ঢাকার মোহাম্মদপুরে ডাকাতির ঘটনায় আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব), যাদের মধ্যে পাঁচজন বিভিন্ন বাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্য। এই ডাকাতি ঘটনা ঘটে ১১ অক্টোবর রাতে, যেখানে সেনাবাহিনী ও র্যাবের পোশাক পরে একদল ডাকাত একটি ব্যবসায়ীর বাসায় হানা দেয়। এ সময় তারা প্রায় ৮৫ লাখ টাকা, ৫০ ভরি স্বর্ণালঙ্কার ও বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন লুট করে।
ঘটনার দিন রাত সাড়ে তিনটার দিকে ডাকাতরা মোহাম্মদপুরের তিন রাস্তার মোড় সংলগ্ন ‘আবু কোম্পানির বিল্ডিং’ নামে পরিচিত একটি পাঁচতলা ভবনে হানা দেয়। ভবনটির দ্বিতীয় তলায় থাকেন আবু বকর সিদ্দিক, যিনি জমি, ইট ও কয়লা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ডাকাতরা সেনাবাহিনী ও র্যাবের পোশাক পরে যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে আবু বকরের বাসায় প্রবেশ করে। তারা দাবি করে যে, বাসায় অস্ত্র আছে, যা তারা তল্লাশি করতে এসেছে। আবু বকর জানান, তিনি তাঁর লাইসেন্স করা অস্ত্র জমা দিয়েছেন এবং বাসায় কোনো অস্ত্র নেই। এরপর ডাকাতরা বাসার প্রতিটি ঘরের আলমারি ও ড্রয়ার ভেঙে টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার লুট করে নিয়ে যায়।
কুড়িগ্রামে মহানবী (সা.)–কে নিয়ে কটূক্তি করায় গ্রেপ্তার ২
আবু বকর আরও বলেন, ডাকাতদের একজনের কাছে একটি অস্ত্র ছিল, তবে বাকি ডাকাতদের কাছে কোনো অস্ত্র ছিল না। তাদের চুল ছোট ছিল, যা দেখে মনে হচ্ছিল যে, তারা আসলেই কোনো বাহিনীর সদস্য। তবে তারা যখন আলমারিগুলো ভেঙে লুটপাট শুরু করে, তখন আবু বকরের সন্দেহ হয়, কিন্তু ভয়ে তিনি কিছু বলতে পারেননি।
ডাকাতির ঘটনার পরপরই পুলিশ ও র্যাব ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত শুরু করে। পরে সিসিটিভি ফুটেজ বিশ্লেষণ করে এবং তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় শনিবার রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে আটজনকে গ্রেপ্তার করে র্যাব। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে পাঁচজন বিভিন্ন বাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্য। গ্রেপ্তারের সময় তাদের কাছ থেকে ডাকাতিতে ব্যবহৃত একটি মাইক্রোবাস, নগদ সাত লাখ টাকা এবং লুট করা স্বর্ণালঙ্কার উদ্ধার করা হয়েছে।
র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনিম ফেরদৌস জানান, আরও কয়েকজন ডাকাত এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে এবং তাদের গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান অব্যাহত রয়েছে। তিনি আরও বলেন, ডাকাতরা এতটাই সুচারুভাবে নিজেদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করেছে যে তাদের দেখলে মনে হবে তারা আসল বাহিনীর সদস্য। তাই ঘটনার সময় ভুক্তভোগীরা তাদের ভুয়া বলে সন্দেহ করতে পারেনি।
যৌথ বাহিনীর পরিচয়ে ৭৫ লাখ টাকা ও ৭০ ভরি সোনা লুট, মামলা
ডাকাতির ঘটনায় আবু বকরের করা মামলার ভিত্তিতে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলী ইফতেখার জানান, ডাকাতরা অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে তাদের পরিচয় গোপন করে বাহিনীর সদস্য হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করেছে, যাতে সাধারণ মানুষ তাদের সন্দেহ না করে। ডাকাতির সময় তারা এমন আচরণ করেছে, যাতে ভুক্তভোগীরা ভীত হয়ে কোনো প্রতিবাদ করতে না পারে।
এই ধরনের ডাকাতির ঘটনা রাজধানী ঢাকায় বেশ বিরল এবং স্থানীয় বাসিন্দারা এতে ব্যাপক ক্ষুব্ধ হয়েছেন। সাধারণ মানুষ এমন ঘটনায় আতঙ্কিত এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পোশাক পরে ডাকাতি করার মতো ঘটনাকে অত্যন্ত গুরুতর অপরাধ হিসেবে বিবেচনা করছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও এই ঘটনার ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে, যেখানে অনেকেই নিরাপত্তা ব্যবস্থার আরও উন্নতির দাবি জানিয়েছে।
অপরদিকে, বিভিন্ন বাহিনীর চাকরিচ্যুত সদস্যদের এই ধরনের অপরাধে জড়িত থাকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলোর ভেতর থেকে কেউ এ ধরনের অপরাধের সঙ্গে জড়িত থাকলে, তা জাতির জন্য এক ধরনের নিরাপত্তা হুমকি সৃষ্টি করে।
মোহাম্মদপুরে ঘটে যাওয়া ডাকাতির ঘটনায় র্যাবের দ্রুত পদক্ষেপ এবং আটজনের গ্রেপ্তার এই ধরনের অপরাধ দমনে সফল পদক্ষেপ হিসেবে প্রশংসিত হয়েছে। তবে এই ঘটনা থেকে সমাজের সবাইকে সতর্ক হতে হবে এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর ভুয়া পরিচয় প্রদানকারী চক্র সম্পর্কে আরও সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও এ ধরনের অপরাধের শিকার হওয়া থেকে জনগণকে রক্ষা করতে আরও সতর্ক হতে হবে এবং আইনগত ব্যবস্থা আরও জোরদার করতে হবে