শেখ হাসিনার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী এবং সাবেক পিয়ন জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে অনুসন্ধান শুরু করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। জাহাঙ্গীর আলম, যিনি একসময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বাসভবন সুধা সদনে পিয়ন হিসেবে কর্মরত ছিলেন, এখন ৪০০ কোটি টাকার সম্পদের মালিক হিসেবে পরিচিত। এই ঘটনায় তার বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হওয়া এবং সম্পদের উৎস খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে ৭৫ লাখ টাকা ও ৭০ ভরি সোনা লুট, মামলা

জাহাঙ্গীর আলমের গল্পটি বেশ অস্বাভাবিক। তিনি একসময় শেখ হাসিনার বাসায় পানি পরিবেশনের দায়িত্বে ছিলেন এবং সেখান থেকে পরিচিত হন “পানি জাহাঙ্গীর” নামে। শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী হওয়ার পর তিনি নিজেকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত সহকারী হিসেবে পরিচয় দিতে শুরু করেন এবং এই পরিচয় কাজে লাগিয়ে ক্ষমতা এবং প্রভাব বিস্তার করতে থাকেন। বিভিন্ন পদ, চাকরি, এবং বদলি-বাণিজ্যের মাধ্যমে তিনি বিশাল সম্পদ অর্জন করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

জাহাঙ্গীরের ক্ষমতার এই অপব্যবহার এবং সম্পদ বৃদ্ধির ঘটনা বিশেষভাবে আলোচিত হয় যখন শেখ হাসিনা নিজেই একটি বক্তব্যে তার সাবেক কর্মচারীর এই অস্বাভাবিক ধনী হওয়ার ঘটনা উল্লেখ করেন। তিনি বলেছিলেন, ‘আমার বাসায় কাজ করেছে, পিয়ন ছিল সে, এখন ৪০০ কোটি টাকার মালিক। হেলিকপ্টার ছাড়া চলে না। কী করে বানাল এত টাকা? জানতে পেরেছি, পরেই ব্যবস্থা নিয়েছি।’

সিআইডি এখন জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, জাহাঙ্গীর আলমের স্ত্রী কামরুন নাহারের নামে রয়েছে ৭ কোটি ৩০ লাখ টাকার সম্পদ। এর মধ্যে রয়েছে ঢাকার ধানমন্ডিতে একটি ফ্ল্যাট, একটি গাড়ি, এবং বিভিন্ন ব্যবসায় ৭৩ লাখ টাকার বিনিয়োগ। জাহাঙ্গীরের নিজের নামে রয়েছে ৪ কোটি টাকার কৃষিজমি এবং অকৃষিজমি, দুটি দোকান, একটি সাততলা ভবন, এবং দুটি ফ্ল্যাট। গ্রামে রয়েছে চারতলা বাড়ি, এবং মাইজদী শহরের একটি আটতলা ভবন, যার ১৮টি ফ্ল্যাট ভাড়া দেওয়া আছে।

৬ষ্ট গ্রেডের কর্মকর্তার কোটি কোটি টাকার সম্পত্তি ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

অস্থাবর সম্পদের মধ্যে নগদ ও ব্যাংক মিলিয়ে জাহাঙ্গীরের নামে ২ কোটি ৫২ লাখ ২ হাজার ৪৩০ টাকা এবং তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবের স্থিতি ২৭ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫৫ টাকা। এছাড়া, ডিপিএস এবং এফডিআর মিলিয়ে জাহাঙ্গীর ও তার স্ত্রীর নামে রয়েছে প্রায় ৩ কোটি টাকা।

সিআইডি আরও জানিয়েছে, জাহাঙ্গীর আলম এ কে রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানির মালিক এবং তার বিরুদ্ধে হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করার অভিযোগও উঠেছে। তার বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রে অর্থ পাচারের বিষয়ে তদন্ত চলছে এবং এর সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করার কাজ চলছে।

জাহাঙ্গীর আলমের এই সম্পদের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি এবং ক্ষমতার অপব্যবহার নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে বেশ আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে যখন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এই বিষয়টি উত্থাপন করেছেন, তখন এটি আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।

অনেকেই মনে করছেন, জাহাঙ্গীর আলম তার প্রভাব খাটিয়ে ক্ষমতা এবং অর্থের অপব্যবহার করেছেন, যা দেশের সাধারণ জনগণের জন্য উদ্বেগের বিষয়। একইসঙ্গে, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ে এই ধরনের ঘটনা রাজনৈতিক দলটির সুনামকে ক্ষুণ্ণ করেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

জাহাঙ্গীর আলমের সম্পদ এবং প্রভাবের বিষয়ে একাধিক গণমাধ্যমেও রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে তার অবৈধ সম্পদ অর্জন এবং অর্থ পাচারের নানা দিক তুলে ধরা হয়েছে। এই ঘটনাটি কেবল জাহাঙ্গীর আলমের ব্যক্তিগত অপরাধ নয়, বরং এটি দেশে দুর্নীতির ব্যাপক বিস্তারের একটি উদাহরণ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

শেখ হাসিনা সরকার দুর্নীতির বিরুদ্ধে সবসময় কঠোর অবস্থানে থাকার অঙ্গীকার করেছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেই দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের দৃঢ় অবস্থানের কথা বারবার উল্লেখ করেছেন। জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু হওয়ার ঘটনায় দেখা যাচ্ছে যে, সরকার দুর্নীতির বিষয়ে কোনো ছাড় দিতে প্রস্তুত নয়, এমনকি যদি অভিযুক্ত ব্যক্তি সরকারের কাছের কেউও হয়ে থাকে।

ঝিনাইদহ পৌরসভার প্রশাসনিক কর্মকর্তার সম্পদের পাহাড়: ক্ষমতার অপব্যবহার ও দুর্নীতির অভিযোগে অভিযুক্ত আসাদুজ্জামান চাঁদ

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ এবং আইনি ব্যবস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং প্রভাবশালী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে মামলা করা এবং তাদের বিচার নিশ্চিত করা।

জাহাঙ্গীর আলমের সম্পদের বিষয়ে সরকার যে কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে বিবেচিত হচ্ছে। তবে, অনেকেই মনে করছেন যে, এই ধরনের পদক্ষেপ আরও ব্যাপক এবং কঠোরভাবে নিতে হবে, যাতে দেশের সকল স্তরে দুর্নীতি দমনে কার্যকর ফলাফল পাওয়া যায়।

সিআইডি সূত্র আরও জানায়, বিভিন্ন মাধ্যমে তারা জানতে পেরেছে, জাহাঙ্গীরের স্ত্রী কামরুন নাহারের নামে রয়েছে ৭ কোটি ৩০ লাখ টাকার সম্পদ। যার মধ্যে ধানমন্ডিতে ২ হাজার ৩৬০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট, ১টি গাড়ি, বিভিন্ন ব্যবসায় ৭৩ লাখ টাকা বিনিয়োগ। তাঁর ব্যাংক হিসাব নম্বরে ১ কোটি ১৭ লাখ টাকা জমা থাকার তথ্য পাওয়া গেছে। এ ছাড়া জাহাঙ্গীরের নিজের নামে তাঁর এলাকায় ৪ কোটি টাকার কৃষি ও অকৃষিজমিদ; রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও নিউমার্কেটে দুটি দোকান; মিরপুরে সাততলা ভবন ও দুটি ফ্ল্যাট; গ্রামের বাড়িতে একতলা ভবন এবং চাটখিলে চারতলা বাড়ি রয়েছে। নোয়াখালীর মাইজদী শহরের হরিনারায়ণপুর এলাকায় তাঁর পরিবারের একটি আটতলা বাড়ি রয়েছে; যার ১৯টি ফ্ল্যাটের মধ্যে ১৮টি ভাড়া দেওয়া আছে।

ঝিনাইদহের আব্দুর রউফ কলেজের এডহক কমিটির সভাপতি এ্যাড.মুন্সী কামাল আজাদ পান্নু

সিআইডি বলছে, অস্থাবর সম্পদ হিসেবে জাহাঙ্গীরের নগদ ও ব্যাংক মিলিয়ে ২ কোটি ৫২ লাখ ২ হাজার ৪৩০ টাকা, ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকার ডিপিএস, এফডিআর ১ কোটি ৩০ লাখ ৫৫ হাজার ৯৬৮ টাকা; তাঁর স্ত্রীর ব্যাংক হিসাবের স্থিতি ২৭ লাখ ৯৭ হাজার ৪৫৫ টাকা, ডিপিএস ১৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং অংশীদারি ফার্মে ৬ কোটি ২৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকার বিনিয়োগ আছে বলে তথ্য পাওয়া যায়। এ ছাড়া জাহাঙ্গীর আলম এ কে রিয়েল এস্টেট লিমিটেড নামে একটি ডেভেলপার কোম্পানির মালিক ও হুন্ডির মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে পাচার করেছেন বলে জানতে পেরেছে সিআইডি।

জাহাঙ্গীর আলমের সম্পদ বৃদ্ধির এই ঘটনা দেশের সাধারণ মানুষের মধ্যে অসন্তোষ এবং ক্ষোভ সৃষ্টি করেছে। এ ধরনের ঘটনা সমাজে অসাম্য ও অবিচারের প্রতীক হিসেবে দাঁড়ায়। সাধারণ মানুষ যখন তাদের দৈনন্দিন জীবনে নানা সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে, তখন ক্ষমতাসীনদের মধ্যে কেউ কেউ দুর্নীতি করে বিপুল সম্পদ অর্জন করছেন, যা দেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নতির পথে বাধা সৃষ্টি করছে।

এ ধরনের দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকাণ্ড দেশের উন্নয়নপ্রক্রিয়াকে ক্ষতিগ্রস্ত করে এবং সমাজে ন্যায়বিচারের ধারণাকে দুর্বল করে। একই সঙ্গে, সাধারণ জনগণের মধ্যে সরকারের ওপর আস্থা কমে যেতে পারে। দুর্নীতি মুক্ত সমাজ গঠনের জন্য সরকারকে এমন পদক্ষেপ নিতে হবে, যা দীর্ঘমেয়াদী এবং কার্যকর ফলাফল প্রদান করবে।

শৈলকুপায় চাঁদাবাজির অভিযোগে ছাত্রদল নেতা আটক

শেখ হাসিনার সাবেক ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং এবং অবৈধ সম্পদ অর্জনের তদন্ত শুরু হওয়ার ঘটনাটি একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এ ঘটনায় দুর্নীতির বিরুদ্ধে সরকারের দৃঢ় অবস্থান প্রতিফলিত হচ্ছে। তবে, দেশে আরও ব্যাপক এবং দীর্ঘমেয়াদী দুর্নীতিবিরোধী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন, যাতে দেশের প্রতিটি স্তরে দুর্নীতির শিকড় নির্মূল করা যায়।

এমন দুর্নীতি কেবলমাত্র দেশের অর্থনীতির ক্ষতি করে না, বরং সামাজিক অস্থিরতারও কারণ হয়ে দাঁড়ায়। জনগণের মধ্যে ন্যায়বিচার এবং সুশাসনের ধারণা শক্তিশালী করার জন্য এ ধরনের দুর্নীতিবিরোধী কার্যক্রম অব্যাহত রাখা প্রয়োজন।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version