স্টাফ রিপোর্টার ঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, একুশ (২১ফেব্রুয়ারি) আমাদের মাথা নত না করতে শিখিয়েছে, কাজেই মাথা উঁচুকরেই বাঙালি জাতিকে তিনি এগিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।তিনি বলেন, “একুশ আমাদের শিখিয়েছে মাথা নত না করতে। কাজেই আমরা মাথা নত করে নয়, মাথা উঁচু করেই চলবো এবং বিশ্বদরবারে মর্যাদা নিয়ে এগিয়ে যাব।

” প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মঙ্গলবার সকালে অমর একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে জাতীয় জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ২১ জন বিশিষ্ট ব্যক্তির মাঝে ‘একুশে পদক-২০২৪’ প্রদান কালে দেওয়া প্রধান অতিথির ভাষণে একথা বলেন।

শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে বাধা দেবে না সরকার: ওবায়দুল কাদের

তিনি রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে ২১তম বারের মত বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘একুশে পদক’ বিজয়ীদের হাতে তুলে দেন। মরণোত্তর পদক বিজয়ীদের পক্ষে তাঁদের স্বজনগণ পদক গ্রহণ করেন।

তিনি বলেন, জাতির পিতা আমাদের শুধু স্বাধীনতাই দিয়ে যাননি, তিনি সেই সাথে আমাদের একটা মর্যাদাবোধ দিয়ে গেছেন। বিজয়ী জাতি হিসেবে সারাবিশ্বে আমরা মাথা উঁচু করেই চলতে চাই। এই কথাটা সকলকে মনে রাখতে হবে।

তিনি এ সময় ১৯৭২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি প্রথম প্রহরে জাতির পিতা যখন শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পন করেন সে সময় প্রদত্ত ভাষণের চুম্বকাংশ উদ্ধৃত করেন। জাতির পিতা বলেছিলেন, “১৯৫২ সালের আন্দোলন কেবলমাত্র ভাষা আন্দোলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল না।

এই আন্দোলন ছিল সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলন।” প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতির পিতা আমাদের যে মর্যাদা দিয়ে গিয়েছিলেন সেই মর্যাদাটা ’৭৫ এর পর বাঙালি জাতি হারিয়ে ফেলেছিল।

কিন্তু আজকে আমি অন্তত এইটুক দাবি করতে পারি আবার বাঙালি বিশ্বের দরবারে এখন মাথা উঁচু করে চলতে পারে। সেই মর্যাদা আমরা ফিরিয়ে এনেছি। আর এই মর্যাদা আমাদের সমুন্নত রেখেই আগামীর দিনে এগিয়ে যেতে হবে।

তিনি বলেন, “কারো কাছে হাত পেতে নয়, ভিক্ষা করে নয়, আমরা আত্মমর্যাদা নিয়ে বিশ^দরবারে মাথা উঁচু করে চলবো। কারণ, একুশ আমাদের মাথা নত না করা শিখিয়েছে। কাজেই, আমরা মাথা নত করে নয় মাথা উঁচু করে চলবো।

ঝিনাইদহ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতালের দুটি লিফট বন্ধ থাকায় সিমাহীন দূর্ভোগে রোগী ও স্বজনেরা

” এরআগে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় এবারের একুশে পদক ২০২৪ বিজয়ী ২১ জনের তালিকা প্রকাশ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে।

একুশে পদকে ভূষিতরা হচ্ছেন-ভাষা আন্দোলনে মৌ. আশরাফুদ্দীন আহমদ  মরণোত্তর), ভাষা আন্দোলনে বীর মুক্তিযোদ্ধা হাতেম আলী মিয়া (মরণোত্তর), শিল্পকলায় (সংগীত) জালাল উদ্দীন খাঁ (মরনোত্তর), শিল্পকলায় (সংগীত) বীর মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণী ঘোষ, শিল্পকলায় (সংগীত) বিদিত লাল দাস (মরনোত্তর), শিল্পকলায় (সংগীত) এন্ড্রু কিশোর (মরনোত্তর), শিল্পকলায় (সংগীত) শুভ্রদেব, শিল্পকলায় (নৃত্যকলা) শিবলী মোহাম্মদ, শিল্পকলায় (অভিনয়) ডলি জহুর, শিল্পকলায় (অভিনয়) চিত্রনায়ক এম. এ. আলমগীর, শিল্পকলায় (আবৃত্তি) খান মো. মুস্তাফা ওয়ালীদ (শিমুল মুস্তাফা), শিল্পকলায় (আবৃত্তি) রূপা চক্রবর্তী, শিল্পকলায়  (চিত্রকলা) শাহজাহান আহমেদ বিকাশ, শিল্পকলায় (মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক প্রামাণ্যচিত্র নির্মাণ ও আর্কাইভিং) কাওসার চৌধুরী, সমাজসেবায় মো. জিয়াউল হক, সমাজ সেবায় আলহাজ্ব রফিক আহামদ, ভাষা ও সাহিত্যে মুহাম্মদ সামাদ (ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের প্রো ভাইস চ্যান্সেলর), ভাষা ও সাহিত্যে লুৎফর রহমান রিটন, ভাষা ও সাহিত্যে মিনার মনসুর, ভাষা ও সাহিত্যে রুদ্র মুহম্মদ শহীদুল্লাহ (মরনোত্তর) এবং শিক্ষায় প্রফেসর ড. জিনবোধি ভিক্ষু। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন পদক বিতরণ পর্বটি সঞ্চালনা করেন এবং পদক বিজয়ীদের সাইটেশন পাঠ করেন।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব খলিল আহমদ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন এবং সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব হাসনা জাহান খানম স্বাগত বক্তৃতা করেন। সরকারের মন্ত্রিপরিষদ সদস্যবৃন্দ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাগণ, সংসদ সদস্যগণ, সরকারের উর্ধ্বতন সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ, দেশ বরেণ্য বুদ্ধিজীবী, কবি, সাহিত্যিক, শিল্পীসহ বিশিষ্ট আমন্ত্রিত অতিথিবৃন্দ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।

১৫৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১১১টিতে নেই শহীদ মিনার

শেখ হাসিনা আবারো তাঁকে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত করায় জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করার জন্য জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর আজকে সুযোগ হয়েছে। দেশসেবার সুযোগ পেয়েছি। কাজেই যারা জনগণের সেবা করে তাদের সেবা করতে পারলে নিজেকে ধন্য মনে হয়।

এভাবে বিভিন্ন জায়গায় আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যাঁরা আবদান রেখেছেন বা আমাদের দেশের বিভিন্ন আন্দোলন-সংগ্রামে যারা অবদান রেখেছেন এবং আমাদের সংস্কৃতি, ক্রীড়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে যারা অবদান রেখেছেন তাদেরকে সম্মাননা দিতে হবে। জাতির পিতার পদাংক অনুসরণ করে তাঁর সরকার একটি শিক্ষিত, দক্ষ, বিজ্ঞান- প্রযুক্তি জ্ঞান সম্পন্ন আধুনিক জনশক্তি হিসেবে আজকের প্রজন্মকে গড়ে তুলতে চায় উল্লেখ করে সরকার প্রধান বলেন, আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ করেছি।

সমানে আমাদের লক্ষ্য ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ে তোলা। কাজেই কেউই অশিক্ষার অন্ধকারে থাকবে না এবং সবাই যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে তাদের দক্ষতা ও কর্মশক্তি বিকশিত করতে পারে সেদিকেই আমরা বিশেষভাবে দৃষ্টি দিচ্ছি। সেক্ষেত্রে আমি মনেকরি আমাদের আগামী দিনের পথচলায় ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে আমরা ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ হিসেবে গড়ে তুলবো, যার ঘোষণা আমরা দিয়েছি। প্রেক্ষিত পরিকল্পনা তৈরি করেছি।

রাজবাড়ী জেলা পুলিশের কিট প্যারেড মাসিক কল্যাণ ও অপরাধ সভা

পঞ্চবার্র্ষিক পরিকল্পনায় সেগুলো আমরা সংযুক্ত করে বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছি। সেভাবেই আমরা এগিয়ে যাব। পাশাপাশি আমাদের সমাজের বিভিন্ন স্তরে যারা অবদান রাখছেন অবশ্যই তাদেরকে খুঁজে বের করে সম্মাননা দিয়ে আমরা নিজেকে ধন্য করবো। এটাই হবে আমাদের প্রচেষ্টা। শেখ হাসিনা বলেন, আমরা সমাজের উন্নয়নের জন্য কাজ করি।

এখানে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশিষ্ট অবদান যারা রেখেছেন তাদেরকে যতদূর সম্ভব আমরা সম্মাননা দেওয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি। যাঁরা ভাষা, সাহিত্য শিল্প, কলাসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রেখেছেন তাদেরকে পুরস্কৃত করতে পেরে আমরা ধন্য হয়েছি এবং তাদেরকে আমার আন্তরিক অভিনন্দন। এ বছর একুশে পদক পেয়েছেন ২১ জন।

যাদের একজন চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার সীমান্তঘেঁষা ভোলাহাট উপজেলার মুসরিভূজা গ্রামের বাসিন্দা জিয়াউল হক (৯১)। দই বিক্রির টাকায় তিনি গড়ে তুলেছেন লাইব্রেরি ও একটি বিদ্যায়তন। এছাড়া স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীদের বিনামূল্যে বই দেওয়াসহ সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত অনুদান দেন সাদা মনের মানুষ হিসেবে পরিচিত জিয়াউল হক।

প্রধানমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে জিয়াউল হকের সমাজ সেবামূলক কাজের প্রশংসা করেন এবং পাঠাগরের জন্য একটি ভবন নির্মাণ করে দেওয়ার ঘোষণা দেন। তার প্রতিষ্ঠিত স্কুলটি সরকারিকরণের ব্যবস্থা করা যায় কি-না সে উদ্যোগও নেবেন বলে জানান।তিনি বলেন, জিয়াউল হককে পুরস্কৃত করতে পেরে আমরা আনন্দিত এই জন্যযে, আমরা সারা বাংলাদেশে যদি খোঁজ করি এরকম বহু গুণিজন পাব।

হয়তো দারিদ্রের কারণে না হয় কোন সামাজিক কারণে হয়তো নিজেদের মেধা বিকাশের সুযোগ পাননি। কিন্তু সমাজকে কিছু তারা দিয়েছেন, মানুষকে দিয়েছেন, সেটাই সবচেয়ে বড় কথা। তারা মানুষের কল্যাণে নিবেদিত প্রাণ হয়ে কাজ করেছেন। হয়তো যে অর্থ তিনি উপার্জন করেছেন তা দিয়ে আরো ভালোভাবে বাঁচতে পারতেন, জীবনকে গড়ে তুলতে পারতেন।

কিন্তু, নিজের উন্নতি বা ভোগ বিলাসের দিকে না তাকিয়ে তিনি জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে চেয়েছেন যারা লেখাপড়া করতে পারছেনা তাদের জন্য। প্রধানমন্ত্রী যারা সমাজের উচ্চস্তরে আছেন তাদেরকে এই ধরণের ত্যাগী মানুষগুলোকে খুঁজে বের করারও অনুরোধ করেন।

প্রধানমন্ত্রী ভাষণের শুরুতে শ্রদ্ধার সঙ্গে ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতার অবদান এবং ভাষা শহীদদের স্মরণ করেন। মাতৃভাষার মর্যাদা রক্ষা করতে গিয়ে বাঙালিরা রক্ত দিয়েছে, রক্তের অক্ষরে ভাষার অধিকারের কথা লিখে গেছেন। পাকিস্তানি শাসকরা যখন আমাদের মায়ের ভাষায় কথা বলার অধিকার কেড়ে নিতে চেয়েছিল।

মেয়াদ উত্তীর্ণ পণ‌্য সংরক্ষণ ও অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরী করার অপরাধে রাজবাড়ীতে ভোক্তার অভিযানে ৩ বেকারী মালিককে জরিমানা

তখন জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের আইন বিভাগের ছাত্র থাকাকালীন তমুদ্দুন মজলিসসহ আরো কয়েকটি সংগঠনকে নিয়ে মায়ের ভাষাকে রক্ষার জন্য সংগ্রাম পরিষদ গড়ে তোলেন এবং আন্দোলন শুরু করেন।

তিনি ভাষার দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়েই কারাবরণ করেন এবং কারাগারে থেকেই ’৫২র ভাষা আন্দোলন সংগঠনে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। সেই আন্দোলনের পথে হেঁটেই কিন্তু আমরা আমাদের স্বাধিকার আদায় করেছি, স্বাধীনতা পেয়েছি।

জাতির পিতা কন্যা আরও বলেন, ’৭১ এর পরাজিত শক্তি যেমন ’৭৫ এ জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার মধ্যদিয়ে তাদের পরাজয়ের প্রতিশোধ নিয়েছিল তেমনি স্বাধীনতাসহ সকল অর্জন এমনকি ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতার অবদানকেও মুছে দিতে চেয়েছিল।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version