ঝিনাইদহে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে নিয়োগপ্রাপ্ত পরিচালকরা তাদের চাকরির স্থায়ীত্ব এবং ন্যায্য বেতন ভাতার দাবিতে সংবাদ সম্মেলন করেছেন। শনিবার দুপুরে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার পরিচালক কল্যাণ সমিতি, ঝিনাইদহ জেলা শাখা। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি মোঃ মুজিবুল হক বলেন, ২০১০ সালের ১১ নভেম্বর থেকে তথ্যসেবা কেন্দ্রের নামে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের পথচলা শুরু হয়। ১৪ বছর ধরে কাজ করেও তাদের চাকরি স্থায়ী করা হয়নি। ঝিনাইদহ জেলার ৬৭টি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে ১৩৪ জন পরিচালক কর্মরত আছেন, কিন্তু নিয়োগের সময় সরকারি বিধি-বিধান মেনে নিয়োগ করা হলেও বেতনের ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হতে হচ্ছে।

ঝিনাইদহের রাজস্ব খাত থেকে বেতন ভাতা প্রদানের দাবীতে ইউনিয়ন ডিজিটাল

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, তাদের সরকারি বেতন ভাতা না দিয়ে জবরদস্তিমূলক চুক্তির মাধ্যমে কাজ করতে বাধ্য করা হচ্ছে। সারাদিন ধরে সরকারী প্রকল্পের কাজ করিয়ে পারিশ্রমিক দিতে বলা হয়। এর ফলে, পরিচালকরা নিজেদের ভিখারীর মত অনুভব করছেন এবং জনসাধারণের কাছ থেকে টাকা চেয়ে নেয়ার সময় নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। এতে তারা মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, স্থানীয় সরকার বিভাগ ২০১৬ সালে গেজেটের মাধ্যমে নতুন পদ সৃষ্টি করে হিসাব সহকারী কাম-কম্পিউটার অপারেটরের পদে নিয়োগ দেয়। এর ফলে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারে কর্মরত পরিচালকরা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হচ্ছেন এবং তাদের কাজে হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে। এতে করে তাদের চাকরির নিরাপত্তা ও সম্মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছে।

ঝিনাইদহে ৮ হত্যা মামলায় পুলিশের ৪৩ কর্মকর্তা আসামী

বাংলাদেশ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার পরিচালক কল্যাণ সমিতির কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল্লাহ আল আমিন, সাংগঠনিক সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, ঝিনাইদহ সভাপতি সনজিত বিশ্বাস, সাধারণ সম্পাদক রাবিকুল ইসলাম রাকিব, চুয়াডাঙ্গার সাইফুজ্জামান, আব্দুল আলীম এবং হাসিবুল হাসান হাসিবসহ আরও অনেকে এই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন। তারা অভিযোগ করেন, গত ১৪ বছর ধরে তাদের ন্যায্য অধিকার প্রতিষ্ঠার আন্দোলনে বাধা প্রদান করা হয়েছে, তাই তারা প্রতিবাদ করার সুযোগ পায়নি।

নেতৃবৃন্দ তাদের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে রাজস্ব খাত থেকে বেতন ভাতা প্রদানের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। তারা বলেন, সরকারী খাত থেকে বেতন ভাতা নিশ্চিত না করা পর্যন্ত তারা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। সংবাদ সম্মেলন শেষে আগের কমিটি বিলুপ্ত করে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার পরিচালক কল্যাণ সমিতির ঝিনাইদহ জেলা শাখার নতুন কমিটি গঠন করা হয়।

শৈলকুপায় সাড়ে ৮’শ কৃষকের মাঝে কীটনাশক বিতরণ

এই দাবি শুধু ঝিনাইদহ জেলার নয়, এটি জাতীয়ভাবে সব ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার পরিচালকদের দাবির সঙ্গে সম্পর্কিত। সারা দেশের ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের পরিচালকরা একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন। তারা দীর্ঘদিন ধরে দক্ষতার সঙ্গে সরকারি কাজ করে আসছেন, কিন্তু তাদের শ্রমের মূল্যায়ন হচ্ছে না। বর্তমান চুক্তিভিত্তিক পদ্ধতি তাদের জীবিকা নির্বাহের জন্য যথেষ্ট নয়, এবং এতে করে তাদের ভবিষ্যত অনিশ্চিত হয়ে পড়ছে। তাদের দাবি, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বাতিল করে সরকারি কর্মচারীদের মতো তাদের বেতন ভাতার ব্যবস্থা করতে হবে, যাতে তারা নিরাপত্তা ও সম্মানের সঙ্গে কাজ করতে পারেন।

এই সমস্যা শুধু অর্থনৈতিক নয়, এটি মানসিক এবং সামাজিক সমস্যাও বটে। কারণ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার পরিচালকরা তাদের কাজের জন্য যথাযথ মর্যাদা পাচ্ছেন না। তাদেরকে প্রতিদিন জনসাধারণের নানা প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে নাগরিকেরা তাদেরকে দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগী হিসেবে মনে করেন, যা তাদের জন্য অত্যন্ত অসম্মানজনক। এটি শুধু তাদের ব্যক্তিগত মর্যাদাকেই ক্ষুণ্ণ করছে না, বরং সরকারের উন্নয়ন কার্যক্রমেও নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

ঝিনাইদহে বিদ্যুৎ অফিসের লাইন সহকারীদের বেতন ভাতার দাবিতে কর্মবিরতি ও বিক্ষোভ

সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্ন, তার একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার। কিন্তু এই সেন্টারের পরিচালকরাই যদি সন্তুষ্ট না থাকেন, তবে সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন কতটা সম্ভব, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়। কারণ, এদের মাধ্যমেই দেশের সাধারণ মানুষ ডিজিটাল সেবা পাচ্ছে। যদি এই পরিচালকরাই হতাশ এবং অসন্তুষ্ট থাকেন, তাহলে সেই সেবার মানও তেমন ভালো হবে না।

অতএব, সরকারের উচিত তাদের দাবিগুলো গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা এবং দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের পরিবর্তে তাদের চাকরি স্থায়ী করা, রাজস্ব খাত থেকে বেতন-ভাতা প্রদান করা এবং তাদের কাজের সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করা অত্যন্ত জরুরি। শুধু তাই নয়, তাদের মানসিক চাপ ও সামাজিক অসম্মান থেকে রক্ষার জন্যও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন।

ঝিনাইদহে শিবির কর্মী শামীম ও আবুজার গিফারী হত্যায় আদালতে মামলা পুলিশের ভূমিকা ও বিচার

বর্তমানে ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার পরিচালকদের এই সমস্যাগুলো সমাধানের জন্য কোনও পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। তারা তাদের ন্যায্য দাবি নিয়ে বারবার বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করেছেন, কিন্তু প্রতিবারই তাদের অবহেলা করা হয়েছে। কিন্তু তারা আশা ছাড়েননি এবং সরকারের কাছ থেকে দ্রুত সমস্যা সমাধানের প্রত্যাশা করছেন।

এই সমস্যার দ্রুত সমাধান না হলে আগামীতে এই সেন্টারগুলোর পরিচালকদের মধ্যে অসন্তোষ আরও বেড়ে যেতে পারে, যার ফলে ডিজিটাল সেবা প্রদান বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই সরকারের উচিত এই সমস্যাগুলো সমাধানে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া এবং ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার পরিচালকদের জন্য সুষ্ঠু ও স্থায়ী সমাধান খুঁজে বের করা।

অতএব, এখন সময় এসেছে এই সমস্যাগুলোকে গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করার এবং ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার পরিচালকদের ন্যায্য দাবি মেনে নেওয়ার। কারণ, তাদের সন্তুষ্টি এবং মানসিক শান্তি সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version