হাসপাতালের বিভিন্ন খাতে বাজেট বরাদ্দের অপব্যবহার করছেন এবং অনিয়মের মাধ্যমে সরকারি সম্পদের অপচয় করছেন।

ঝিনাইদহে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে বিশেষ বাজেট বরাদ্দ ও মাষ্টারপ্লান তৈরী

সেসময় বক্তারা আরও অভিযোগ করেন যে, হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের সাথে নিয়মিতভাবে অসদাচরণ করা হয় এবং তাদের স্বার্থ উপেক্ষা করা হয়। বিশেষ করে হাসপাতালের দৈনন্দিন কর্মকাণ্ডে মিলন হোসেনের একক সিদ্ধান্তগ্রহণের প্রবণতা এবং কোনোরূপ যৌক্তিক সমন্বয় ছাড়াই পদক্ষেপ গ্রহণের ফলে প্রতিষ্ঠানটির কার্যক্রমে নানামুখী সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে।

কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারীরা জানান, মিলন হোসেনের কার্যকলাপ শুধু হাসপাতালের শৃঙ্খলা বিঘ্নিত করছে না, বরং এর ফলে হাসপাতালের সেবা কার্যক্রমও মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। তাঁরা মনে করেন, এ ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি চলতে থাকলে, রোগী সেবার মান কমে যাবে এবং সাধারণ মানুষের ভোগান্তি আরও বাড়বে। তাঁদের দাবি, দ্রুততার সাথে মিলন হোসেনকে তার পদ থেকে অপসারণ করা হোক এবং তার বিরুদ্ধে কঠোর প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।

ঝিনাইদহে মিনি ট্রাকের পিছনে বড় ট্রাকের ধাক্কায় নিহত-২, আহত-১

সিনিয়র চিকিৎসক আব্দুল হালিম বলেন, “মিলন হোসেনের দুর্নীতি এবং অব্যবস্থাপনার কারণে আমরা প্রতিদিনের কার্যক্রমে বাধাগ্রস্ত হচ্ছি। আমরা এ বিষয়ে একাধিকবার অভিযোগ করলেও কোনো পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তাই আজ আমরা বিক্ষোভ করতে বাধ্য হয়েছি।”

মেডিকেল অফিসার আরাফাত রহমানও মিলন হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন, “তিনি (মিলন হোসেন) আমাদের হাসপাতালের কার্যক্রমের উপর একচ্ছত্র ক্ষমতা প্রয়োগ করছেন এবং তাঁর সিদ্ধান্তগুলো সম্পূর্ণভাবে হাসপাতালের স্বার্থের বিপক্ষে যাচ্ছে।”

বিক্ষোভ এবং মানববন্ধন কর্মসূচি শেষে অংশগ্রহণকারীরা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে একটি স্মারকলিপি জমা দেন। তারা দাবি করেন, তাদের অভিযোগগুলি যথাযথভাবে খতিয়ে দেখা হবে এবং দ্রুত মিলন হোসেনকে অপসারণ করা হবে। জেলা প্রশাসন থেকে নিশ্চিত করা হয়েছে যে, এ বিষয়ে শিগগিরই একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং মিলন হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর সঠিক তদন্ত করা হবে।

কর্মসূচির নেতৃত্বদানকারী সিনিয়র চিকিৎসকরা বলেন, “আমরা চাই, এই দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার দ্রুত অপসারণ হোক। যদি আমাদের দাবির বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া না হয়, তবে আমরা অনির্দিষ্টকালের জন্য কর্মবিরতির সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হব।” তাঁদের বক্তব্য অনুযায়ী, তারা এ আন্দোলনকে আরও বড় পরিসরে ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন, যাতে পুরো জেলার স্বাস্থ্যসেবার সাথে জড়িত কর্মীরা একত্রিত হতে পারেন এবং তাদের দাবির পক্ষে অবস্থান নিতে পারেন।

ঢাকার মেট্রোরেল ভাড়ার তুলনামূলক বিশ্লেষণ: আঞ্চলিক ও আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট

এ ধরনের পরিস্থিতিতে স্থানীয় জনগণও ক্ষোভ প্রকাশ করেছে। সাধারণ মানুষের অভিযোগ, চক্ষু হাসপাতালটি এলাকার অন্যতম প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র, যেখানে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী চিকিৎসা নিতে আসে। কিন্তু হাসপাতালের প্রশাসনিক ও আর্থিক সংকটের কারণে রোগীদের ভোগান্তি বাড়ছে। বিশেষ করে, মিলন হোসেনের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে এলাকায় ব্যাপক আলোচনা চলছে।

কিছু রোগীর অভিভাবক ও স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, হাসপাতালে ওষুধ এবং অন্যান্য প্রয়োজনীয় সরঞ্জামের সংকট চলছে, যার ফলে রোগীরা প্রয়োজনীয় সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। তারা আশা প্রকাশ করেছেন যে, এই আন্দোলনের মাধ্যমে হাসপাতালের প্রশাসনিক দুর্নীতি দূর হবে এবং রোগী সেবার মান পুনরুদ্ধার হবে।

ঝিনাইদহ চক্ষু হাসপাতালে সহকারী পরিচালক মিলন হোসেনের বিরুদ্ধে এই বিক্ষোভ ও মানববন্ধন কর্মসূচি হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ সংকট এবং প্রশাসনিক দুর্নীতির বিরুদ্ধে কর্মীদের প্রতিবাদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ। হাসপাতালের চিকিৎসক, কর্মকর্তা এবং কর্মচারীরা একযোগে এই কর্মসূচি পালন করে তাদের অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। এখন দেখার বিষয়, কর্তৃপক্ষ কী ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করে এবং মিলন হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগের তদন্ত কতদূর এগোয়।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version