ঝিনাইদহ প্রতিনিধি: ঝিনাইদহ শহরে দিনেদুপুরে প্রকাশ্য দিবালোকে ইজিবাইক চুরির ঘটনা ঘটেছে, যা শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। শুক্রবার দুপুরে ধোপাঘাটা গোবিন্দপুর এলাকা থেকে মতিয়ার রহমান নামে এক ব্যক্তির লাল রঙের ইজিবাইকটি চুরি হয়। এ ঘটনায় মতিয়ার রহমান চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন, কারণ ইজিবাইকটি ছিল তাঁর পরিবারের একমাত্র উপার্জনের মাধ্যম।

ঝিনাইদহে দুই মামলায় ইউপি চেয়ারম্যান গ্রেপ্তার

মতিয়ার রহমান জানান, তিনি প্রতিদিনের মতোই শুক্রবার দুপুরে তাঁর ইজিবাইকটি বাড়ির সামনে রেখে জুম্মার নামাজ আদায় করতে যান। নামাজ শেষে বাড়ি ফিরে এসে দেখেন, ইজিবাইকটি সেখানে নেই। মুহূর্তের মধ্যে তাঁর চোখে অন্ধকার নেমে আসে। তিনি দ্রুত আশপাশের এলাকায় খোঁজ নিতে শুরু করেন, কিন্তু ইজিবাইকটির কোনো সন্ধান পাননি।

মতিয়ার রহমানের ইজিবাইকটি ঝিনাইদহ পৌরসভার নিবন্ধিত, যার লাইসেন্স নাম্বার ২৯। তিনি বলেন, “এই ইজিবাইকটি আমার একমাত্র আয়ের উৎস ছিল। এর মাধ্যমে আমি আমার পরিবারের ভরণ-পোষণ চালাতাম। এখন আমি সম্পূর্ণ দিশেহারা হয়ে পড়েছি।”

ইজিবাইক চুরির এই ঘটনাটি এলাকাবাসীর মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তারা জানিয়েছেন, এর আগে এ ধরনের চুরির ঘটনা খুব বেশি ঘটেনি। দিনের বেলায় এমন একটি দুঃসাহসিক চুরি দেখে সবাই বিস্মিত। স্থানীয় বাসিন্দারা এ ঘটনাকে শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার ব্যর্থতা হিসেবে উল্লেখ করেছেন।

এক প্রতিবেশী বলেন, “এখানে আগে এভাবে প্রকাশ্যে কিছু চুরি হতে শুনিনি। আমরা সবাই আতঙ্কিত। আজকে ইজিবাইক চুরি হয়েছে, কালকে হয়তো আমাদের বাড়ি বা দোকানে চুরি হতে পারে। আমরা এ বিষয়ে প্রশাসনের দ্রুত হস্তক্ষেপ চাই।”

ঝিনাইদহে পুলিশ কর্মকর্তাসহ ৩ জন বিপুল পরিমাণ ফেন্সিডিলসহ আটক

মতিয়ার রহমান ইজিবাইক চুরির ঘটনায় বাকরুদ্ধ হয়ে গেছেন। ইজিবাইকটি না পেলে তাঁর পরিবারের ভরণ-পোষণের কী হবে, সেই দুশ্চিন্তায় তিনি ভেঙে পড়েছেন। তিনি জানান, “এই ইজিবাইকটি না থাকলে আমার জীবিকা নির্বাহ করা অসম্ভব। আমি কীভাবে চলব, কীভাবে আমার পরিবারের খরচ চালাবো, কিছুই বুঝতে পারছি না।”

চুরির ঘটনার পরপরই মতিয়ার রহমান থানায় যাননি। তিনি জানিয়েছেন, ইজিবাইকটি খুঁজে বের করার জন্য তিনি নিজেই প্রথমে চেষ্টা করছেন। স্থানীয়ভাবে খোঁজাখুঁজি করে ইজিবাইকটি না পেলে তিনি থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করবেন। শনিবারের মধ্যে ইজিবাইকটির সন্ধান না পেলে তিনি থানায় অভিযোগ জানাবেন বলে জানিয়েছেন।

এ বিষয়ে মতিয়ার রহমান বলেন, “আমি প্রথমে আশেপাশের এলাকায় খোঁজখবর নিয়েছি। কিন্তু এখনো কিছু পাইনি। পুলিশে যাওয়ার আগে নিজের মতো করে খোঁজার চেষ্টা করছি। যদি না পাই, তাহলে থানায় সাধারণ ডায়েরি করবো।”

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে গণবিয়ে আয়োজনের অনুমোদন দেয়নি কর্তৃপক্ষ

এখন পর্যন্ত মতিয়ার রহমান থানায় কোনো অভিযোগ দায়ের করেননি। তবে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, চুরির বিষয়ে অভিযোগ পাওয়া মাত্রই তারা প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে। ঝিনাইদহ সদর থানার এক কর্মকর্তা জানান, “আমরা এখনও এ বিষয়ে কোনো লিখিত অভিযোগ পাইনি। যদি অভিযোগ করা হয়, আমরা দ্রুত তদন্ত শুরু করবো এবং ইজিবাইকটি উদ্ধারের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।”

তিনি আরও বলেন, “এমন ঘটনা সত্যিই দুঃখজনক। শহরে এ ধরনের চুরির ঘটনা যেন না ঘটে, সেজন্য আমরা আমাদের নজরদারি আরও বাড়াবো।”

সম্প্রতি ঝিনাইদহ শহরে এ ধরনের চুরির ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে বলে জানা যাচ্ছে। এর আগে আরও কিছু ছোটখাটো চুরির ঘটনা ঘটেছে, যা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। তবে দিনের বেলায় এভাবে প্রকাশ্যে চুরির ঘটনা এর আগে ঘটেনি।

ঝিনাইদহে মসজিদের জায়গা নিয়ে ১৪৪ ধারা জারি প্রতিবাদে রাস্তায় জুম্মার নামাজ আদায়

এক স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “এখন চোরেরা যেন আরও সাহসী হয়ে উঠেছে। আমরা সবাই শঙ্কিত। এভাবে চলতে থাকলে আমাদের ব্যবসা ও সাধারণ জীবনযাপন করা কঠিন হয়ে যাবে।”

এ ঘটনার পর স্থানীয় বাসিন্দারা শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করার জন্য প্রশাসনের কাছে দাবি জানিয়েছেন। তারা চান, শহরে পুলিশের টহল ব্যবস্থা আরও জোরদার করা হোক এবং বিশেষ করে গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলোতে সিসি ক্যামেরা বসানো হোক।

এক বাসিন্দা বলেন, “আমরা চাই শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত করা হোক। দিনেদুপুরে এভাবে চুরি হওয়া খুবই উদ্বেগজনক। যদি প্রশাসন সঠিকভাবে নজরদারি না করে, তাহলে আমাদের জন্য আরও খারাপ সময় অপেক্ষা করছে।”

এ ধরনের চুরির ঘটনা প্রতিরোধে প্রশাসনকে আরও সক্রিয় হতে হবে। শহরে সিসি ক্যামেরা স্থাপন এবং পুলিশের টহল জোরদার করার পাশাপাশি, সাধারণ মানুষকেও সতর্ক থাকতে হবে। মতিয়ার রহমানের মতো মানুষ যাতে এ ধরনের পরিস্থিতির শিকার না হন, সেজন্য সমন্বিত প্রচেষ্টা দরকার।

সাবেক পুলিশ সুপার আলতাফের বিরুদ্ধে ৫টি হত্যা মামলা

মতিয়ার রহমানের ইজিবাইক চুরির ঘটনাটি ঝিনাইদহ শহরে নিরাপত্তা ব্যবস্থার দুর্বলতাকে তুলে ধরেছে। এ ঘটনায় সাধারণ মানুষের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। প্রশাসন যদি দ্রুত ব্যবস্থা না নেয়, তাহলে এ ধরনের চুরির ঘটনা আরও বাড়তে পারে। সাধারণ মানুষ এবং ব্যবসায়ীরা চান, প্রশাসন দ্রুত পদক্ষেপ নেবে এবং শহরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও উন্নত করবে।

মতিয়ার রহমানের মতো নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য ইজিবাইক হলো একমাত্র আয়ের উৎস। এই আয়ের মাধ্যমটি হারিয়ে যাওয়া মানে তার পরিবারের জীবিকা নির্বাহের উপায় বন্ধ হয়ে যাওয়া। তাই এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রশাসনকে সক্রিয় হওয়া জরুরি।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version