রুবেলুর রহমান ঃ পদ্মা নদীর পাড় থেকে তাকালেই দেখা যায় শুধু ধু ধু বালুরাশি। আশপাশের প্রায় ৫ কিলোমিটারের মধ্যে দেখা নাই কোন পানির চিহৃ। মনে হচ্ছে নদী তো নয়, এ যেন এক মরুপ্রান্তর। এতে তপ্ত রৌদে চিকচিক করছে বালু আর সেই বালুরাশিতে দেখা মিলছে কিছু ঘোড়ার গাড়ি ও মানুষের চলাচল।
এমনি এক জায়গার দেখা মিলেছে রাজবাড়ী পাংশার পদ্মা নদীর হাবাসপুর খেয়া ঘাটে। এই ঘাটটি জেলার পাংশার হাবাসপুর খেয়া ঘাটের পদ্মা নদীর মাধ্যমে যুক্ত হয়েছে পাবনার সুজানগর উপজেলার সাতবাড়িয়া খেয়া ঘাটে।
প্রতিদিন এই খেয়া ঘাট দিয়ে রাজবাড়ীসহ ফরিদপুর, মাগুরা, ঝিনাইদাহের কয়েকটি উপজেলার সহস্রাধিক মানুষ ও মোটর সাইকেল নদী জেগে ওঠা চরের বালুরাশি ঠেলে নৌকায় পারাপার হয়।
অল্প সময়ের জন্য হলেও চির চেনা রূপে ফিরছে দৌলতদিয়া ঘাটবালিয়াকান্দিতে ১৪০ শতাংশ জমির পেঁয়াজ ক্ষেত মই দিয়ে ১৪ লক্ষাধিক টাকার ক্ষতি সাধন
অনেকে কুষ্টিয়া লালন সেতুর বিকল্প হিসাবে এ ব্যবহার করেন। কারণ এ পথ দিয়ে চলাচলে তাদের প্রায় ১ থেকে দেড়শ কিলোমিটার পথ কম ও এক থেকে ২ ঘন্টা সময় সাশ্রয় হয়।
সরজমিনে গিয়ে দেখাযায়, পদ্মা নদীর পানি অতিরিক্ত মাত্রায় কমে যাওয়ায় যাত্রীদের পারাপারের সুবিধার্থে রাজবাড়ী পাংশার হাবাসপুর খেয়া ঘাটটি মুল স্থান থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার নিচে সরিয়ে অস্থায়ী ভাবে বসানো হয়েছে।
যেখানে যাবার নেই কোন সংযোগ সড়ক। ফলে বালুবাহি পদ্মার চরের দীর্ঘ এই পথ এলোমেলো ভাবে হেঁটে অথবা ঘোড়ার গাড়িতে চড়ে চলাচল করছেন যাত্রীরা। ঘাটে আসা-যাওয়ার এখন একমাত্র ভরসা ঘোড়ার গাড়ি। তবে অর্থাভবে অনেককে দীর্ঘ এই পথ বাধ্য হয়ে ব্যাগ-পত্র নিয়ে পায়ে হেঁটেই পারি দিচ্ছেন।
যেখানে নাই কোন গাছের ছায়া বা সুপেয়পানির ব্যবস্থা, মনে হয় যেন এ এক মরুপ্রান্তর। এছাড়া জরুরী প্রয়োজন বা রোগী আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে উভয়প্রান্তের মানুষ পড়েন বিপাকে। হাবাসপুর খেয়া ঘাটের যাত্রীদের আনা-নেওয়া ও নদী পরাপারের জন্য সকাল থেকে বিকাল পর্যন্ত ১০টি ঘোড়ার গাড়ি ও ৫টি ইঞ্জিনচালিত নৌকা চলাচল করে।
প্রতিজন যাত্রীর থেকে ঘোড়ার গাড়ি ও নৌকার ভাড়া বাবদ নেওয়া হয় ১শ টাকা । তবে সন্ধ্যার পর বন্ধ থাকে ঘোড়ার গাড়ি ও নৌকা চলাচল। সেক্ষেত্রে জরুরী প্রয়োজনে বিপাকে পড়ছেন উভয়প্রান্তের যাত্রীরা। যাত্রী জাকির বিশ্বাস, ইসমাইল হোসেন, রফিকুল ইসলাম রঞ্জু, আনসার মুসল্লি, শরিফুল সহ কয়েকজন বলেন, দুরত্ব ও সময় বাঁচাতে এই ঘাট দিয়ে তারা পারাপার হন।
কিন্তু প্রতিবছর শুষ্ক মৌসুমে এই ঘাটে তাদের প্রায় ৬ থেকে ৭ মাস এই ভোগান্তি পোহাতে হয় এবং জরুরী প্রয়োজন বা রোগী আনা-নেওয়ায় খুব কষ্ট হয়। সময়ের যাওয়া সময়ে যেতে পারেন না। চরের বালুতে হাঁটা বা মোটর সাইকেল নিয়ে যাওয়া খুবই কষ্টকর। বালু গরম হয়ে পায়ে ফোসকা পড়ে যায় ও মোটর সাইকেল একদিক থেকে অন্যদিকে চলে যায়।
তাছাড়া নিজেদের শরীরসহ কাপড়-চোপড় নোংড়া হয়। ৫ কিলোমিটার এই পথ রৌদের হাঁটা যায় না। তারপর কোথাউ একটু ছায়া বা পানি পানের ব্যবস্থা নাই। টাকা থাকলে ঘোড়ার গাড়িতে উঠছেন আর টাকা না থাকলে পাঁয়ে হেটেই ঘাটে আসা-করছেন। উচু-নিচু এই দীর্ঘ পথ ঘোড়ার গাড়িতে চরে শরীর ও কোমড় ব্যাথা হওয় যায়।
রাজবাড়ী জেলা প্রশাসন ও শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে বইমেলা ও লোক সাংস্কৃতিক উৎসব শুরু
বিশেষ করে শিশু বাচ্চা ও বৃদ্ধাদের খুবই কষ্ট হয়। ফলে তাদের সবার চলাচলের সুবিধার্থে মুল ঘাট থেকে অস্থায়ী ঘাট পর্যন্ত ইটের সোলিং করে রাস্তা তৈরি অথবা চরের ভেতর দিয়ে নালা কেটে মুল ঘাট পর্যন্ত নৌকা চলাচলের ব্যবস্থা করতে সরকারকে অনুরোধ জানান। ঘোড়ার গাড়ির চালক নবী, মফিজ মন্ডল বলেন, এখানে ঘোড়ার গাড়ি ছাড়া চলাচল করা খুবই কষ্টকর।
সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বালুর ওপর দিয়ে ৪ থেকে ৫ বার যাত্রীদের নিয়ে ঘোড়ার সাথে আসা-যাওয়া করেন। এতে যেমন ঘোড়ার কষ্ট হয়, তেমনি তাদেরও কষ্ট হয়। ঘোড়ার গাড়ি না থাকলে মানুষের যে কি কষ্ট হবে তা বলে বুঝাতে পারবেন না। তবে সন্ধ্যার পর যাত্রী পারাপার বন্ধ থাকে।
একজন মারা গেলেও যেতে পারেন না। পরের দিন যেতে হয়। মুল ঘাট থেকে অস্খায়ী ঘাটের দুরত্ব প্রায় ৪ থেকে ৫ কিলোমিটার হবে। পুরো পথই বালু। গাড়িতে প্রতিজন যাত্রীর থেকে ৪০ থেকে ৫০ টাকা করে ভাড়া নেন। হাবাসপুর খেয়া ঘাট ইজারাদার পরশ বলেন, সকাল ৭ থেকে বিকাল সাড়ে ৫টা পর্যন্ত নৌকা চলে।
এরপর তেমন কোন যাত্রী থাকে না। যার কারণে তারা নৌকা বন্ধ রাখেন। জরুরী প্রয়োজনে যদি কেউ আসে তাহলে আলোচনার মাধ্যমে পার করেন। যাত্রীরা তাদের সামর্থ অনুযায়ী কেউ হেঁটে আবার কেউ ঘোড়ার গাড়িতে চরে ঘাটে আসে। এখানে যাত্রীদের বসার জন্য একটি পাঠকাঠির ঘর তুলে দিয়েছেন।
৫টি নৌকা ১ ঘন্টা পর পর ছেড়ে যায় ও আসে। পাংশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ জাফর সাদিক চৌধুরী বলেন, এ বিষয়টি তাদের নজরে এসেছে। বিশেষ করে শুষ্ক মৌসুমে যাত্রীর সমস্যা বেশি হয়। দ্রুত সময়ে মধ্যে সরজমিনে তদন্ত করে যাত্রী ছাউনি, সুপেয় পানির ব্যবস্থাসহ যাত্রীদের চলাচল সহজ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন।