সোহেল রানা ঃ রাজবাড়ীর সঙ্গে পাবনার সরাসরি যোগাযোগের ধাওয়াপাড়া (জৌকুড়া)-নাজিরগঞ্জ নৌপথে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্পোরেশনের (বিআইডব্লিউটিসি) উদ্যোগে ফেরি চলাচল হলেও ভোগান্তির শিকার হচ্ছে যাত্রী ও যানবাহন চালকরা।

২০২৩ সালের ১৪ নভেম্বর জৌকুড়া-নাজিরগঞ্জ নৌপথে ফেরি সার্ভিস সহ নদী বন্দর কার্যক্রম উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শনিবার দুপুর ২টার দিকে সরেজমিন জৌকুড়া ফেরি ঘাটে গিয়ে দেখাযায়, ঘাটে কোন ফেরি নেই।

কয়েকটি ট্রাক, মাইক্রো, প্রাইভেটকার পাড়ের অপেক্ষায় দাড়িয়ে রয়েছে। মোটরসাইকেল চালকরা ট্রলারে আর যাত্রীরা স্পিড বোটে পার হয়ে যাচ্ছে।

ভোগান্তি ও হয়রানীর আরেক নাম জৌকুড়া- নাজিরগঞ্জ নৌরুট

খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, জৌকুড়া-নাজিরগঞ্জ নৌপথে ২টি ফেরি দিয়ে পারাপারের কথা থাকলেও একটি সব সময়ই অলস পড়ে থাকে আর অন্যটি দিয়ে পারাপার করা হয়।

শেখ হাসিনাকে লিবিয়ার প্রধানমন্ত্রীর অভিনন্দন

তবে ২৪ ঘন্টা পারাপার ব্যবস্থা থাকলেও এখানে রাজবাড়ীর জৌকুড়া থেকে সকাল ৯টায়, দুপুর সাড়ে ১২টায় ও রাত ১০ টায় ফেরিছেড়ে যায়।

আর এ সুযোগে ট্রলার ঘাট পরিচালনা করছেন মেসার্স মোস্তাফিজুর রহমান শরীফ। তার লোক এখানে যাত্রী প্রতি ৭০ টাকা ও মোটরসাইকেল ১২০টাকা করে আদায় করছেন।

সবুজ মোল্যার নেতৃত্বে ২৪টি স্পিডবোট যাত্রী প্রতি ১২০ টাকায় পারাপার করছে। ফেরিতে যাত্রী পারাপারে নেওয়া হয় ৩০টাকা। মোস্তাফিজুর রহমান শরীফের ট্রলার ঘাট পরিচালনার দায়িত্বে থাকা প্রতিনিধি নাম না প্রকাশ করে বলেন, তারা এখানে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় থেকে লীজ নিয়ে ট্রলার পরিচালনা করছেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৪ প্রার্থী চূড়ান্ত করেছে আওয়ামী লীগ

তারা দীর্ঘদিন এ ঘাট লীজের মাধ্যমে পরিচালনা করছেন। তবে স্পিডবোট কারা পরিচালনা করছে, কিভাবে করছে জানা নেই। স্পিডবোটের পরিচালনাকারী মামুন মিয়া বলেন, বিআইডব্লিউটিএর অনুমতি নিয়ে স্পিড বোট পরিচালনা করা হচ্ছে। তাদের দুইপারে ২৪টি স্পিডবোট রয়েছে।

ট্রাক ড্রাইভার আঃ আলিম বলেন, ঘাটে আসতে এক বাজে। প্রায় দেড় ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করলেও কোন ফেরির দেখা মেলেনি। কোন টার্মিনাল না থাকায় ঘাটের গাড়ী দাড় করে রাখা হয়। তারপরও টার্মিনাল চার্জ দিতে হয়। ফেরি সার্ভিস তাদের ইচ্ছামতো পরিচালনা করেন।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৪ রাজবাড়ী-১ আসনে দুই স্বতন্ত্র প্রার্থীর মনোনয়নপত্র সংগ্রহ

প্রাইভেটকার চালক সুমন হোসেন বলেন, আসলে সহজপথ দিয়ে পার হতে গিয়ে এখন দেড় ঘন্টার বেশি দাড়িয়ে আছি, কখন ফেরি আসবে জানি না। ঘাটের কাউকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মানুষের চলাচলের সুবিধার্থে সরকার এ ফেরি সার্ভিস চালু করলেও এখানে শুধুই ভোগান্তি। এটা দেখার কেউ নেই।

ট্রলারে পার হওয়া রাহেলা বেগম, আনিস হোসেন বলেন, সরকার আমাদের সুবিধার জন্য এখানে দু’টি ফেরি চালু করলেও আমাদের যাতায়াতের কোন উন্নতি হয়নি। আগেও ট্রলারে পার হয়েছি, এখনও ট্রলারে পার হচ্ছি। এ দিকে নজর দিবেন কে?। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণের দাবী জানাচ্ছি।

চন্দনী ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুর রব বলেন, মূলত পণ্য পরিবহনের জন্য এ নৌপথ বেশি ব্যবহার করা হয়। দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলার সাথে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জেলার যাতায়াতের সহজপথ এ নৌপথ। এ নৌপথ দিয়ে প্রতিদিন রাজবাড়ী ছাড়াও ফরিদপুর, মাদারীপুর, পিরোজপুর, বরিশাল, গোপালগঞ্জসহ আশেপাশের জেলাগুলোর বাস ও মালবাহী ট্রাক পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রাজশাহী, রংপুর, নাটোরসহ বিভিন্ন জেলায় যাতায়াত করে।

ঝিনাইদহে ট্রাকের ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী নিহত

এ পথে বাস ও ট্রাক ছাড়াও মাইক্রোবাস, মোটর সাইকেলসহ ছোট-বড় বিভিন্নধরনের যানবাহন যাতায়াত করে। এ ঘাটে শুধু যাত্রী হয়রানী আর পকেট কাটছে। কোন টার্মিনাল না থাকলেও চার্জ কেটে রাখে।

আগে অনেক গাড়ীর চাপ থাকলেও নিয়মিত ফেরি চলাচল না করায় দিন দিন গাড়ীর সংখ্যা কমছে। বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআইডব্লিউটিএ) অতিরিক্ত পরিচালনক এ কে এম আরিফ উদ্দিন বলেন, এ নৌরুটটি আগে সড়ক ও জনপথ বিভাগ পরিচালনা করতো।

ছোট ছোট ফেরী চলাচল করতো। তবে নানা কারণে ফেরী চলাচল ব্যাহত হতো। রাতে ফেরী চলাচল করার কোনো সুযোগ ছিল না। এতে করে যোগাযোগ ব্যাহত হতো। দক্ষিণবঙ্গের মানুষের উত্তরবঙ্গে যাতায়াত করার ক্ষেত্রে ১২০ কিলোমিটার থেকে ২০০ কিলোমিটার অতিরিক্ত পথ পাড়ি দিতে হতো।

তিনি বলেন, নিয়মিত যানবাহন থাকা সাপেক্ষে দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ফেরী চলাচল করবে। ২টি ফেরি থাকবে। তবে যানবাহনের চাপ থাকলে ফেরির সংখ্যা আরও বাড়ানো হবে। নদীর উভয়প্রান্তে ভৌত অবকাঠামোগত উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালিত হবে। যাত্রী সেবার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম হাতে নেওয়া হবে। টার্মিনাল স্থাপিত হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা খুলনায় ২৪টি উন্নয়ন প্রকল্পের উদ্বোধন, ৫টি প্রকল্পের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছেন

ঘাট সংশ্লিষ্ট সুত্রে জানাগেছে, গত বৃহস্পতিবার রাতে ১০টি গাড়ি ও বেশ কয়েকজন যাত্রী নিয়ে পাবনার নাজিরগঞ্জ ঘাট থেকে যাত্রা শুরু করে ফেরি ক্যামেলিয়া।

পরে রাত সাড়ে ৮টার দিকে পদ্মা নদীর মাঝে ফেরিটি ডুবো চরে আটকে যায়। ডুবো চরে আটকে পরা ফেরিটির যাত্রী ও যানবাহনের কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি।

ফেরিতে থাকা যাত্রীরা চরম আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। বিশেষ করে নারী ও শিশু যাত্রীরা চরম হতাশায় পড়ে যায়। অনেকেই ঘাট পাড়ের লোকজনকে ফোন করে বিষয়টি অবহিত করেন। ফেরীর যাত্রীদের হালকা খাবার ও পানীয় জলের ব্যবস্থা করা হয়।

বিআইডব্লিউটিসি নাজিরগঞ্জ-ধাওয়াপারা রুটের ম্যানেজার মোহাঃ মহিউদ্দিন রাসেল বলেন, ফেরিটি রাত সাড়ে ৮টার দিকে পদ্মা নদীর মাঝপথে ডুবো চরে আটকা পড়ে।

মূল চ্যানেল থেকে ৫০ ফিট দূরে সরে যাওয়ায় ফেরিটি ডুবো চরে আটকে পড়ে। তিনি বলেন, খবর পেয়ে উদ্ধারকারী জাহাজ ক্ষণিকা ও উদ্ধারকারী টাগবোট ১২ ঘণ্টা পর শুক্রবার সকাল ৯ টার দিকে ফেরিটিকে ধীরে ধীরে ধাওয়াপারা ঘাটে টেনে নিয়ে আসে।

তবে ফেরির কোনো যাত্রী বা যানবাহনের ক্ষতি হয়নি। তিনি আরও বলেন, ঘাটের সকল অনিয়ম খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। গত কয়েকদিনে পদ্মায় পানির প্রবাহ কমে যাওয়ায় নদীতে নাব্যতা সংকটের সৃষ্টি হওয়ায় ফেরি চলাচলে বিঘœ ঘটছে। ইতোমধ্যে নাজিরগঞ্জ- ধাওয়াপারা রুটে ড্রেজিং শুরু হয়েছে।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version