ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডাকবাংলা এলাকায় সংঘটিত একটি হামলার ঘটনায় পুলিশের দুই কর্মকর্তার ভিন্নধর্মী তদন্ত প্রতিবেদন নিয়ে ব্যাপক বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনাটি নিয়ে দুই ভুক্তভোগী পৃথক মামলা দায়ের করেন, এবং সেই মামলার তদন্তের দায়িত্ব পড়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তার উপর। কিন্তু এক কর্মকর্তার প্রতিবেদন অনুযায়ী কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি, অন্যদিকে দ্বিতীয় কর্মকর্তার তদন্তে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় তদন্তে দুর্নীতি এবং অনৈতিক সুবিধা নেওয়ার অভিযোগ ওঠায় পুরো বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ঝিনাইদহে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নারীসহ ৩ জনের মৃত্যু

২০২৪ সালের ২ জানুয়ারি ঝিনাইদহ সদর উপজেলার ডাকবাংলা বাজারের কাজী সড়কে মৃত তাহাজ উদ্দিনের ছেলে কাজী ফারুক এবং তার ছোট বোন কাজী শাহানাজের উপর হামলা চালায় স্থানীয় কয়েকজন সন্ত্রাসী। তাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলেন আব্দুল বারী, আবুল কালাম ওরফে বাবুল মাস্তান, মোমিন ড্রাইভার, সালাম, কাজী মালেক, কাজী পিলু, কাজী বিশারত এবং কাজী সিরাজ। হামলাকারীরা কাজী ফারুক ও কাজী শাহানাজকে পিটিয়ে গুরুতর আহত করে, পাশাপাশি তাদের বাড়ি থেকে মূল্যবান মালামাল, কাগজপত্র, মোবাইল, ল্যাপটপ, নগদ টাকা এবং স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়।

জাতির উদ্দেশে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ভাষণ: আইন হাতে তুলে না নেওয়ার আহ্বান

হামলার পর কাজী ফারুক ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে চিকিৎসা নেন এবং চোখে গুরুতর আঘাতের কারণে ৭ জানুয়ারি ঝিনাইদহ চক্ষু হাসপাতালে ভর্তি হন। ঘটনার পরপরই কাজী ফারুক ও তার বোন আদালতে মামলা দায়ের করেন।

এ ঘটনায় কাজী ফারুকের মামলার তদন্তের দায়িত্ব পায় ডাকবাংলা পুলিশ ক্যাম্পের এস আই সোহাগ হোসেন, এবং তার বোন কাজী শাহানাজের মামলার দায়িত্বে ছিলেন ঝিনাইদহ সদর থানার এস আই সামিম হোসেন। কিন্তু মামলার তদন্ত শেষে দুজনের প্রতিবেদন একেবারেই ভিন্ন ছিল।

এস আই সোহাগ হোসেন তার প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন যে, ৪ জানুয়ারিতে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি। তিনি আরো দাবি করেন যে, তিনি সেদিন কাজী ফারুকের বাড়িতে গিয়ে তাদের জমি সংক্রান্ত সমস্যা সমাধানের পরামর্শ দিয়েছিলেন। অন্যদিকে, এস আই সামিম হোসেন তার তদন্তে ঘটনার সত্যতা পেয়েছেন এবং সেই অনুযায়ী প্রতিবেদন জমা দিয়েছেন।

সাবেক স্বৈরাচার শেখ হাসিনার জ্বালানি উপদেষ্টা তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী সহ আর ও দুই নেতা গ্রেপ্তারের

ভুক্তভোগী কাজী ফারুকের অভিযোগ, এস আই সোহাগ আসামীদের কাছ থেকে মোটা অংকের অর্থ নিয়ে মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, ৪ জানুয়ারি তিনি ও তার বোন ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি ছিলেন এবং তাদের হাসপাতালে ভর্তির প্রমাণপত্রও তার কাছে রয়েছে। কাজী ফারুক বলেন, “এস আই সোহাগ আসামীদের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে আমার মামলার মিথ্যা প্রতিবেদন দিয়েছেন। তিনি তদন্তে উল্লেখ করেছেন যে, ৪ তারিখে কোনো হামলার ঘটনা ঘটেনি, অথচ আমি এবং আমার বোন সেদিন হাসপাতালে ছিলাম। এই দুর্নীতিবাজ পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আমি ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।”

অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তা এস আই সোহাগ হোসেনের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও তার মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে তার পক্ষ থেকে কোনো প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি।

ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি শাহীন উদ্দিন বলেন, “দুটি মামলার তদন্ত দুটি আলাদা কর্মকর্তা করেছেন। তারা যে যা পেয়েছেন, সেটাই রিপোর্টে উল্লেখ করেছেন। তদন্তের বিষয়টি সুষ্ঠুভাবে পরীক্ষা করে দেখা হবে এবং প্রয়োজনে পুনরায় তদন্তের ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।”

এই ঘটনার তদন্তে দুজন পুলিশ কর্মকর্তার ভিন্নধর্মী প্রতিবেদন বিচার প্রক্রিয়ার প্রতি জনগণের আস্থা নষ্ট করতে পারে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে এ ধরনের অসঙ্গতি দুর্নীতি এবং অনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রমাণ বলে অনেকে মনে করছেন। বিশেষ করে, একটি মামলায় দুই পুলিশ কর্মকর্তা ভিন্নধর্মী প্রতিবেদন দিলে বিষয়টি আরও জটিল আকার ধারণ করে। ভুক্তভোগী পরিবারও এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের বিষয়ে সন্দিহান হয়ে পড়েছে।

ফ্যাসিবাদী শক্তিকে মদদ ও দুর্নীতির অভিযোগ: ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক রেজাউল ইসলামের পদত্যাগ

বাংলাদেশে বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, মিথ্যা মামলা এবং দুর্নীতির ঘটনা নিয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। বিচার ব্যবস্থা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযোগের মাত্রা বেড়েই চলেছে। বিশেষ করে, গ্রামীণ এলাকায় এ ধরনের ঘটনা বেশি ঘটে থাকে, যেখানে প্রভাবশালী মহল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে প্রভাবিত করে।

এ ধরনের ঘটনা দেশের বিচার ব্যবস্থার প্রতি আস্থার সংকট তৈরি করে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর জনগণের নির্ভরশীলতা কমে গেলে সুষ্ঠু বিচার পাওয়া দুরূহ হয়ে পড়ে। সঠিক তদন্তের অভাব এবং দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তাদের কারণে অনেক ভুক্তভোগী ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত হন।

এই মামলায় সুষ্ঠু বিচারের জন্য আইনগত পদক্ষেপ গ্রহণ করা জরুরি। ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি সঠিক কিনা, তা যাচাই করতে পুনঃতদন্তের প্রয়োজন। এছাড়া, অভিযুক্ত পুলিশ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তদন্ত পরিচালনা এবং তাদের কর্মকাণ্ডের স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপর যথাযথ তদারকি প্রয়োজন।

এ ধরনের ঘটনায় মানবাধিকার সংগঠনগুলোও উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা দাবী করছে যে, বিচার প্রক্রিয়ায় এ ধরনের দুর্নীতির ঘটনা বিচারব্যবস্থার স্বচ্ছতা ও বিশ্বাসযোগ্যতা নষ্ট করে। মানবাধিকার সংগঠনগুলো এ ধরনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানাচ্ছে এবং এর বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছে।

সাবেক পুলিশ সুপার আলতাফের বিরুদ্ধে ৫টি হত্যা মামলা

ঝিনাইদহের ডাকবাংলা এলাকায় একই ঘটনায় পুলিশের দুই ভিন্নধর্মী প্রতিবেদনের ঘটনা দেশে বিচারব্যবস্থার প্রতি জনগণের আস্থার সংকট তৈরি করেছে। দুর্নীতিগ্রস্ত তদন্ত এবং মিথ্যা প্রতিবেদন দেওয়ার অভিযোগ দেশের আইনি ব্যবস্থার প্রতি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। এই ঘটনায় সঠিক বিচার এবং দোষীদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়া হলে তা ভবিষ্যতে আরও বড় আকার ধারণ করতে পারে।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version