নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলার খাদুন এলাকায় গাজী টায়ার্স কারখানায় লুটপাট এবং সংঘর্ষের ঘটনা সাম্প্রতিক সময়ের একটি আলোচিত ঘটনা। সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীর গ্রেপ্তারের খবর মাইকে প্রচারের পর এই ঘটনা ঘটে, যা কারখানায় লুটপাট এবং পরবর্তীতে সংঘর্ষের রূপ নেয়। এই সংঘর্ষে যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নেতাদের সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে জানা গেছে ।

বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নিয়ে বিএনপির অবস্থান

২৪ আগস্ট, শনিবার রাতে রাজধানীর শান্তিনগর এলাকা থেকে গাজী টায়ার্স কারখানার মালিক ও সাবেক সংসদ সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীকে গ্রেপ্তার করা হয়। পরদিন, ২৫ আগস্ট রবিবার সকাল থেকেই খাদুন এলাকার রাজনৈতিক এবং স্থানীয় লোকজন কারখানায় আসতে শুরু করেন। গোলাম দস্তগীরের গ্রেপ্তারের খবর মসজিদের মাইকে প্রচার করা হয়, যার পরপরই লোকজন কারখানার দিকে ছুটে আসে। এই ঘোষণার পর থেকেই কারখানায় উত্তেজনার সৃষ্টি হয় এবং একপর্যায়ে লুটপাট শুরু হয়।

সংঘর্ষে যুবলীগ এবং ছাত্রলীগের দুই পক্ষের নেতাদের সম্পৃক্ততা

লুটপাটের এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ বাধে। এই সংঘর্ষে শহিদুল ইসলাম ও রবিন হোসাইন ওরফে রাফির নেতৃত্বে দুইটি দল মুখোমুখি হয়। শহিদুল ইসলাম তারাব পৌরসভার যুবলীগের নেতা হিসেবে পরিচিত এবং রবিন হোসাইন তারাব পৌর ছাত্রলীগের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। রবিন ও তার ভাই বাবু প্রথমে কারখানায় ঢুকে লুটপাট শুরু করেন বলে অভিযোগ উঠে। শহিদুল ইসলাম ও তার সমর্থকেরা লুটপাট ঠেকাতে গেলে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়।

বাংলাদেশের সংকটের ব্যাখ্যা ঘটনাবলী ও সাম্প্রতিক সংকটের পরিপ্রেক্ষিত বিশ্লেষণ

প্রত্যক্ষদর্শীদের ভাষ্যমতে, সংঘর্ষের সময় রামদা, সামুরাই এবং আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহার করা হয়। সংঘর্ষে তিনটি মোটরসাইকেল ভাঙচুর করা হয় এবং একটি মোটরসাইকেল লুট করা হয়। সংঘর্ষের সময় কারখানার চারপাশে লোকজন ভিড় করে এবং তারা বিভিন্ন দিক দিয়ে লুটপাট চালায়। এই সংঘর্ষের পর পরিস্থিতি আরও উত্তপ্ত হয়ে ওঠে এবং লুটপাটের খবর ছড়িয়ে পড়লে বিকেল নাগাদ কয়েক হাজার লোক কারখানায় এসে লুটপাটে অংশ নেয়।

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায় যখন রাত নয়টার দিকে কারখানার একটি ছয়তলা ভবনের নিচতলায় আগুন দেওয়া হয়। এই আগুনে কারখানার বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং উদ্ধারকাজও ব্যাহত হয়। বেসরকারি হিসাবে, আগুন লাগার পর থেকে লুটপাটের সময় কারখানায় আসা অন্তত ১৭৫ জন নিখোঁজ থাকার দাবি করেছেন তাঁদের স্বজনেরা।

সরকারের ক্ষমতায় থাকার নৈতিক অধিকার নিয়ে প্রতিবাদ

সংঘর্ষে অংশ নেওয়া দুই পক্ষই দাবি করেছে যে তারা লুটপাট ঠেকানোর চেষ্টা করছিল। রবিন হোসাইন দাবি করেছেন, শহিদুল এবং তার লোকজন কারখানা থেকে লুট করা মালামাল অন্যত্র সরিয়ে নিচ্ছিল, যার প্রতিবাদে রবিনের পক্ষের লোকজন তাদের বাধা দেয়। অপরদিকে, শহিদুল ইসলাম দাবি করেন যে লুটপাটের কথা শুনে তারা কারখানায় ঢোকার চেষ্টা করেছিল, কিন্তু রবিন ও তার লোকজন তাদের বাধা দেয় এবং সংঘর্ষ বাধে।

রবিন ও তাঁর ভাই বাবুর লোকজন লুটের শুরু করে। শহিদুলের লোকজন পরে লুট করতে এলে দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয়

সংঘর্ষ এবং লুটপাটের ঘটনায় এলাকাবাসী ও রাজনৈতিক নেতাদের মধ্যে আতঙ্ক ও উদ্বেগ সৃষ্টি হয়। পুলিশ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করছে এবং কারখানা এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এ ঘটনায় যুবলীগ ও ছাত্রলীগের নেতাদের সম্পৃক্ততা থাকায় রাজনৈতিক মহলেও ব্যাপক আলোচনা শুরু হয়েছে।

ঝিনাইদহে কোটা বিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলা, আহত-৫

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক রাকিব আহসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন এবং জানান, ছয়তলা ভবনটি বিপজ্জনক অবস্থায় রয়েছে। ভবনের অবস্থা বিবেচনায় উদ্ধার কার্যক্রম চালানো অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ঘটনার পর পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবও ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।

এই সংঘর্ষ ও লুটপাটের ঘটনা শুধু গাজী টায়ার্স কারখানার জন্যই নয়, পুরো এলাকায় আতঙ্কের সৃষ্টি করেছে। এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং দোষীদের বিচার নিশ্চিত করার দাবি জানানো হচ্ছে বিভিন্ন মহল থেকে। গাজী টায়ার্সের এই ঘটনা আমাদের রাজনৈতিক ও সামাজিক বাস্তবতার একটি কঠিন চিত্র তুলে ধরেছে, যা সামাজিক শৃঙ্খলা রক্ষায় গুরুত্ব প্রদান করে।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version