স্টাফ রিপোর্টার ঃ রেলের শহর হিসেবে খ্যাত রাজবাড়ী। এক সময় এখানে
রেলওয়ের রমরমা অবস্থান থাকলেও এখন রয়েছে নাজুক অবস্থায়। এখানে বেদখলে
রয়েছে বাংলাদেশ রেলওয়ের শত শত একর জমি ও স্টাফ কোয়ার্টার। রেলওয়ের কিছু
কর্মকর্তা-কর্মচারীর যোগসাজশে দিনের পর দিন এসব সম্পত্তি দখল করেছে
প্রভাবশালী কিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। দখলকৃত জমির কোথাও মার্কেট,
কোথাও বাজার আবার কোথাও বস্তি গড়ে উঠেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল
ও সংগঠনের কার্যালয়ও রয়েছে রেলওয়ের জমিতে।
রাজবাড়ীতে রেলওয়ের প্রায় ৫৫৫ একর জমি ও ৩৪৬টি কোয়াটার দীর্ঘ দিন
ধরে বেদখল হয়ে আছে। অভিযোগ উঠেছে রেলওয়ের অসাধু কর্মকর্তাদের
যোগসাজশে কয়েক হাজার কোটি টাকার সরকারি সম্পত্তি দিন দিন
হাতছাড়া হলেও অদৃশ্য কারণে নিরব রয়েছে রেলওয়ে প্রশাসন।
অভিযোগ আছে স্থানীয় প্রভাবশলীরা এসব জমি দখল করে গড়ে তুলছেন বসত
বাড়ি, মার্কেট ও মাছের খামার। এছাড়াও রাজবাড়ী থেকে বিভিন্ন রুটে
চলাচলকারী ট্রেনে যাত্রী সেবার মান নিয়েও রয়েছে নানা অভিযোগ।
রাজবাড়ী রেলওয়ে বিভাগের তথ্যমতে, রাজবাড়ীতে রেলওয়ের জমির পরিমাণ প্রায়
১ হাজার ৭০৩ একর। এর মধ্যে রেললাইন, স্টেশন, ব্রিজ, বিভিন্ন কোয়ার্টার ও
স্থাপনাসহ অপারেশনাল জমির পরিমাণ ১ হাজার ৪০ একর। নদীগর্ভে বিলীন হয়ে
গেছে প্রায় ৯১ একর জমি। আর জেলা প্রশাসনের আওতায় রয়েছে প্রায় ১৫
একর জমি। বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ব্যবসা এবং বিভিন্ন কারণে
লাইসেন্স বা লিজ দেওয়া হয়েছে ১ দশমিক ২৬ একর জমি। এর বাইরে মৎস্য ও

কৃষিসহ অন্যান্য কাজে ব্যবহৃত প্রায় সবই রয়েছে অবৈধ দখলে। বেদখল হয়ে
যাওয়া এই বিপুল পরিমাণ জমির মূল্য শত কোটি টাকা। অন্যদিকে
রাজবাড়ীতে রেলওয়ের ৪৬৫টি স্টাফ কোয়ার্টারের মধ্যে ৩৪৬টি কোয়ার্টার
অবৈধভাবে ব্যবহার করছে সাধারণ মানুষ। আবার এসব কোয়ার্টারের মধ্যে
কেউ কেউ একাধিক কোয়ার্টার দখল করে ভাড়া দিয়ে পুরো টাকাই ভরছে
নিজের পকেটে।
রাজবাড়ী উদিচি শিল্পী গোষ্ঠির সাধারণ সম্পাদক আজিজুল হাসান খোকা
অভিযোগ করে বলেন, ‘এক সময় রাজবাড়ী থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত ট্রেন
চলাচল করলেও এখন এ রেল লাইন প্রায় মৃত।’
জেলা শহরের স্টেশন এলাকায় গিয়ে কথা হয় ওই এলাকার বাসিন্দা মোঃ
হাফিজুলের সঙ্গে। তিনি অভিযোগ করে বলেন, ‘রাজবাড়ী এক সময় রেলের
শহর হিসেবে পরিচিত ছিল। ওই সময় এখানে রেলওয়ের জমজমাট অবস্থা থাকলেও
এখন নাজুক। কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় বেদখল হয়ে গেছে রেলওয়ের স্টাফ
কোয়াটার। কেউ কেউ এসব সরকারি কোয়াটার দখল করে ভাড়াও দিয়েছেন।
এছাড়াও দিনের পর খোলা জায়গায় থেকে নষ্ট হচ্ছে রেলওয়ের কোটি কোটি
টাকার মালবাহী গাড়ি।
শহরের নিউ কলোনি এলাকায় রেলওয়ে কোয়াটারে বসবাসরত আলী আকবর
ফকির বলেন,‘এক সময় আমার দাদা রেলওয়েতে চাকরি করতো। সেই সুধাদে
এই কোয়াটারটি আমি পেয়েছি। এই কোয়াটার এখন বসবাসের অযোগ্য
হয়ে গেছে তাই পাশেই একটি পাকা ঘর তুলে বসবাস করছি।’ তবে রেলওয়ে
থেকে তিনি কোনও জমি লিজ নেননি বলে জানান।
রাজবাড়ীর রেলওয়ে শ্রমিক লীগ শাখার সভাপতি মোঃ মোসলেম উদ্দিন বলেন,
নতুন চাকরিতে যোগদানকারী ২৮ জন কর্মকর্তার জন্য কাগজে কলমে
২৮টি বাসা বরাদ্দ হয়েছে ছয় মাস আগে। কিন্তু এখনও বাসা বুঝে পাইনি।
বাসা বাড়ি না থাকার কারণে খুবই বিপদে আছেন তারা। এমনকি
অবৈধভাবে কোয়াটার দখলের পাশাপাশি প্রভাবশালীরা ঘর তুলে ভাড়াও
দিয়েছেন। কোনও কর্মকর্তাই এ নিয়ে উদ্যোগ নিচ্ছে না।
এ ব্যাপারে রেলওয়ের ভূ-সম্পত্তির দায়িত্বে থাকা ১৫ নং কাচারির ফিল্ড কানুন
গো কর্মকর্তা মোঃ সাজ্জাদুল ইসলাম জানান, রাজবাড়ীতে রেলওয়ের
ডিভিশন করা হবে। ডিভিশনের কার্যক্রম শুরু হলে এসব বেদখল হওয়া সম্পত্তি
দখলে আনবে রেলওয়ে বিভাগ।
রাজবাড়ী রেলওয়ের ঊর্ধ্বতন উপ-সহকারী প্রকৌশলী হাফিজুল রহমান বলেন,
তাদের লোকবল কম। অবৈধ স্টাফ কোয়ার্টার উচ্ছেদের জন্য একাধিকবার
অভিযান চালানো হয়েছে; কিন্তু দখলমুক্ত করা যাচ্ছে না। তবে সরকার এসব
কোয়ার্টার ভেঙে ফেলে নতুন করে বহুতল ভবন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

shoberkotha

Share.
Leave A Reply

Exit mobile version