নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রতিবাদ: শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধের দাবি

উদ্দেশ্য ও প্রেক্ষাপট: কোটা সংস্কার আন্দোলন চলাকালে শিক্ষার্থীদের গ্রেপ্তার ও হয়রানি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকেরা এক গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশ আয়োজন করেছেন। এই আন্দোলনের সময় চলমান সহিংসতা ও নিরাপত্তাহীনতার প্রেক্ষাপটে তাঁরা শিক্ষার্থীদের প্রতি সম্পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে তাদের অধিকার রক্ষার আহ্বান জানিয়েছেন।

সমাবেশের আয়োজন ও অংশগ্রহণ: মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরার নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে অনুষ্ঠিত এই সমাবেশে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫০ জনেরও বেশি শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন। সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের হাতে ছিল বিভিন্ন প্ল্যাকার্ড, যার মাধ্যমে তাঁরা নিজেদের বক্তব্য তুলে ধরেন। প্ল্যাকার্ডগুলোতে লেখা ছিল: ‘নিরস্ত্র ছাত্র হত্যার বিচার চাই’, ‘দমন ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা’ এবং ‘শিক্ষার্থীদের পাশে শিক্ষক’।

শিক্ষকদের বক্তব্য:

  1. অধ্যাপক নোভা আহমেদ: ইলেকট্রিক্যাল ও কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক নোভা আহমেদ বলেন, “শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়ানো আমাদের নৈতিক দায়িত্ব। তারা বর্তমানে মারাত্মকভাবে আহত হচ্ছে এবং গ্রেপ্তার হচ্ছে। এ ধরনের ভয়ভীতি দীর্ঘমেয়াদে তাদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে। আমরা চাই এই ধরনের অবস্থা দ্রুত সমাধান হোক।”
  2. অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম: স্থাপত্য বিভাগের অধ্যাপক সাইফুল ইসলাম মন্তব্য করেন, “একজন শিক্ষকের দায়িত্ব শুধুমাত্র ক্লাসরুমে সীমাবদ্ধ নয়। আমাদের দায়িত্ব শিক্ষার্থীদের একজন নৈতিকভাবে সঠিক ব্যক্তি হিসেবে গড়ে তোলা।”
  3. জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মুশাররাত শর্মি: ইংরেজি বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক মুশাররাত শর্মি বলেন, “যদি ক্যাম্পাসের সামনে থেকে শিক্ষার্থীদের প্রিজন ভ্যানে তুলে নেওয়া হয়, তাহলে তারা কিভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসবে? এটি তাদের মনোবল ভেঙে দেবে।”
  4. জ্যেষ্ঠ প্রভাষক সাকিব রহমান: আইন বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রভাষক সাকিব রহমান জানান, “অ্যাডভোকেসি করার জন্য নাগরিকদের সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে। রাষ্ট্রকে অবশ্যই এই অধিকার প্রয়োগ করতে বাধা দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।”

নিরপেক্ষতার আহ্বান: এই সমাবেশের মাধ্যমে শিক্ষকদের দাবি, শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে চলমান গ্রেপ্তার ও হয়রানি বন্ধ করা হোক এবং তাঁদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হোক। শিক্ষার্থীদের সুরক্ষায় সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সচেতন ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

পরিস্থিতির উন্নতি: অভিযোগ উঠেছে যে, আন্দোলনের প্রেক্ষাপটে বিভিন্ন শিক্ষার্থী গ্রেপ্তার ও হয়রানি শিকার হচ্ছেন, যা তাঁদের নিরাপত্তা ও মৌলিক অধিকারকে বিপন্ন করছে। শিক্ষকদের এ সমাবেশটি এই পরিস্থিতির অবসান এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার জন্য একটি শক্তিশালী পদক্ষেপ হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।

সংগঠন ও সমর্থন: শিক্ষকরা তাঁদের সমর্থন ও সহানুভূতি প্রকাশ করে জানিয়েছেন যে, শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতির বিষয়টি শুধু একটি সমাবেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং ভবিষ্যতে আরো কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে এ আন্দোলনের প্রতি তাদের সমর্থন বজায় থাকবে।

এই ধরনের উদ্যোগ এবং বক্তৃতা জনসাধারণের মধ্যে শিক্ষার্থীদের প্রতি সহানুভূতি ও সচেতনতা বৃদ্ধির পাশাপাশি আন্দোলনের প্রতি গণমাধ্যম এবং অন্যান্য পক্ষের মনোযোগ আকর্ষণ করবে।

Shober Kotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version