ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলায় স্কুল শিক্ষক জোনাব আলী হত্যা মামলায় দুই আসামিকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড প্রদান করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে ঝিনাইদহ অতিরিক্ত দায়রা জজ দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মুহাম্মাদ জাকারীয়া এই রায় ঘোষণা করেন। দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামি হলেন কুশনা গ্রামের তরিকুল ইসলাম ও গুড়পাড়া গ্রামের সাবেক চরমপন্থী নেতা মনিরুদ্দীন।
গোসল করতে নেমে ঝিনাইদহে পানিতে ডুবে প্রাণ গেল দুই শিক্ষার্থীর
২০১৪ সালের ২৮ ডিসেম্বর রাতে কোটচাঁদপুর উপজেলার শেরখালী বাজারে চায়ের দোকানে বসে থাকা অবস্থায় বহরমপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষক ও আওয়ামী লীগ কর্মী জোনাব আলীকে গুলি করে হত্যা করা হয়। সেই রাতে বাজারে উপস্থিত লোকজন হামলাকারীদের ধাওয়া করলে তারা দুটি বোমার বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। পালানোর সময় তারা যশোর হ-১৩-৪৬৯০ নম্বরের একটি বাজাজ প্লাটিনাম মোটরসাইকেল ফেলে রেখে যায়।
এই হত্যাকাণ্ডের পর নিহত জোনাব আলীর পরিবার কোটচাঁদপুর থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। পুলিশ মামলার তদন্ত শেষে ১৪ জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করে। মামলার প্রধান আসামি রানা নামে একজন পরে পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন।
নারায়ণগঞ্জের জেলার মামুনুর রশিদের কোটি কোটি টাকার সম্পদ ঝিনাইদহে!
২৩ জন সাক্ষীর সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে আদালত তরিকুল ইসলাম ও মনিরুদ্দীনকে অপরাধী সাব্যস্ত করে তাদের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। তবে অভিযোগ প্রমাণিত না হওয়ায় বাকি ১১ জন আসামিকে আদালত বেকসুর খালাস দেন। এই মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে পিপি অ্যাডভোকেট ইসমাইল হোসেন এবং আসামি পক্ষে অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান মামলাটি পরিচালনা করেন।
এই হত্যাকাণ্ড কোটচাঁদপুর এলাকায় তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করেছিল। নিহত জোনাব আলী ছিলেন একজন সম্মানিত শিক্ষক এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের সক্রিয় কর্মী। তার নির্মম হত্যাকাণ্ডের পর স্থানীয় জনগণ নিরাপত্তার অভাববোধ করেছিল এবং ঘটনার বিচার দাবি করেছিল। আজকের এই রায়ে অনেকেই সন্তোষ প্রকাশ করেছেন, তবে খালাসপ্রাপ্ত আসামিদের নিয়ে কিছু প্রশ্ন থেকে গেছে। বিশেষ করে নিহতের পরিবার আরও কঠোর শাস্তির প্রত্যাশা করেছিল বলে জানা গেছে।
ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
নিহত জোনাব আলীর পরিবার আদালতের রায়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে। তাদের মতে, বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে কিছুটা ন্যায়বিচার পেলেও, খালাসপ্রাপ্ত আসামিদের বিষয়ে তারা হতাশা প্রকাশ করেছে। পরিবারের এক সদস্য জানান, “আমরা দীর্ঘ ১০ বছর ধরে এই বিচার প্রক্রিয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। দুইজনের শাস্তি হলেও, আমরা মনে করি আরও অনেকেই এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিল। তাদেরও শাস্তি পাওয়া উচিত ছিল।”
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট ইসমাইল হোসেন জানিয়েছেন, “আদালতের রায়ে আমরা সন্তুষ্ট। তবে খালাসপ্রাপ্ত আসামিদের বিষয়ে উচ্চতর আদালতে আপিল করার বিষয়টি আমরা বিবেচনা করব। এই হত্যাকাণ্ড একটি পরিকল্পিত ঘটনা ছিল এবং আমরা চাই সব অপরাধীরা শাস্তি পাক।”
এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় ঝিনাইদহে এক ছাত্রীর আত্মহত্যা
অন্যদিকে, আসামিপক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আজিজুর রহমান বলেন, “আমরা আদালতের রায়ের প্রতি শ্রদ্ধাশীল, তবে আমরা মনে করি কিছু বিষয়ে ভুল সিদ্ধান্ত হয়েছে। খালাসপ্রাপ্ত আসামিদের ব্যাপারে আমরা সন্তুষ্ট, তবে দণ্ডপ্রাপ্তদের জন্য আমরা উচ্চ আদালতে আপিল করব। আমরা মনে করি, এই মামলায় আরও অনেক জটিলতা আছে, যা উচ্চ আদালতে পরিষ্কার হবে।”
মনিরুদ্দীন যিনি এক সময় চরমপন্থী নেতা ছিলেন, তার এই মামলায় জড়িত থাকার বিষয়টি নিয়ে এলাকাবাসী ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সচেতন ছিল। চরমপন্থী কর্মকাণ্ড থেকে বের হয়ে আসার পরেও তিনি বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগ ছিল। এই হত্যাকাণ্ডে তার জড়িত থাকার প্রমাণ মেলার পর তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
এই রায়ের মাধ্যমে ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর এলাকার মানুষ কিছুটা হলেও ন্যায়বিচার পেয়েছে বলে মনে করছেন অনেকেই। দীর্ঘ আইনি প্রক্রিয়া শেষে দুই আসামির শাস্তি প্রদান করা হলেও, মামলার অন্যান্য দিক নিয়ে আলোচনা ও সমালোচনা চলছে। খালাসপ্রাপ্তদের ব্যাপারে উচ্চ আদালতে আপিল হবে কিনা তা সময়ই বলে দেবে। তবে এই রায় কোটচাঁদপুরের মানুষের মধ্যে কিছুটা স্বস্তি এনে দিয়েছে, কারণ এই হত্যাকাণ্ড অনেকের মনে দাগ কেটে ছিল।
এখন দেখার বিষয় হলো, উচ্চ আদালতে আপিল হলে এই মামলার পরবর্তী গতি কোন দিকে যায় এবং বাকি আসামিদের নিয়ে কী সিদ্ধান্ত আসে।