ঝিনাইদহে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার দুপুরে ঝিনাইদহ পৌরসভা সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একটি আলোচনা সভায় অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে শরীরচর্চা এবং কায়িক পরিশ্রম নিশ্চিত করার লক্ষ্যে খেলার মাঠ, পার্ক, ও উন্মুক্ত স্থানের বাজেট বরাদ্দ এবং গাইডলাইন নিয়ে আলোচনা করা হয়। সভার মূল উদ্দেশ্য ছিল কিভাবে ঝিনাইদহ পৌরসভা এলাকায় স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত করা যায় এবং জনসাধারণকে শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার জন্য পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা দেওয়া যায়।

ঝিনাইদহে মিনি ট্রাকের পিছনে বড় ট্রাকের ধাক্কায় নিহত-২, আহত-১

সভাটি আয়োজন করা হয়েছিল ‘সিএলপিএ’-এর সহযোগিতায় এবং পদ্মাসমাজ কল্যাণ সংস্থা ও সি.নেট-এর বাস্তবায়নে। সভাপতিত্ব করেন ঝিনাইদহ পৌরসভার প্যানেল মেয়র সাইফুল ইসলাম মধু। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাহী কর্মকর্তা মো: মুস্তাক আহম্মেদ এবং সমাজ উন্নয়ন কর্মকর্তা মো: বদরউদ্দিন। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন পৌরসভার অন্যান্য কর্মকর্তাবৃন্দ ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা।

সভায় মানবাধিকার কর্মী ও অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আমিনুর রমান টুকু, স্থপতি ও শিক্ষক হাসিবুল কবির, প্রকৃতি ও জীবন ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক গাউস গোর্কি, নোবেল পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের শিক্ষক নাজমুল আলম রিগানসহ বেশ কয়েকজন প্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন। এডভোকেসি সভায় বক্তৃতা দেন দৈনিক বণিক বার্তা ও এসএসটিভির জেলা প্রতিনিধি ফয়সাল আহমেদ, দৈনিক রানার পত্রিকার প্রতিনিধি বসির আহাম্মেদ এবং ঝিনাইদহ পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী মুন্সী মো: আবুজাফরসহ আরো অনেকে।

ঢাকার মেট্রোরেল ভাড়ার তুলনামূলক বিশ্লেষণ: আঞ্চলিক ও আর্থসামাজিক প্রেক্ষাপট

সভায় উপস্থিত বক্তারা শরীরচর্চা ও শারীরিক পরিশ্রমকে উৎসাহিত করতে ঝিনাইদহ পৌর এলাকায় নতুন বাজেট বরাদ্দের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোকপাত করেন। এক্ষেত্রে উন্মুক্ত স্থানগুলোকে জনগণের জন্য ব্যবহার উপযোগী করার প্রস্তাব উঠে আসে। বিশেষ করে ঝিনাইদহ স্টেডিয়ামের পুকুরকে সাঁতার উপযোগী করে গড়ে তোলা এবং ওয়াজির আলী স্কুল এন্ড কলেজ মাঠে হাঁটার ব্যবস্থা তৈরির পরিকল্পনা করা হয়। এছাড়াও কলাবাগান রোড থেকে শুরু করে নদীর পাড় পর্যন্ত হাঁটার পরিবেশ নিশ্চিত করার বিষয়টি আলোচনা হয়। এই পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের জন্য পৌরসভার পক্ষ থেকে বাজেট বরাদ্দ এবং ভবিষ্যতে একটি মাষ্টারপ্লান তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

বিশেষভাবে আলোচনায় আসে শহরের বিভিন্ন অংশে খেলার মাঠ ও পার্কের উন্নয়ন। বক্তারা উল্লেখ করেন যে, বর্তমানের দ্রুত নগরায়নের ফলে প্রাকৃতিক উন্মুক্ত স্থানগুলো কমে যাচ্ছে, যা শিশু, কিশোর এবং সাধারণ জনগণের শারীরিক সক্রিয়তার পথে একটি বড় বাধা। শহরের উন্মুক্ত স্থানগুলো উন্নয়নের মাধ্যমে সকল বয়সের মানুষকে শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার সুযোগ দেওয়া সম্ভব।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রসংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের কমিটি প্রকাশ্যে

এছাড়াও সভায় ঝিনাইদহের বিভিন্ন বিদ্যালয়ে শারীরিক শিক্ষার উপর গুরুত্বারোপ করার কথাও উঠে আসে। বিদ্যালয়ের ছাত্রছাত্রীদের শরীরচর্চার সাথে সম্পৃক্ত করার মাধ্যমে তাদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে গুরুত্ব দেওয়া হয়। বিশেষ করে খেলাধুলা, সাঁতার এবং নিয়মিত হাঁটাচলা করার জন্য পরিবেশ তৈরি করার বিষয়টি সকলের সম্মতি অর্জন করে।

বক্তারা ঝিনাইদহ পৌরসভায় একটি সুদূরপ্রসারী মাষ্টারপ্লান প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন। শহরের পরিবেশকে স্বাস্থ্যকর ও বাসযোগ্য করার জন্য একটি সমন্বিত পরিকল্পনার আওতায় নতুন স্থাপনা নির্মাণ, পুরনো স্থাপনার সংস্কার এবং খোলা স্থানের উন্নয়ন করা জরুরি। এই মাষ্টারপ্লানের মাধ্যমে দীর্ঘমেয়াদী ভিত্তিতে শহরের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ তৈরি করা সম্ভব হবে, যা নাগরিকদের সুস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

ঝিনাইদহে সংখ্যালঘু পরিবারের জমি দখল করে খেলার মাঠ বানানোর অভিযোগ

মাষ্টারপ্লানটি প্রণয়ন করার সময় ঝিনাইদহের প্রাকৃতিক সম্পদ, উন্মুক্ত স্থান এবং শহরের অন্যান্য অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়গুলোকে বিবেচনায় নিয়ে পরিকল্পনা তৈরি করা হবে। এটি বাস্তবায়িত হলে, শহরের নাগরিকরা শুধু তাদের শারীরিক স্বাস্থ্যের জন্য নয়, মানসিক স্বাস্থ্যের জন্যও উপকার পাবেন।

 

বক্তারা উল্লেখ করেন, এই উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজন পর্যাপ্ত অর্থ বরাদ্দ এবং সম্পদের সুষম বণ্টন। শুধু বাজেট বরাদ্দ করাই নয়, বরাদ্দকৃত অর্থের যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিত করতে যথাযথ পরিকল্পনা এবং সমন্বয় প্রয়োজন। একই সঙ্গে স্থানীয় সরকার, বেসরকারি সংস্থা এবং সুশীল সমাজের সমন্বিত প্রচেষ্টা ছাড়া এই ধরনের প্রকল্প সফলভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না।

এই উদ্যোগগুলোকে বাস্তবে রূপ দিতে হলে, স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ে রাজনৈতিক ইচ্ছা এবং নাগরিক অংশগ্রহণের সমন্বয় খুবই জরুরি। বাজেট বরাদ্দের পাশাপাশি এর সঠিক ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে ঝিনাইদহে অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধের লক্ষ্যে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি অর্জন করা সম্ভব।

সভায় বক্তারা আরও আলোচনা করেন যে, জনসাধারণের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য প্রচারাভিযান চালানো উচিত। শারীরিক সক্রিয়তার প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে সাধারণ মানুষকে আরও ভালোভাবে জানানো এবং তাদেরকে উদ্বুদ্ধ করার জন্য ব্যাপক প্রচারণা চালানো প্রয়োজন।

মহেশপুর সীমান্ত থেকে ৩ রোহিঙ্গাসহ ১০ জন আটক

শহরের বিভিন্ন অংশে স্বাস্থ্যকর অবকাঠামো তৈরি করার মাধ্যমে জনসাধারণকে শারীরিকভাবে সক্রিয় থাকার পরিবেশ দিতে হবে। একই সাথে স্কুল পর্যায়ে নিয়মিত শারীরিক শিক্ষার কার্যক্রম চালু রাখা, এবং পারিবারিক পর্যায়ে শারীরিক সচেতনতার অভ্যাস গড়ে তোলার জন্যও আহ্বান জানানো হয়।

ঝিনাইদহ পৌরসভায় অসংক্রামক রোগ প্রতিরোধে শরীরচর্চা ও কায়িক পরিশ্রম নিশ্চিতে গৃহীত এই উদ্যোগগুলো শহরের সাধারণ মানুষের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে সহায়ক হবে। বাজেট বরাদ্দ ও মাষ্টারপ্লান প্রণয়নের মাধ্যমে এই উদ্যোগগুলো সফলভাবে বাস্তবায়িত হলে ঝিনাইদহের স্বাস্থ্যকর পরিবেশ নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি অসংক্রামক রোগের ঝুঁকি হ্রাস পাবে।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version