ঝিনাইদহ প্রতিনিধি- ঝিনাইদহে আওয়ামী লীগ নেতা ও  কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল আলমের বাড়ি থেকে পুলিশ অভিযান চালিয়ে ককটেল-ম্যাগজিন ও বিপুল পরিমান দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার করলেও অবৈধ অস্ত্রের সন্ধান করতে পারেনি পুলিশ।

তবে পুলিশ দাবি করছে, অভিযুক্ত আসামী আশরাফকে গ্রেপ্তার করা হলেই বের হতে পারে অবৈধ অস্ত্রের সন্ধান। তাকে গ্রেপ্তার করতে বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ।

এলাকাবাসির দাবি, আপন ৩ ভাইকে গ্রেপ্তার করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেই বের হবে অস্ত্রের ভান্ডার। এমনটি মনে করেন স্থানীয় গ্রামবাসিরা। ম্যাগজিন উদ্ধার হলেও অবৈধ অস্ত্র গেলো কোথায় ? এমন প্রশ্ন এখন সবার মুখে মুখে।

ঝিনাইদহে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির সমাবেশে নিতাই রায় চৌধূরী “দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় মুক্তি এখন আর মুক্ত স্বাধীন দেশের মতো নয়”

তবে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে মামলার এজাহার নামীয় আসামী সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম পলাতক রয়েছে। প্রতারণার মাধ্যমে বহু পরিবারকে নিঃস্ব করে পথে বসানোর অভিযোগ রয়েছে এ পরিবারটির।

ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মীর আবিদুর রহমান জানান, সদর উপজেলার ধোপাবিলা গ্রামে কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল আলমের বাড়িতে একটি বিকট শব্দ স্থানীয়রা শুনতে পায়। শব্দ শুনার পর স্থানীয়রা পুলিশকে খবর দেয়।

এমন খবর পেয়ে থানা পুলিশ সেই বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে ১ টি ককটেল, কৌটা, পাউডারসহ ককটেল তৈরির সরঞ্জাম,  ১ টি ম্যাগজিন ও বড় আকৃতির ১৭টি রামদা উদ্ধার করে। এ সময় বাড়িতে কেউ না থাকার কারনে কাওকে আটক করতে পারেনি পুলিশ।

এ ঘটনায় সদর থানায় পুলিশ বাদি হয়ে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফসহ অজ্ঞাতদের আসামী করে একটি মামলা দায়ের করে। এ ঘটনার পর থেকে মামলার আসামী আশরাফুলসহ তার অন্য দুই ভাই রেজাউল ও জাহিদুলও গা ঢাকা দিয়েছে।

ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলায় এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত -মুহুরী নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙ্গে ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন ধরে আশরাফ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করে আসছে। এর আগে তিনি কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। তার ৬ ভাইয়ের মধ্যে দুই ভাই রেজাউল ও জাহিদুল তার সাথে ক্যাডার ভিত্তিক রাজনীতির সাথে অতপ্রত ভাবে জড়িত ছিলো।

এলাকায় তার নিজস্ব ক্যাডার বাহিণী দিয়ে ইউনিয়নে চাদাবাজি, নির্যাতন, চাকুরী বাণিজ্য, প্রতিবন্ধী স্কুলে নিয়োগ, প্রতারণাসহ এমন কোন অপকর্ম নেই যে তারা করেনি। তাদের অত্যাচারে গোটা ইউনিয়নের মানুষ অতিষ্ট হয়ে উঠেছিলো। তারা এতোটাই প্রভাবশালী যে, তাদের সকল নির্যাতন মুখ বুঝে সহ্য করতো। তাদের ভয়ে কেও কোন সময় প্রতিবাদ করতে পারেনি। এমনকি তারা উল্টো মানুষকে মিথ্যা মামলা দিয়ে ফাসিয়ে দেয়ার এমন অভিযোগও রয়েছে ।

অপরদিকে ভুক্তোভুগিরা জানান, অভিযুক্ত আশরাফের পরিবার দীর্ঘদিন ধরে জেলা আওয়ামী লীগের এক নেতার ছত্রছায়ায় থেকে তারা বেপরোয়া ভাবে চলাফেরা করতো। সেই নেতার দাপটে সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল ও তার দুই ভাই রেজাউল করিম ও জাহিদকে সাথে নিয়ে এলাকাতে একটি ক্যাডার বাহিণী নিয়ন্ত্রন করতেন।

তিনি চেয়ারম্যান থাকাকালে টিআর-কাবিখা, কাবিটাসহ দরিদ্র মানুষের জন্য সকল বরাদ্দ লুটপাট করার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। এর আগেও বিভিন্ন মিডিয়াতে সাবেক চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে।

এ পরিবার ধোপাবিলা গ্রামে তার বাবা আমজাদ হোসেন মোড়ল অটিষ্টিক ও প্রতিবন্ধী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক-কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে বিপুল অংকের অর্থ আত্মসাত করার অভিযোগ রয়েছে। এ প্রতিষ্ঠানটি দায়িত্বে ছিলেন সাবেক চেয়ারম্যানের ভাই রেজাউল করিম। তিনি এমপিও ভুক্ত করার কথা বলে এ অর্থ বাণিজ্য করে থাকেন।

এ ছাড়াও মহেশপুর উপজেলার গুড়দাহ গ্রামের আনিচুর রহমানের কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের সচিব পদে চাকুরী দেওয়ার কথা বলে, গত ২০১৩ সালে ৯ লাখ টাকা গ্রহন করেন রেজাউল করিম। পরে চাকুরী দিতে না পারার কারনে তার জমি বিক্রী করা টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো হুমকি দিতে থাকে রেজাউল ও তার ভাই সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল।

এক পর্যায়ে স্থানীয় শালিসের মাধ্যমে চার লাখ টাকা ফেরত দিলেও এখনও ৬ লাখ টাকা ফেরত না দিয়ে তা আত্মসাত করেন। দাবিকৃত টাকা ভুক্তোভুগি আনিুচর ফেরত চাইলে তাকে মিথ্যা মামলায় ফাসিয়ে দেওয়ার ভয় দেখান বলে তিনি অভিযোগ করেন।

ঝিনাইদহের শৈলকুপায় নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতায় প্রতিপক্ষের বাড়িঘরে হামলা-ভাংচুর, লুটপাট

সর্বশেষ যশোর এলাকার হামিদপুর গ্রামের হতদরিদ্র দাউদ হোসেনের শিক্ষিতা কন্যা তাসলিমা সুলতানা তমার চাকুরীর জন্য বিভিন্ন স্থানে এ পরিবার ধর্না দেন। এক পর্যায়ে ঝিনাইদহে তাদের আত্মীয় স্বজনের পরিচয়ের মাধ্যমে এ দরিদ্র পরিবার গ্রামের মাঠের ধানী জমি বিক্রী করে ১৫ লাখ টাকার ব্যবস্থা করেন।

তাদেরই আত্মীয় শৈলকুপার নাকোইল গ্রামের বসির জোয়ারদারের মাধ্যমে ধোপাবিলা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক পদে নিয়োগ দেওয়ার শর্তে প্রতারক রেজাউল করিম বিগত ২০২২ সালের ৪ই ডিসেম্বর ১৫ লাখ টাকা গ্রহন করেন। পরে তিনি এ প্রতিষ্ঠানের সভাপতি থাকার কারনে চাকুরী দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। পরে চাকুরী দিতে ব্যার্থ হলে তিনি এ টাকা ফেরত দিতে তালবাহানা করেন।

পরিশেষে ভুক্তোভুগি তাসলিমা সুলতানা তমা ও তার স্বজনদের নিয়ে যশোর থেকে টাকা আদায় করতে থানা পুলিশ-র‌্যাবসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতা ও জনপ্রতিনিধিদের কাছে ধর্না দেন। সকলেই আশস্ত করলেও টাকা উদ্ধার করতে ব্যার্থ হন। অবশেষে এ পরিবার রেজাউল করিমের কাছে দেওয়া টাকা ফেরত চাইলে তিনি গুলি করে হত্যার হুমকি প্রদান করেন।

কালীগঞ্জে হত্যা মামলায় ২ জনের যাবজ্জীবন কারাদন্ড

শুধু হুমকি দিয়েই ক্ষ্যান্ত হননি টাকা ফেরত দিবে না বলে আদালতে এস-এ পরিবহন ও বিকাশের বিভিন্ন নাম্বারে ক্ষতিগ্রস্থ তমা ও তার স্বামী সিংগাপুর তাকে নিয়ে যাওয়ার কথা বলে উল্টো ১৫ লাখ টাকার একটি মিথ্যা মামলা দায়ের করেন আদালতে। এ হয়রানী থেকে মুক্ত করতে এ নারীকে বিয়ের কু-প্রস্তাব দেন। বিয়ে করলে তার টাকা ফেরত ও মামলা প্রত্যাহার করা হবে বলে ক্ষতিগ্রস্থ এ নারী জানান।

ভুক্তোভুগি তাসলিমা সুলতানা তমা আরও জানান, আমি তার নামে আদালতে একটি মামলা ও থানাতে সাধারন ডায়েরী করেছি। আমরা নিরিহ মানুষ সে কারনে হত্যার হুমকিসহ চাকুরী দেওয়ার ১৫ লাখ টাকা ফেরত না দিয়ে উল্টো আমিসহ পরিবারকে ভয়-ভীতির উপরে রেখেছেন এমনকি আমার সংসারও ভেঙ্গে দিয়েছেন।  আমরা ন্যায় বিচারসহ প্রশাসনের হস্থক্ষেপ কামনা করছি।

অভিযোগ রয়েছে, এ ভাবে এই পরিবার বহু মানুষের সাথে প্রতারনা করে পথে বসিয়েছে। টাকা চাইলে আদালতে হয়রানী করতে মামলা ও অপরদিকে অস্ত্রের ভয় ভীতি দেখাতেন।

অভিযুক্ত প্রতারক রেজাউল এর নিকট জানতে চাওয়া হলে তিনি এ অভিযোগ অস্বীকার করেন, তবে মহেশপুরে আনিচুরের কিছু টাকা ফেরত দেওয়ার কথা স্বীকার করেন।

এদিকে সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফের আরেক ছোট ভাই জাহিদুল ইসলাম ভুয়া নিবন্ধনে চাকুরী করতো ডেফোলবাড়িয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। এ ঘটনাটি জানাজানি হলে তিনি আর স্কুলে যান না। তবে জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তাসহ সকলেই তদন্ত করছেন।

ঝিনাইদহে জনশুমারি ও গৃহগণনার জেলা রিপোর্ট প্রকাশ

কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়নের বর্তমান চেয়ারম্যান সিরাজুল ইসলাম জানান, সাবেক চেয়ারম্যান আশরাফুল আলম, তার ভাই রেজাউল করিম ও জাহিদুল ইসলাম এরা কিভাবে মানুষের নিঃস্ব করেছে এলাকাতে খোজ নিলে জানতে পারবেন। তাদের ভয়ে কেও মুখ খুলতে সাহস পাইনা। তাদের নিজস্ব ক্যাডার বাহিনী রয়েছে। এদের গ্রেপ্তার করা হলে অস্ত্রসহ অনেক চাঞ্চল্যকর তথ্য বের হয়ে যাবে।

এ বিষয়ে পুলিশ সুপার আজিম-উল-আহসান জানান, অপরাধী যেই হোক তাদেরকে ছাড় দেওয়া হবে না। পুলিশ এসব বিষয়ে তদন্ত চালাচ্ছে। এছাড়াও জড়িতদের গ্রেপ্তারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চলছে। আশা করি আসামীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version