বসির আহাম্মেদ, ঝিনাইদহ- ঝিনাইদহে মাঠের পর মাঠ দিগন্ত বিস্তীর্ণ বিশাল সরিষার ভান্ডারে পরিণত, এ যেন এক হলুদের সমারহ। ঝিনাইদহ জেলা জুড়ে এবার সরিষার বিপ্লব হয়েছে। মাঠের পর মাঠ কৃষকরা তাদের ক্ষেতে সরিষার চাষ করেছেন। জেলার ৬ টি উপজেলার মাঠের পর মাঠ দিগন্ত বিস্তীর্ণ এক বিশাল সরিষার ভান্ডারে পরিণত হয়েছে। সরিষা গাছও ভালো হয়েছে। জেলার সব এলাকার মাঠে এখন সরিষা ফুলে ফুলে ভরে আছে, এ যেন হলুদের সমারহ। ছয়াইল ও ফুরসন্ধী গ্রামের মাঝে এক মাঠেই সাড়ে ৩’শত হেক্টর জমিতে সরিষার চাষ হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ জানিয়েছে দৃষ্টিনন্দন এই সরিষা ক্ষেতে অনেকেই বেড়াতে আসছেন, আবার অনেকেই শখের বসে ছবি তুলছেন।

কোটচাঁদপুরে নিখোঁজের ১৮ ঘন্টা পর নারীর লাশ উদ্ধার

কৃষকরা বলছেন, গত বছর সরিষায় ভালো দাম পাওয়ায় এবছর তারা বেশি বেশি চাষ করেছেন। আর কৃষি বিভাগ বলছেন এবছর সরিষায় এক প্রকার বিপ্লব হতে চলেছে। প্রাকৃতিক কোনো বিপর্যয় না ঘটলে কৃষকরা এবার অতিরিক্ত ফসল ঘরে তুলবেন। কৃষি বিভাগ মনে করেন ঝিনাইদহ জেলা শস্য উৎপাদনশীল একটি জেলা। এখানে সব ধরনের শস্য উৎপাদন হয়। যে কারনে এই জেলাকে শয্য ভান্ডার বলা হয়ে থাকে।

 

হরিণাকুন্ডুতে ১২ বছর ধরে জাল এনটিআরসিএ সনদে চাকরী এক স্কুল শিক্ষিকার!

প্রসঙ্গত, আমাদের দেশে ভোজ্য তেল উৎপাদনে সরিষার ভুমিকা অনশিকার্য। রান্না করা, গায়ে মাখা, পিঠা তৈরী, ভর্তা খাওয়াসহ নানা খাবারে আমরা সরিষার তেল ব্যবহার করে থাকি। ঝিনাইদহে এবার সেই সরিষার চাষ লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। সরিষা গাছ দেখে কৃষকরা ও কৃষি বিভাগ উভয়ই বাম্পার ফলনের আশা করছেন। তাদের সামনে এখন সরিষার ক্ষেত, যা মাঠের পর মাঠ জুড়ে সবুজের মাথায় যেন হলুদ ফুলের সমারহ। অনেক স্থানে যতদুর চোখ যায় শুধুই সরিষা ফুল আর ফুল। এতে মনে হয় হলুদের এক সমারহ।

ঝিনাইদহে মাঠের পর মাঠ দিগন্ত বিস্তীর্ণ বিশাল সরিষার ভান্ডারে পরিণত, এ যেন এক হলুদের সমারহ

 

ঝিনাইদহ জেলার বিভিন্ন এলাকার মাঠে গিয়ে দেখা যায় মাঠের পর মাঠ হলুদ হয়ে আছে সরিষার ফুলে। সরিষা গাছে ফুল ফুটেছে, এখন সেখানে সরিষা দানা বাঁধবে। একাধিক কৃষকের সঙ্গে কথা বললে তারা জানান, গত বছর সরিষার ভালো দাম পেয়েছিলেন যে কারনে এবার বেশি বেশি চাষ করেছেন। তাছাড়া কৃষি বিভাগ থেকেও এ বছর সরিষা চাষে উদ্বুদ্ধ করা হয়েছে, দেওয়া হয়েছে  সুপরামর্শ। সদর উপজেলার হলিধানী গ্রামের কৃষক আলা উদ্দিন জানান,  অক্টোবরের মাঝামাঝি থেকে নভেম্বরের শেষ পর্যন্ত সরিষার চাষ করা যায়। এই চাষে সার, কীটনাশক ও সেচ কম লাগায় স্বল্প খরচে অধিক ফসল পাওয়া যায়। আমাদের দেশে সাধরনত বারি ৬,৭,৮,৯,১০, ১১,১২, ১৩,১৪,১৫,১৭, বিনা-৪,৭,৮,৯,১০ টরি-৭, রায়-৫, দৌলত, কল্যাণীয় ও সোনালী জাতের সরিষা চাষ হয়ে থাকে। এর মধ্যে বারি-৯,বিনা-৪ ও টরি-৭ জাতের চাষ বেশি হয়। তিনি আরো জানান, ভিন্ন ভিন্ন এলাকায় মাটির ভিন্ন গুনগুন রয়েছে। সেই মাটির গুনাগুন বিচার করে কৃষকরা একেক এলাকায় একেক জাত চাষ করে থাকেন।

ঝিনাইদহের ট্রাকসহ বিপুল পরিমান পলিথিন জব্দ, আটক-২

কালীগঞ্জ উপজেলার বারোবাজার কাষ্ঠভাঙ্গা মাঠে কথা হয় কৃষক কামরুল ইসলামের সাথে তিনি জানান, সরিষা চাষের বড় শত্রু কাটুই পোকা ও জাব পোকা। এছাড়া আরোবাংকি, কান্ড পচাঁ বা হোয়াইট মোন্ড, ডাউনি মিলভিউ ও পাতা ঝলসানো রোগ অন্যতম। কিন্তু এবছর তাদের ক্ষেতে এগুলোর কোনোটাই দেখা যায়নি। তাছাড়া কৃষি বিভাগের কর্মকর্তারা তাদের সব সময় সহযোগীতা করার কারনে তারা ক্ষেত সঠিক ভাবে পরিচর্জা করেছেন। যে কারণে তারা রোগ বালাই মুক্ত সরিষা ঘরে তুলতে পারবেন বলে এমনটি আশা করছেন।

ঝিনাইদহে মাঠের পর মাঠ দিগন্ত বিস্তীর্ণ বিশাল সরিষার ভান্ডারে পরিণত, এ যেন এক হলুদের সমারহ

কোটচাঁদপুরের গুড়পাড়া মাঠে কথা হয় কৃষক শরিফ আহমেদ এর সাথে তিনি জানান, এক বিঘা জমিতে সরিষার চাষ করতে জমি তৈরিতে ১ হাজার টাকা, আগাছা পরিষ্কারে ৩ হাজার টাকা, সার ক্রয়ে ১২ শত টাকা, ক্ষেত থেকে ফসল উঠানো ও পরিষ্কারে ১ হাজার ৫ শত টাকা ও বীজ ক্রয়ে ১ শত টাকা খরচ হয়। সব মিলিয়ে এ বছর তাদের খরচ হয়েছে বিঘায় ৬ হাজার ৮ শত টাকা।  বিঘায় সরিষা পাবেন ৩ মন, যা বাজারে বিক্রি করলে ৯ থেকে ১০ হাজার টাকা বিক্রি হবে।

ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম মিয়া বলেন, সরিষার হলুদ ফুল প্রকৃতিতে শোভা বর্ধনে যেন নব সাজে সাজিয়েছে সমস্ত মাঠ। হলুদ ফুলের সৌরভ বিমোহিত করছে মানুষকে। মৌমাছি মাতোয়ারা হয়েছে ফুলের মৌ মৌ গন্ধে। ফুল থেকে ফুলে মধু সংগ্রহকারী মৌমাছি দলবেঁধে ঘুরছে সারা মাঠ জুড়ে। মধু সংগ্রহকারীরাো মাঠে মাঠে মধু সংগ্রহ করছেন। এমন মধুময় দৃশ্য লক্ষণীয় এখন ঝিনাইদহের মাঠে মাঠে।

ঝিনাইদহে ৫ হাজার শীতার্তদের মাঝে কম্বল বিতরণ

ঝিনাইদহ কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালক আজগর আলী জানান, তিন বছরের মধ্যে চাহিদার ৪০ ভাগ তেল জেলায় উৎপাদন হবে সেই লক্ষ্য নিয়ে তারা কাজ করে যাচ্ছেন। ইতিমধ্যে দুই বছর পার করছেন, এতেই তারা চাষ প্রায় দেড় গুণের অধিক করতে সক্ষম হয়েছেন। আগামী মৌসুমে আরো বৃদ্ধি পাবে বলে আশা করছেন। তিনি আরো বলেন জেলায় ৩৮ জন কৃষকের মধ্যে প্রতি বিঘায় ১ কেজি বীজ ও ২০ কেজি সার প্রদান করা হয়েছে। বৃষ্টিপাত কম হওয়ায় দ্রুত চাষ করা সম্ভব হয়েছে। কৃষি বিভাগের পরামর্শে সময় মত চাষ করায় এ বছর কৃষক কাঙ্খিত ফসল ও ন্যায্য দাম পাবেন বলে আশা করছেন। তার ধারনা সরিষা চাষের উপযোগী মাটি, অনুকূল পরিবেশ, কৃষি বিভাগ থেকে সুপরামর্শ ও উৎসাহ প্রদান, সময় মত প্রণোদনার বীজ ও সার কৃষকের মাঝে বিতরণের কারনে কৃষকদের মাঝে সরিষা চাষের আগ্রহ বাড়িয়েছে।

ঝিনাইদহে বিএনপির কালো পতাকা মিছিল ও সমাবেশ

ঝিনাইদহ কৃষি বিভাগ সুত্রে জানা গেছে, এ বছর ঝিনাইদহ জেলায় কৃষক পর্যায়ে ১২ হাজার হেক্টর জমিতে সরিষার চাষের লক্ষ্যমাত্রা নিদ্ধারন করা হয়েছিল। সেখানে চাষ হয়েছে ১৮ হাজার ৫’শত ৭২ হেক্টর। যার মধ্যে সদর উপজেলায় ৩ হাজার ৫’শত ১০ হেক্টর, কালীগঞ্জে ১ হাজার ৭’শত ৭৮ হেক্টর, কোটচাঁদপুরে ৪’শত ৭৮ হেক্টর, মহেশপুরে ৯’শত ৬০ হেক্টর, শৈলকুপায় ৩ হাজার ৭’শত ৩৫ হেক্টর ও হরিনাকুন্ডু উপজেলায় ৩ হাজার ৪৫ হেক্টর। এছাড়া আরো ৩৮ হাজার কৃষককে সরকারের প্রনোদনার মাধ্যমে ৩৮ হাজার বিঘা অর্থাৎ ৫ হাজার ৬৬ হেক্টরে সরিষা চাষ করা হয়েছে। এ জমিতে সরিষা উৎপাদন হবে ২৬ হাজার ৩’শত ৭৪ মেঃ টন বলে কৃষি বিভাগ আশা করছেন। গত মৌসুমে চাষ ছিল ১১ হাজার ১’শত ১২ হেক্টর জমি। এ বছর গত বছরের তুলনায় ৭ হাজার ৪’শত ৬০ হেক্টর বেশি চাষ হয়েছে।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version