ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীতে ২ জন নির্মাণ শ্রমিককে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা ও গুরতর আহত ৫ জন।

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীতে কয়েকজন যুবক কালী মন্দিরে প্রতিমার গায়ে আগুন দিয়েছে এমন কথা বলে এলাকাবাসীকে উত্তেজিত করে পঞ্চপল্লী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় এর নির্মান শ্রমিকদের উপরবর্বর হামলা চালালে ২ জন নির্মাণ শ্রমিক মারা যায় এবং আরো ৫ জন শ্রমিক গুরতর আহত হয় তাদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

নিহত দুই সহদর মোঃ আশরাফুল খান(২৫) ও মোঃ আরশাদুল খান (১৫) জেলার মধুখালী উপজেলার চোপের ঘাট গ্রামের ৃোঃ শাহজাহান খানের ছেলে।

ঝিনাইদহে ব্রি ধান-১০০’র শস্য কর্তন ও মাঠ দিবস

ঘঠনার খবর পেয়ে মধুখালি থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌছালে তাদেরকেও অবরুদ্ধ করে রাখা হয়,পরে ফরিদপুর সদর ও পার্শ্ববর্তী জেলা রাজবাড়া থেকে অতিরিক্ত পুলিশ,র‍্যাব এসে টিয়ারসেল,রাবার বুলেট ও শর্টগান থেকে ফাঁকা গুলি ছুড়ে ৬ ঘন্টা চেস্টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয় এবং অবরুদ্ধ ও হতাহতদের উদ্ধার করে মধুখালি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পাঠানো হয়। পরে নিহতদের ময়না তদন্ত ও গুরতর আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়, গুরুতর আহত ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক।

এই ঘঠনায় বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়।

ঘঠনার বিবরণে জানা যায় বৃহস্পতিবার রাত সাড়ে ৭টার দিকে কয়েকজন যুবক মন্দিরের প্রতিমায় আগুন লাগানো হয়েছে বলে গ্রামের লোকজনকে উত্তেজিত করে তোলে এবং পার্শবর্তী নির্মানাধীন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মান শ্রমিকদের সন্দেহ করে

বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসীকে নিয়ে স্কুলের বারান্দার গ্রীল ও দরজা ভেঙ্গে নির্মান শ্রমিকদের উপর ইট- পাটকেল,রড ও লাঠিসোটা নিয় অতর্কিত বর্বর ও নির্মম হামলা চালালে ঘঠনাস্থলেই দুই সহদরের মৃত্যু হয় এবং বাকী ৫ জন শ্রমিক গুরতর আহত হয়।

বিক্ষুব্ধ জনতা নিহত ও আহতদের স্কুলের ভেতরেই অবরুদ্ধ করে রাখে, এই

ঘঠনার খবর পেয়ে মধুখালি থানা পুলিশ অবরুদ্ধ হতাহতদের উদ্ধার করতে গেলে তাদেরকেও অবরুদ্ধ করে রাখে। পরবর্তীতে ফরিদপুর জেলা ও পার্শ্ববর্তী রাজবাড়ী জেলা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‍্যাব এসে টিয়ারসেল নিক্ষেপ, রাবার বুলেট ও শর্টগান থেকে ফাঁকা গুলি ছুড়ে দীর্ঘ ৬ ঘন্টা পর অবরুদ্ধদের উদ্ধার করে।

একটি বিশ্বস্ত সুত্রে জানা যায় কিছুদিন ধরেই নাকি কিছু উশৃংখল যুবকের নির্মাণ শ্রমিকদের নিকট চাঁদা দাবি করে আসছিল, ধারণা করা হচ্ছে চা্ঁদার টাকা না পেয়েই হয়তো মন্দিরে আগুন দেবার নাটক সাজিয়ে তাদের শায়েস্তা করতে চেশেছিল। কিন্তু পরিস্থিতি এমন বেগতিক হবে হয়তো অনুমান করতে পারেনি।সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন ফুটেজ দেখলে দেখা যায় মন্দির বা প্রতিমার তেমন কোন ক্ষতিই হয়নি।আবার এও দেখা যায় নিহত ও আহতদের অবরুদ্ধ করে রাখা ঘরে কিছু লোক আতংকিত অবস্থায় ঘোরাঘুরি করছে এবং দরজা দিয়ে বাইরে বেরুনোর চেস্টা করছে।

 

ঝিনাইদহ-যশোর মহাসড়কের বিষয়খালী যেন মৃত্যুর ফাঁদ! তাই দ্রুত সড়কটি মেরামত করা না হলে ঘটতে পারে বড় ধরণের দুর্ঘটনা

সবকিছু বিশ্লেষণ করে মনে হচ্ছে এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড।

ঘঠনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেটকে প্রধান করে ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এছাড়া পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রন রাখতে সকাল থেকে ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়ান রাখা হয়েছে।

ফরিদপুর সদর ও পার্শ্ববর্তী জেলা রাজবাড়া থেকে অতিরিক্ত পুলিশ,র‍্যাব এসে টিয়ারসেল,রাবার বুলেট ও শর্টগান থেকে ফাঁকা গুলি ছুড়ে ৬ ঘন্টা চেস্টার পর পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়

 

ফরিদপুরের মধুখালীতে এক মন্দিরের প্রতিমায় আগুন লাগানোকে কেন্দ্র করে বিক্ষুব্ধ লোকজনের পিটুনিতে দুজন শ্রমিকের মৃত্যুর ঘটনার নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম। আজ এক বিবৃতিতে কওমি মাদ্রাসাভিত্তিক এই সংগঠন বলেছে, শুধু সন্দেহের বশে শ্রমিকদের ওপর এই নিষ্ঠুর হামলা চালানো হয়। এ ঘটনা সাম্প্রদায়িক উসকানির শামিল।

হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব সাজিদুর রহমান আজ শনিবার এই বিবৃতি দিয়েছেন। বিবৃতিতে ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্ত দাবি করা হয়েছে।

বিবৃতিতে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য দেশ। এ দেশের অধিবাসীদের ধর্মীয় বিশ্বাসে বৈচিত্র্য থাকলেও আবহমানকাল থেকেই নিজেদের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিদ্যমান। কিন্তু গত পরশু (বৃহস্পতিবার) ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার এক মন্দিরে আগুনের ঘটনায় নিছক সন্দেহের বশে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন নৃশংসভাবে দুজন মুসলিম শ্রমিককে হত্যা ও পাঁচজনকে আহত করে।’

হেফাজতের শীর্ষ দুই নেতা বলেন, ‘এমন জঘন্যতম ঘটনায় আমরা বাকরুদ্ধ। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’

ঝিনাইদহ সদর উপজেলা চেয়ারম্যান প্রার্থী মাসুমের সাথে সাংবাদিকদের মতবিনিময়

হেফাজতের আমির ও মহাসচিব বলেন, মধুখালী থানার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লি গ্রামের কালীমন্দিরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আগুন লাগে। কীভাবে এর সূত্রপাত হয়, তা এখনো জানা যায়নি। সন্ধ্যায় মন্দিরে প্রদীপ জ্বালানোর ১০ থেকে ১৫ মিনিটের মধ্যেই সেখানে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। তখন মন্দিরের পাশের বিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণে সাতজন মুসলিম শ্রমিক ছিলেন। কিন্তু কেউ তাঁদের আগুন দিতে দেখেনি বা আগুন দেওয়ার হীন উদ্দেশ্য থাকতে পারে—এমন সন্দেহ করারও কোনো যৌক্তিক কারণ এখন পর্যন্ত খুঁজে পাওয়া যায়নি। তবু শুধু সন্দেহের বশে ওই শ্রমিকদের ওপর নিষ্ঠুর হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনা স্পষ্টতর সাম্প্রদায়িক উসকানির শামিল।

এ ঘটনা স্পষ্টতর সাম্প্রদায়িক উসকানির শামিল।
বিবৃতিতে হেফাজতের দুই নেতা বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে সরকারের কাছে দাবি জানান।

বিবৃতিতে হেফাজতের দুই নেতা বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে সরকারের কাছে দাবি জানান। তাঁরা বলেন, সরকার যদি এ ক্ষেত্রে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়, আর এর ফলে পরিস্থিতি যদি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, এর দায় সরকারকেই বহন করতে হবে।

বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদ

ফরিদপুরের মধুখালীর পঞ্চপল্লী কালীমন্দিরে আগুন ও গণপিটুনিতে নির্মাণশ্রমিক নিহতের ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের নেতারা। আজ শনিবার এক যৌথ বিবৃতিতে এ নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের গাইডলাইন বাস্তবায়নে জেলা প্রশাসন এবং স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আরো সক্রিয় ভূমিকা পালন করা জরুরী

বিবৃতিতে সম্প্রীতি বিনষ্টকারী ঘটনার সঙ্গে যাঁরা জড়িত, তাঁদের আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিতের দাবি জানানো হয়। পাশাপাশি কোনো নিরপরাধ সাধারণ নাগরিক যাতে অহেতুক হয়রানির শিকার না হন, সে ব্যাপারে সজাগ দৃষ্টি রাখার জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর দাবি জানান দুই সংগঠনের নেতারা।

যৌথ এ বিবৃতি দেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের তিনজন সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য ঊষাতন তালুকদার, নিম চন্দ্র ভৌমিক, নির্মল রোজারিও ও সাধারণ সম্পাদক রানা দাশগুপ্ত এবং বাংলাদেশ পূজা উদ্‌যাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর ও সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা।

১৮ এপ্রিল সংঘটিত ঘটনা রোধে প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা কর্তৃপক্ষের তাৎক্ষণিক ভূমিকার এবং সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিদের এলাকায় সম্প্রীতি রক্ষায় নেওয়া যাবতীয় পদক্ষেপের প্রশংসা করা হয়।

প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার রাতে মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী সর্বজনীন কালীমন্দিরে প্রতিমায় অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এলাকাবাসীর হামলায় চার নির্মাণশ্রমিক আহত হন। পরে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দুই সহোদর আশরাফুল ও আসাদুলের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় তিনটি মামলা হয়েছে। গত শুক্রবার রাতে মধুখালী থানায় এ মামলা তিনটি নথিভুক্ত করা হয়।

ফরিদপুরে দুই সহোদর নিহতের ঘটনায় তিন মামলা

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী এলাকা অনেকটাই পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে। আতঙ্ক ও গ্রেপ্তার এড়াতে গা ঢাকা দিয়েছে ওই এলাকার পুরুষরা। গত বৃহস্পতিবার ওই গ্রামে দুই নির্মাণ শ্রমিক নিহতের পর থেকে থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা এড়াতে পুলিশের পাশাপাশি ৪ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে।

ঘটনার দিন রাত থেকেই ঘটনাস্থলে পুলিশে র‌্যাব, এপিবিএন, ডিবি, গোয়েন্দা সংস্থাসহ সব আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর নজরদারি করছে। এছাড়া ঢাকা থেকেও অতিরিক্ত দুই শতাধিক পুলিশ ঘটনাস্থলে সংযুক্ত করা হয়েছে।

শনিবার (২০ এপ্রিল) মধুখালী থানায় তিনটি মামলা করা হয়েছে। মামলায় অজ্ঞাতসহ অনেককে আসামি করা হয়েছে।

তবে তদন্তের স্বার্থে আসামিদের নাম প্রকাশ করছে না থানা পুলিশ। গত শুক্রবার সকাল থেকেই পুরো এলাকা পুরুষশূন্য হয়ে পড়ে।

সরেজমিনে পঞ্চপল্লীর কৃষ্ণনগর এলাকা ঘুরে ঘটনাস্থলের আশপাশের কোনো বাড়িতেই পরিবারের পুরুষ সদস্যদের তেমন দেখা মেলেনি। আতঙ্কে ও গ্রেপ্তার এড়াতে এমনটি হয়েছে বলে ধারণা করছে আশপাশের এলাকাবাসী।

পুরো এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। নিহত শ্রমিক আশরাফুল (২০) ও এরশাদুলের (১৫) মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে পরিবারের লোকজন দাফন সম্পন্ন করেছে শুক্রবার সন্ধ্যায়।

মধুখালী থানা সূত্র জানিয়েছে, নিহত দুই সহোদরের বাবা ও পুলিশ বাদি হয়ে তিনটি মামলা রুজু হয়েছে। সন্দেহভাজন হিসেবে একজনকে আটক করেছে পুলিশ। হিন্দু অধ্যুষিত পঞ্চপল্লী গ্রামের কালি মন্দিরের কালি প্রতিমায় বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার পর আগুন লাগার ঘটনা ঘটে।

এ ঘটনায় স্থানীয় লোকজন বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। তারা মন্দির থেকে ২০ গজ দূরের পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ওয়াশ ব্লক নির্মাণ কাজে নিয়োজিত চার শ্রমিককে সন্দেহ করে স্কুলের শ্রেণিকক্ষে আটকে রেখে মারধর করে। খবর পেয়ে মধুখালী থানা পুলিশ ও উপজেলা প্রশাসনের কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে গেলে বিক্ষুব্ধরা তাদেরও অবরুদ্ধ করে রাখে। পরে ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে অবরুদ্ধদের উদ্ধার করেন।

আহতদের উদ্ধার করে তিনজনকে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এবং চার জনকে ফরিদপুরের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। চিকিত্সাধীন অবস্থায় মধুখালী উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ঘোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে আশরাফুল (২০) ও তার ভাই আশাদুল (১৫) মারা যায়। আহত আরো দুই শ্রমিক আশঙ্কাজনকভাবে চিকিত্সাধীন রয়েছে।

ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ আলী সিদ্দিকীকে প্রধান করে তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে। শত শত মানুষ এ হামলায় অংশ নেওয়ায় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি ছোড়া হয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার। বিক্ষুব্ধদের ছোড়া ইট পাটকেলের আঘাতে পুলিশের বেশ কয়েকজন সদস্য আহত হয়। এলাকাটি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পুলিশ মোতায়েন থাকবে বলে গতকাল শনিবার জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।

নিহতদের জানাজায় ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলমসহ হাজারো মানুষ অংশ নেয়। কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে নিহত দুই ভাইয়ের জানাজা শেষে সন্ধ্যা ৬টার দিকে চোপেরঘাট কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন করা হয়। গতকাল শনিবার পর্যন্ত ঘটনাস্থল, নিহতদের বাড়িসহ মধুখালী উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন রয়েছে।

পুলিশ সুপার মোর্শেদ আলম বলেন, বিশেষ তদন্ত করে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় থানায় তিনটি মামলা হয়েছে। আসামিদের গ্রেপ্তারের জোর চেষ্টা চলছে।

মন্দিরে আগুন দেয়ার সন্দেহ : সংঘবদ্ধ নির্যাতনে আহত আরো ৪ জন ফুঁসে উঠছে ৯ গ্রামের লোক : এলাকাজুড়ে পুলিশ মোতায়েন

মধুখালীতে গণপিটুনি দিয়ে নির্মাণ শ্রমিক দুই সহোদরকে হত্যা

ফরিদপুরের মধুখালীতে বিক্ষুব্ধের পিটুনিতে আপন দুই সহোদর নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। অভিযোগ এরাই মন্দিরে আগুন দিয়েছে। নিহত দু’জনই নির্মাণ শ্রমিক এবং অন্য ইউনিয়নের লোক। মন্দিরে পাশেই একটি নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানে এরা দুই ভাই নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে এখানে রাত্রি যাপন করে কাজ করতেন।

গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে ওই নির্মাণাধীন প্রতিষ্ঠানের পাশে অবস্থিত মন্দিরে কে বা কারা আগুন দিয়েছে এরকম প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ সাক্ষ্য দেওয়ার মতো কাউকেই পাওয়া যায়নি। অথচ সন্দেহবশত গভীর রাতে ঘুমিয়ে থাকা শ্রমিকদের ঘুম থেকে তুলে স্থানীয়রা প্রচণ্ড নির্যাতন করে। আগুন লাগানোর বিষয় অস্বীকার করায় তাদের মধ্যে তিন যুবকের হাত-পা বেঁধে অমানুষিক নির্যাতন করে। প্রচণ্ড নির্যাতনে নির্মাণ শ্রমিক দুই ভাই ঘটনাস্থলেই নিহত হয়।

সংঘবদ্ধ নির্যাতনে আহত হয় আরো ৪ শ্রমিক। এদের প্রাথমিকভাবে মধুখালী স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি ঘটলে তাদের মধ্যে দু’জনকে ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীর কৃষ্ণনগর গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। এ পঞ্চপল্লী হিন্দু অধ্যুষিত বসতি, যা পাঁচটি গ্রাম নিয়ে গঠিত। নিহতরা হলেন উপজেলার নওপাড়া ইউনিয়নের চৌপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের দুই পুত্র আশরাফুল খান (২১) ও আরশাদুল খান (১৮)। এছাড়া নান্নু মন্ডল ও সিরাজ নামে দু’জন ফরিদপুর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে। ফরিদপুর মেডিকেল ভর্তি শ্রমিকদের সাথে কথা বলে উল্লেখিত তথ্য পাওয়া যায়।

ঝিনাইদহ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মকর্তা-কর্মচারী অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি শুরু

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠেছে স্থানীয়রা। সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে। এলাকাজুড়ে পর্যাপ্ত আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। ফুঁসে উঠছে আশপাশের ৮/৯ গ্রাম। তরতাজা দুটি প্রাণ, আপন দুই ভাই, দুটি মুসলমান ছেলেকে কথিত অভিযোগে সন্দেহের ওপর পিটিয়ে এভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলার ঘটনা কেউ মেনে নিতে পারছেন না। নিহতদের বাড়ীতে চলছে কান্নার রোল। একই মায়ের বুক থেকে দুটি সন্তান হারানো পিতার কাঁধে নিস্পাপ দুটি সন্তানের লাশ। একসাথে দুই সন্তানের শেষ গোসল, এক সাথে পাশাপাশি দুটি কবর বানানোর দৃশ্য দেখে বারবার জ্ঞান হারিয়ে নিরব নিথর হয়ে পড়ছেন সন্তানহারা বাবা- মা।

রাত ১২টায় সরেজমিনে গিয়ে ওই এলাকায় আরো দেখা যায়, মোড়ে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। কেউ ঢুকলে তার পরিচয় জানতে চাচ্ছে পুলিশ। কালীমন্দির এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পঞ্চপল্লী কালি মন্দিরে একটি মূর্তি আগুনে পুড়ে গেছে। তারপাশে একটি নছিমন গাড়িতে আগুন জ্বলছে। তারপাশেই অবস্থিত পঞ্চপল্লী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়টির টয়লেট নির্মাণের কাজ চলছে। বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে শ্রমিকেরা থাকতেন। সেই কক্ষেই সাত জন শ্রমিককে মন্দিরে আগুন দেয়ার সন্দেহে নির্মমভাবে মারধর করে উত্তেজিত হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকেরা। রুমের ভেতর স্পষ্ট রক্তের ছোপ ছোপ দাগ দেখা গেছে।

খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন মধুখালী থানা পুলিশ। পরে আহত শ্রমিকদের উদ্ধারের সময় উত্তেজিতরা পুলিশের উপর হামলার চেষ্টা চালায় জানিয়েছেন পুলিশ। এ সময় ফাঁকা গুলি চালায় পুলিশ। পুলিশের গায়েও উত্তেজিতরা অনেক ইট পাটকেল ছুঁড়ে মারে। পুলিশ আঘাতপ্রাপ্ত হন। পরে রাত ১টার দিকে সেখানে ছুটে যান জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম।

এ ঘটনার বিষয়ে পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, মন্দিরে আগুনের ঘটনা গ্রামে ছড়িয়ে পড়লে লোকজন উত্তেজিত হয়ে সেখানে জড়ো হয়। আগুন দেওয়ার জন্য শ্রমিকদের অভিযুক্ত করে তারা স্কুলে গিয়ে শ্রমিকদের মারধর করে। খবর পেয়ে পুলিশ এসে ফাঁকা গুলি ছুড়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে পলিশ। এতে বেশ কয়েকজন পুলিশ সদস্যও আহত হয়েছেন।

মধুখালি ডুমাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন ইনকিলাবের এই প্রতিবেদককে জানান, পঞ্চপল্লীর একদল মানুষ ওই নির্মাণ শ্রমিকদের পিটিয়ে আহত করে নির্মাণাধীন স্কুল ঘরে আটকে রাখে। স্কুল ভবনের দরজা, জানালা, গ্রিল ভেঙে ফেলে তারা। এ সময় বাইরে থেকে কেউ ওই গ্রামে যেতে পারেনি। সেখানে একটি কালী মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

তপতি মন্ডল নামে ওই গ্রামের এক নারী জানান, তিনি মায়ের ঘরে (কালীমন্দির) সন্ধ্যাবাতি দিচ্ছিলেন, তখন শ্রমিকরা জানালা দিয়ে দেখছিলেন কোনো অসুবিধা হয়েছে কিনা। তারপর আমি বাড়ি গিয়েছিলাম ঘোষি নিতে। তখন ওরা (শ্রমিকরা) রড ওঠানামা করতেছিল আর নিজেরাই বকাবাজি করতেছিল। তারপর আমি চিৎকার শুনতে পাই। এগিয়ে গিয়ে দেখি, মা একদম পুড়ে গেছে। তারপর লোকজন জড়ো হয়ে গেল। এই যা। তারপর কী হলো তা তিনি দেখেননি। এছাড়া কারা মন্দিরে আগুন দিয়েছে তাও তারা কেউ দেখেননি বলে জানান।

এদিকে রাত তিনটার দিকে ফরিদপুর মেডিকেলে ছুটে আসেন নিহতের বাবা-মা, বৃদ্ধ দাদি ও স্বজনরা। এ সময় দুই ছেলের এমন মৃত্যু দেখে চিৎকার শুরু করেন তারা। হাসপাতালটির নতুন ভবনের সামনে বারবার মুর্ছা যেতে দেখা যায় তাদের বাবা শাহজাহান খানকে। কিছুক্ষণ পরপর ‘বাজান বাজান’ বলে চিৎকার করতে থাকেন তিনি।

বৃদ্ধ দাদি গড়াগড়ি করতে থাকেন হাসপাতাল চত্ত্বরে। এসময় নিহতদের চাচাতো ভাই আলমাস খান জানান, ঈদের পরই তারা নির্মাণ কাজে চলে যায়। সেখানেই থাকতো। আজ খবর পাই, ওদের মারধর করেছে হিন্দুরা। পরে হাসপাতালে এসে দেখি দুজনের লাশ। অপরদিকেই রাতেই ওই এলাকার পাশে ঢাকা-খুলনা মহাসড়ক সংলগ্ন কথা হয় কয়েকজনের সাথে। তাদের চোখে-মুখে উত্তেজনা। উত্তেজিত অবস্থায় কথা বলতে থাকেন। এমনকি এর প্রতিশোধ নেয়া হবে বলে জানান তারা।

তবে সহিংসতা বন্ধে সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে বলে জানান জেলা প্রশাসক মো. কামরুল আহসান তালুকদার। তিনি বলেন, পরিস্থিতি এখন শান্ত রয়েছে। কেউ যাতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে না পারে সে জন্য বিজিবি মোতায়েন করা হচ্ছে। স্থানীয় বহু লোক নাম প্রকাশ না করার শর্তে ইনকিলাবকে বলেন, আজ হোক কাল হোক হিন্দুদের সাথে একটা বোঝাপড়া হবে। হিন্দু হয়ে ওরা অন্যায়ভাবে শুধু সন্দেহ করে মুসলমান দুটি ছেলেকে পিটিয়ে এভাবে পিটিয়ে মেরে ফেলল। আমরা কিছুতেই মানতে পারছি না।

তবে এই ঘটনার প্রায় ১২/১৩ ঘণ্টা অতিবাহিত হলেও এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা অথবা কেউ আটক আছে কিনা তা জানা যায়নি।

 

ফরিদপুরের মধুখালীর ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লীতে গণপিটুনিতে দুই নির্মাণশ্রমিক নিহত হয়েছেন। তারা সম্পর্কে আপন দু’ভাই। এ ঘটনায় গণপিটুনিতে আরো পাঁচজন গুরুতর আহত হয়েছে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হাসপাতালে আনার আগে তাদের উদ্ধার করতে যেয়ে আহত হয়েছেন আরো অনেক পুলিশ সদস্য। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে পুলিশ। পুলিশের একাধিক সূত্র সত্যতা নিশ্চিত করেছে।

জানা গেছে, পঞ্চপল্লী গ্রামের একটি কালী মন্দিরে আগুন দেয়ার অভিযোগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নির্মাণশ্রমিকদের গণপিটুনিতে আহত করে মুমূর্ষু অবস্থায় তাদের নির্মাণাধীন একটি স্কুল ভবনের কক্ষে হাত-পা বেঁধে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়।

খবর পেয়ে সন্ধ্যার পরে প্রথমে মধুখালী থানার ইউএনও এবং ওসির নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে তাদের ওপরেও হামলা করে ঘিরে রাখা হয়। এসময় ফরিদপুর ও রাজবাড়ী থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সেখানে পৌঁছালে হামলাকারীরা রণমূর্তি ধারণ করে। তারা ইটপাটকেল ছুঁড়তে থাকে পুলিশকে লক্ষ্য করে। এসময় পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে পুলিশ।

খবর পেয়ে ফরিদপুর থেকে জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম ঘটনাস্থলে ছুটে যান।

প্রায় ছয় ঘণ্টারও বেশি সময় অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকার পর আহতদের উদ্ধার করে মুমূর্ষু অবস্থায় ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। এ ঘটনায় সেখানে রিপোর্ট লেখার সময়েও প্রবল উত্তেজনা বিরাজ করছে। গোটা এলাকায় আতঙ্ক ও উত্তেজনা বিরাজ করছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ওই এলাকার অতিরিক্ত র‌্যাব ও পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। অতিরিক্ত নিরাপত্তার স্বার্থে জেলা প্রশাসন চার প্লাটুন বিজিবি চেয়ে পাঠিয়েছে।

এ ঘটনায় নিহতরা হলেন মধুখালী উপজেলার নওয়াপাড়া ইউনিয়নের ঘোপেরঘাট গ্রামের শাহজাহান খানের ছেলে আশরাফুল (২১) ও তার ভাই আশাদুল (১৫)।

ডুমাইন ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান তপন জানান, পাঁচ গ্রাম নিয়ে সেখানে পঞ্চপল্লী অবস্থিত। এলাকাটি হিন্দু বসতি অধ্যুষিত। এর মাঝে কৃষ্ণনগর নামে এক গ্রামে একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণকাজের জন্য সেখানে কয়েকজন নির্মাণশ্রমিক কাজ করছিলেন। পঞ্চপল্লীর একদল মানুষ ওই নির্মাণশ্রমিকদের পিটিয়ে আহত করে নির্মাণাধীন স্কুল ঘরে আটকে রাখে। স্কুল ভবনের দরজা, জানালা, গ্রিল ভেঙ্গে ফেলে তারা। এসময় বাইরে থেকে কেউ ওই গ্রামে যেতে পারেনি। সেখানে একটি কালি মন্দিরে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।

তপতি মণ্ডল নামে ওই গ্রামের এক নারী বলেন, তিনি মায়ের ঘরে (কালীমন্দির) সন্ধ্যা বাতি দিচ্ছিলেন, তখন শ্রমিকেরা জানালা দিয়ে দেখছিল, কোনো অসুবিধা হইছে কিনা। তারপর বাড়ি গিয়ে আবার প্রয়োজনে আমি আসি। তখন ওরা (শ্রমিকেরা) রড ওঠা-নামা করছিল, আর নিজেদের মধ্যেই গালাগাল করছিল। তারপর বাড়ি যাইয়ে শুনি যে চ্যাঁচামেচি। আগোয় আইসে দেহি যে, মা একদম পুড়ে গ্যাছে। তারপর লোকজন জড়ো হয়ে গেলো। এই যা। তারপর কী হলো তা তিনি দেখেননি বলে জানান। এছাড়া কারা মন্দিরে আগুন দিয়েছে তাও তারা কেউ দেখেননি বলে জানান।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার এ ঘটনায় একাধিক প্রাণহানির সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, খবর পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলের পথে। তবে কী কারণে কতজনের প্রাণহানি হয়েছে তা এই মুহূর্তে সঠিক বলা যাচ্ছে না।

এ ব্যাপারে ব্যস্ত থাকায় মধুখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা কিংবা জেলা পুলিশের দ্বায়িত্বশীল কারো বক্তব্য জানা যায়নি।

তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, পরিস্থিতি মোকাবেলায় ফরিদপুর ছাড়াও পাশের রাজবাড়ী জেলা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ আনা হয়েছে। পাশাপাশি ফরিদপুর থেকে র‌্যাব সেখানে পৌঁছেছে। থেমে থেমে সেখানে ফাঁকা গুলির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। ঘটনাস্থলের প্রায় এক কিলোমিটার দুরে সিধলাজুড়ি নামকস্থানের কাছে অবস্থান নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

ফরিদপুরের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মোর্শেদ আলম বলেন, এখানে কয়েকজন নির্মাণশ্রমিক কাজ করছিল। উত্তেজিত জনতা ভেতরে ঢুকে তাদের লাঠি দিয়ে বেদম প্রহার করে ও ইট দিয়ে থেতলিয়ে গুরুতর আহত করে। খবর পেয়ে মধুখালী থানার ইনচার্জ ফোর্সসহ এখানে আসে। তাদের সাথে মধুখালী উপজেলার ইউএনওও ছিলেন। তারা এখানে এসে উত্তেজিত জনতার হাতে আটকে পড়ে। খবর পেয়ে আমরা ফরিদপুর থেকে অতিরিক্ত ফোর্সসহ এসে তাদেরসহ আহতদের উদ্ধার করে অ্যাম্বুলেন্সে ফরিদপুরে হাসপাতালে পাঠাই। তাদের প্রকৃত অবস্থা কী তা এখনো জানতে পারিনি।

তিনি বলেন, এখনো (রাত ১টার দিকে) আশেপাশে থেকে অনেকে লাইট মারছে, শাউটিং করছে। আমরা সারারাতই পাহারা দেবো।

পুলিশ সুপার বলেন, এ ঘটনায় অনেক পুলিশ আহত হয়েছেন। তাদের দিকে ইটপাটকেল ছুড়ে মারা হয়েছে। আমরা সারারাতই পাহারা দেবো। গ্রামবাসীসহ সকলকে অনুরোধ করবো, কেউ যেনো আইনকে নিজের হাতে তুলে না নেয়। বিষয়টি ঢাকা থেকে আইজি মহোদয় নিজেও সবসময় খবরাখবর রাখছেন বলে জানান তিনি।

ফরিদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল আহসান তালুকদার ঘটনাস্থল থেকে সাংবাদিকদের জানান, এখানে পঞ্চপল্লী গ্রামে একটি কালী মন্দিরে আগুন দেয়ার খবরে ঘটনার সূত্রপাত। গ্রামবাসীর সন্দেহ এখানে একটি নির্মাণাধীন প্রাইমারি স্কুলের নির্মাণশ্রমিকেরা আগুন দিয়েছে। তারা এই শ্রমিকদের বেদমভাবে পিটিয়ে ও ইট দিয়ে থেতলিয়ে গুরুতর আহত করে। তাদের উদ্ধার করে ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। চিকিৎসকেরা তাদের পরীক্ষা করে বলতে পারবেন তাদের মধ্যে কয়জন জীবিত আর কয়জন মৃত রয়েছেন। সবার অবস্থাই খারাপ।

তিনি বলেন, খবর পেয়ে পুলিশ আহতদের উদ্ধার করতে এলে তাদের বাধা দেয়া হয়। তখন কয়েক রাউন্ড গুলি করে তাদের ছত্রভঙ্গ করা হয়েছে।

রাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পঞ্চপল্লী গ্রামে অতিরিক্ত পুলিশ ও র‌্যাব মোতায়েন করা হয়েছে জানিয়ে জেলা প্রশাসক বলেন, সকালে এখানে বিজিবি মোতায়েনের জন্য চার প্লাটুন বিজিবি চাওয়া হয়েছে। মধুখালী ছাড়াও শহরের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিজিবি মোতায়েন করা হবে। কাউকে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীত বিনষ্টের সুযোগ দেয়া হবে না।

কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হাসানুজ্জামান এ ঘটনায় দু’জন নিহতের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, ফরিদপুর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চারজনকে আনা হয়। এর মধ্যে দুজন মারা গেছেন। নিহত একজনের নাম আশরাফুল। বাড়ি মধুখালীর নওপাড়া গ্রামে। এ ঘটনায় আহত আরো তিনজনকে মধুখালী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে।

 

এ ঘটনা স্পষ্টতর সাম্প্রদায়িক উসকানির শামিল।
হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে সরকারের কাছে দাবি জানান।

ফরিদপুরে মধুখালী থানার এক মন্দিরে আগুনের ঘটনায় নিছক সন্দেহের বশে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় নৃশংসভাবে দু’জন মুসলিম শ্রমিককে হত্যা ও পাঁচজনকে আহত করার ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশ।

গতকাল এক বিবৃতিতে সংগঠনের আমির আল্লামা শাহ মুহিব্বুল্লাহ বাবুনগরী ও মহাসচিব আল্লামা শায়েখ সাজিদুর রহমান বলেন, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এক অনন্য দেশ বাংলাদেশ। এ দেশের অধিবাসীদের ধর্মীয় বিশ্বাসে বৈচিত্র্য থাকলেও আবহমানকাল থেকেই নিজেদের মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বিদ্যমান আছে। কিন্তু গত ১৮ এপ্রিল ফরিদপুর জেলার মধুখালীর এক মন্দিরে আগুনের ঘটনায় নিছক সন্দেহের বশে স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায় নৃশংসভাবে দু’জন মুসলিম শ্রমিককে হত্যা ও পাঁচজনকে আহত করার জঘন্যতম ঘটনায় আমরা বাকরুদ্ধ। আমরা এর তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি।

তারা বলেন, ফরিদপুরের মধুখালী থানার ডুমাইন ইউনিয়নের পঞ্চপল্লী গ্রামের কালীমন্দিরে গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আগুন লাগে। কিন্তু কিভাবে এই আগুনের সূত্রপাত হয়েছে তা এখনো নিশ্চিত জানা যায়নি। ওই দিন সন্ধ্যায় মন্দিরে প্রদীপ জ্বালানোর প্রায় ১০-১৫ মিনিটের মধ্যেই সেখানে আগুনের সূত্রপাত ঘটে। তখন মন্দিরের পাশে নির্মাণাধীন বিদ্যালয়ে শুধু সাতজন মুসলিম শ্রমিক ছিলেন। কিন্তু তাদেরকে কেউ আগুন দিতে দেখেনি বা তাদের আগুন দেয়ার হীন উদ্দেশ্য থাকতে পারে এমন সন্দেহ করার কোনো যৌক্তিক কারণ এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। এর পরও শুধু সন্দেহের বশে স্থানীয় হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা তাদের ওপর এই নিষ্ঠুর হামলা চালিয়েছে। এ ঘটনা স্পষ্টতর সাম্প্রদায়িক উসকানির শামিল।

নেতৃদ্বয় আরো বলেন, আমরা হত্যাকাণ্ডের এ ঘটনায় যারপরনাই ব্যথিত ও হতবাক হয়েছি। যারা এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের সাথে জড়িত তাদের ব্যাপারে বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে চিহ্নিত করে অবিলম্বে দোষীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে সরকারের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি। সরকার যদি এ ক্ষেত্রে দ্রুত যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হয়, আর এর ফলে দেশের পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়; তা হলে সরকারকেই তার দায়ভার বহন করতে হবে।

 

 

 

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version