ঝিনাইদহ জেলা বিএনপি অফিস পোড়ানো মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা আশাদুল ইসলাম আশা গ্রেফতার হয়েছেন। তাকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব-৬) ঝিনাইদহ ক্যাম্পের সদস্যরা শনিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে সদর উপজেলার কুমড়াবাড়িয়া গ্রাম থেকে গ্রেফতার করে। আশাদুল ইসলাম কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এবং তিনি শওকত আলীর ছেলে।
র্যাবের ঝিনাইদহ ক্যাম্পের কমান্ডার মেজর নাঈম আহমেদ জানিয়েছেন, আশাদুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে জেলা বিএনপি অফিস পোড়ানোর মামলায় পলাতক ছিলেন। উল্লেখ্য, ২০১৩-১৪ সালের রাজনৈতিক অস্থিরতার সময় বিএনপি অফিসে অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তাকে আসামি করা হয়। মামলার পরে তিনি আত্মগোপনে ছিলেন, কিন্তু র্যাবের গোয়েন্দা তৎপরতার ফলে তাকে শনিবার রাতে তার নিজ গ্রাম থেকে আটক করা সম্ভব হয়েছে।
কুড়িগ্রামে মহানবী (সা.)–কে নিয়ে কটূক্তি করায় গ্রেপ্তার ২
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আশাদুল ইসলাম এক সময় বিএনপির ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের নেতা ছিলেন। তবে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর তিনি দল পরিবর্তন করে আওয়ামী লীগে যোগ দেন এবং খুব দ্রুতই কুমড়াবাড়িয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তিনি আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার পর থেকে দলের স্থানীয় নেতাদের ছত্রছায়ায় থেকে এলাকায় প্রভাব বিস্তার করতে শুরু করেন। বিশেষ করে, আওয়ামী লীগের জেলা সাধারণ সম্পাদক সাইদুল করিম মিন্টুর ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে তিনি পরিচিত ছিলেন।
ঝিনাইদহে ৩ কৃষকের ২ বিঘা জমির পান বরজ কেটে দিয়েছে দুর্বত্তরা
স্থানীয় বিএনপি ও জামায়াত নেতারা অভিযোগ করেছেন, আশাদুল ইসলাম আওয়ামী লীগে যোগ দেওয়ার পর থেকে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেন। তারা আরও দাবি করেছেন, আশাদুল ইসলাম রাজনৈতিক বিরোধীদের দমন করতে বিএনপি-জামায়াতের কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে গ্রেফতারের ব্যবসা করেছেন। এই অভিযোগের ভিত্তিতে স্থানীয়রা জানান যে, তিনি বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা মামলা দিয়ে তাদের হয়রানি করেছেন এবং এই প্রক্রিয়ায় তিনি অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হয়েছেন।
আশাদুল ইসলামের গ্রেফতার নিয়ে স্থানীয়ভাবে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা দিয়েছে। বিএনপি ও জামায়াতের নেতারা তার গ্রেফতারে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন, কারণ তারা দীর্ঘদিন ধরে তার বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধরনের অভিযোগ তুলে ধরছিলেন। তাদের মতে, আশাদুল রাজনৈতিক ক্ষমতার অপব্যবহার করে অনেক নিরপরাধ মানুষকে হয়রানি করেছেন এবং নিজের প্রভাব বাড়ানোর জন্য আইনের অপব্যবহার করেছেন।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতারা এ বিষয়ে মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। তবে দলের মধ্যে কিছু নেতারা মনে করছেন যে, আশাদুলের কর্মকাণ্ড দলের ভাবমূর্তির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে এবং তার গ্রেফতার আওয়ামী লীগে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে।
ঢাকার মোহাম্মদপুরে ডাকাতির ঘটনায় গ্রেপ্তার ৮, পাঁচজন বিভিন্ন বাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্য : র্যাব
আশাদুল ইসলামের গ্রেফতার ঝিনাইদহের স্থানীয় রাজনীতিতে নতুন আলোচনার সূত্রপাত করেছে। তার অতীত রাজনৈতিক পরিচয় এবং বর্তমান কর্মকাণ্ড নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিএনপি অফিস পোড়ানোর মামলার পলাতক আসামি হিসেবে তার গ্রেফতার প্রমাণ করে যে, রাজনৈতিক পরিবর্তনের সাথে সাথে ব্যক্তিগত এবং দলীয় স্বার্থের কারণে দল পরিবর্তন করা ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এ ঘটনা স্থানীয় রাজনীতিতে বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মাঝে কিছুটা হলেও আস্থা বৃদ্ধি করতে পারে, যারা দীর্ঘদিন ধরে আশাদুলের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ করে আসছিলেন।