নরসিংদীতে কোটা সংস্কার আন্দোলনে গুলিতে নিহত ১৪ জনের মধ্যে ৯ জন কিশোর ও তরুণ

কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় ঢাকার বাইরে সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে নরসিংদীতে। এ সময়ের সংঘর্ষ ও সহিংসতায় গুলিতে নিহত হয়েছেন ১৪ জন, যাদের মধ্যে ৯ জনের বয়স ১৫ থেকে ২২ বছরের মধ্যে। এছাড়া, আরও দুজনকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে। এই তথ্য বিভিন্ন হাসপাতাল, নিহতদের পরিবার এবং স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সাথে যোগাযোগ করে নিশ্চিত করা হয়েছে।

১৮ ও ১৯ জুলাই নরসিংদীতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সাথে বিক্ষোভকারীদের তীব্র সংঘর্ষ হয়। ২০ জুলাই, বিক্ষোভকারীরা জেলা কারাগারে হামলা চালায়।

১৮ জুলাই, জেলখানা মোড়ে রাবার বুলেটের আঘাতে নবম শ্রেণির ছাত্র তাহমিদ ভূঁইয়া তামিম (১৫) নিহত হন। তার লাশ স্ট্রেচারে রেখে বিক্ষোভকারীরা স্লোগান দিচ্ছিলেন, এসময় পুলিশ গুলি চালায়।

এছাড়া, ১৮ জুলাই একই এলাকায় গুলিতে নিহত হন নরসিংদী আইডিয়াল কলেজের ছাত্র ইমন মিয়া (২২)। পরদিন, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা সড়ক অবরোধের চেষ্টা করলে বিক্ষোভকারীদের সাথে তাদের পাল্টাপাল্টি সংঘর্ষ হয়। এ সংঘর্ষের মধ্যে ফয়েজ মিয়া (৪৫), যিনি একজন শ্রমিক, পিটিয়ে নিহত হন।

নরসিংদী শহরের বাইরের মাধবদী উপজেলায় সংঘর্ষের কারণে নিহত হন চারজন। ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শেখেরচর ও মাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নিহতদের মধ্যে রয়েছেন আশিকুল ইসলাম (২০), মো. নাহিদ মিয়া (২০) এবং আলী হোসেন (৪৫)। আশিকুল অটোরিকশার চালক, নাহিদ ঝালমুড়ি বিক্রেতা এবং আলী হোসেন দরজির কাজ করতেন। মাধবদী এলাকার মেহেরপাড়া এলাকায় একজন দিনমজুর, হাসান মিয়া (৪৫), নিহত হন।

শিবপুর উপজেলায়, ১৯ জুলাই রাতে ইটাখোলা হাইওয়ে পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করার সময় পুলিশের গুলিতে নিহত হন আমজাদ হোসেন (২২), মো. শিয়াম (১৮), হৃদয় মীর (১৮) এবং সুজন মিয়া (১৭)। আমজাদ নরসিংদী সরকারি কলেজের স্নাতকোত্তরের ছাত্র, হৃদয় একজন শ্রমিক, সুজন রিকশা চালাতেন এবং শিয়াম কর্মহীন ছিলেন। একই দিনে শিবপুর কলেজগেট এলাকায় বিক্ষোভকারীরা কুপিয়ে হত্যা করেন টিপু সুলতান নামের এক ব্যক্তিকে, যিনি পৌর মৎস্যজীবী লীগের নেতা ছিলেন।

মাধবদীর ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের শেখেরচর ও মাজার বাসস্ট্যান্ড এলাকায় নিহত আশিকুল ইসলামের মা শামছুর নাহার জানান, তার ছেলে বন্ধুর চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে টাকা তুলতে গিয়েছিল। গোলাগুলি চলাকালীন সময় রাস্তার পাশের একটি ওষুধের দোকানে আশ্রয় নেয়া অবস্থায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।

শাওন আহমেদ (১৮) নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে অভিযোগ রয়েছে যে, মেয়রের নির্দেশে তার মৃত্যু ঘটেছে। ১৯ জুলাই মাধবদীর আলগী এলাকায় রাস্তা ফাঁকা করার জন্য পৌরসভার মেয়র মোশারফ হোসেন প্রধান নেতা-কর্মীদের নিয়ে সেখানে যান। মেয়র ও তার অনুসারীরা একটি ভবনে আশ্রয় নেন, যেখানে থেকে কিছু গুলি ছোড়া হয়। এ সময় শাওন আহমেদ মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান। শাওনের পরিবার অভিযোগ করেছেন, মেয়রের নির্দেশেই তার মৃত্যু হয়েছে, যদিও মেয়র এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।

Shober Kotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version