ঝিনাইদহের দুই পরিবারের স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার সাব্বির ও প্রকৌশলী রাকিবের মায়েদের কান্না যেন থামছেই না

ঝিনাইদহের দুই পরিবারের জীবনে একটি গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সাব্বির হোসেন (২৩) ও প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান (২৯) এর মায়েদের চোখে অশ্রু থামছেই না। তাঁদের সন্তান হারানোর দুঃখ ও শোকে, প্রতিটি রাত যেন অবসানহীন অপেক্ষার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে। সাব্বির ও রাকিবুল ছিলেন বেসরকারি চাকরিজীবী এবং তারা কোটা আন্দোলনের সময় ঢাকায় পৃথক স্থানে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। তাদের হতাহতের ঘটনায় পরিবারগুলোর মানসিক ও আর্থিক অবস্থার ওপর গভীর প্রভাব পড়েছে।

সাব্বির হোসেনের মৃত্যু:

মীর্জাপুর গ্রামের আমোদ আলীর ছেলে সাব্বির হোসেন গত ১৮ জুলাই ঢাকার উত্তরায় ঔষুধ কিনতে বের হলে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। তার মৃত্যুর পর ১৯ জুলাই সকাল ১০টার দিকে মীর্জাপুর গ্রামে তার দাফন সম্পন্ন হয়। সাব্বির উত্তরার ১৩ নং সেক্টরের অর্গান লিমিটেড কেয়ার নামক প্রতিষ্ঠানে চাকরি করতেন। ঘটনার সময়, গুলিতে আহত হয়ে তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন। সাব্বিরের পরিবারের সদস্যরা এখন একেবারেই বিপর্যস্ত। তার একমাত্র বোন সুমাইয়া খাতুন জানাচ্ছেন, সাব্বিরের কোনো রাজনৈতিক সম্পৃক্ততা ছিল না এবং তিনি শুধু চাকরি করে পরিবারের দায়িত্ব পালন করতেন। তার মৃত্যুতে পরিবারে গভীর শোকের ছায়া নেমে এসেছে এবং তারা এখন খুঁজে চলেছেন ন্যায়ের আশ্বাস।

ঝিনাইদহে কোটা বিরোধী আন্দোলনের শিক্ষার্থীদের উপর ছাত্রলীগের হামলা, আহত-৫

রাকিবুল হাসানের মৃত্যু:

ঝিনাইদহ শহরের চাকলাপাড়ার সাবেক বিমান বাহিনীর মাষ্টার ওয়ারেন্ট অফিসার আবু বকর সিদ্দিকীর ছেলে প্রকৌশলী রাকিবুল হাসান ১৯ জুলাই রাতে গুলিতে নিহত হন। মিরপুর ১০ নং সেক্টরে একটি পথচারি নারীকে রক্ষা করতে গিয়ে তিনি গুলিবিদ্ধ হন। মিরপুর-৬ এলাকায় ডাঃ আজমল হাসপাতালে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। রাকিবুল লন্ডনভিত্তিক বহুজাতিক কোম্পানি টাইগার রিস্ক ম্যানেজমেন্টে কর্মরত ছিলেন। মৃত্যুর পর তার পরিবার এখন শোক ও দুঃখের মধ্যে রয়েছে। তার মা হাফিজা খাতুন এবং বাবা আবু বকর সিদ্দিকের কষ্টের কোনো শেষ নেই। পরিবারটি এখন আর্থিক ও মানসিক বিপর্যয়ের মধ্যে আছে, এবং তাদের হারানো ছেলের স্মৃতি নিয়ে কাটাচ্ছে দিন।

ঝিনাইদহে এক কৃষককে জবাই করে হত্যা

পরিবারের অনুভূতি:

সাব্বিরের মা রাশিদা খাতুন ও তার পিতা আমোদ আলী সাব্বিরের হত্যার জন্য ন্যায়বিচার দাবি করছেন। তাদের মতে, সাব্বির কোনো রাজনৈতিক আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেননি, শুধুমাত্র তার কর্মস্থলে গিয়েছিলেন। একইভাবে, রাকিবুল হাসানের পরিবারও ন্যায়বিচারের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের মতে, রাকিবুল কখনো কোনো সংঘাতমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন না এবং তিনি একজন শালীন ব্যক্তি ছিলেন।

অর্থনৈতিক ও সামাজিক প্রভাব:

উভয় পরিবারই এই দুঃখজনক ঘটনাগুলোর পর কঠিন আর্থিক ও সামাজিক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। নিহতদের পরিবারের সদস্যরা, যারা এখন প্রিয়জন হারানোর দুঃখ এবং আর্থিক সংকটে রয়েছেন, তাদের সাহায্য ও সমর্থনের প্রয়োজন।

সরকারি সাড়া:

এখনো পর্যন্ত সরকারি পক্ষ থেকে কোনো ধরনের সাহায্য বা সহযোগিতার প্রস্তাব পাওয়া যায়নি, যা পরিবারের সদস্যদের কষ্টের পরিমাণ আরও বাড়িয়ে তুলেছে। এই পরিস্থিতিতে, যারা নিহতদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করতে চান বা তাদের পরিবারের সহায়তায় এগিয়ে আসতে চান, তাদের সহায়তা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

কালীগঞ্জে ফেন্সিডিলসহ মাদক ব্যবসায়ী আটক

উল্লেখযোগ্য যে, এই ঘটনা দুটি পরিবারকেই শুধু নয়, পুরো সমাজকে গভীরভাবে আলোড়িত করেছে এবং এর প্রতিবিধানে সুষ্ঠু ব্যবস্থা গ্রহণের প্রয়োজন।

Shober Kotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version