ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে একটি মুরগী বিক্রির দোকান দখল করে নেওয়ার ঘটনা কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়িয়েছে। বিএনপি সমর্থক দুই ব্যক্তি—বিল্লাল হোসেন ও মামুন হোসেন—রবিবার সন্ধ্যায় ব্যবসায়ী কামরুজ্জামান রনোর দোকান জোরপূর্বক দখল করে নেয়। স্থানীয় জনগণের অভিযোগ, বিল্লাল ও মামুন, যারা বিএনপির একটি অংশের সমর্থক, তাদের পেছনে রয়েছেন কেন্দ্রীয় স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ। এই ঘটনাটি এলাকায় রাজনৈতিক উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে এবং স্থানীয়রা এই ঘটনাকে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে পরিচালিত বলেও দাবি করেছেন।
রনো প্রায় ৩০ বছর ধরে এই দোকানটি পরিচালনা করছেন এবং জেলা পরিষদ থেকে বৈধভাবে বরাদ্দ নিয়েছেন। নিয়মিতভাবে ভাড়া পরিশোধ করা এবং আইনি নিয়ম অনুসরণ করা সত্ত্বেও, রোববার সন্ধ্যায় বিল্লাল ও মামুন হঠাৎ এসে দোকানে হামলা চালায়। তারা প্রথমে দোকানের একটি মুরগীর খাচা বাইরে ফেলে দেয় এবং এরপর মামুনকে দোকানের দায়িত্বে বসিয়ে দেয়। রনোকে তারা দোকান থেকে বের করে দেয় এবং বলে দেয় যে এখন থেকে মামুনই দোকানের নতুন মালিক।
স্থানীয়রা বলছেন, বিল্লাল ও মামুন সাইফুল ইসলাম ফিরোজের অনুসারী। ফিরোজ বিএনপির স্থানীয় একটি অংশের নেতা এবং স্বেচ্ছাসেবক দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের একজন গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। তবে স্থানীয় বিএনপির প্রবীণ নেতা মোশারফ হোসেন এই ঘটনার নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, দলের পক্ষ থেকে চাঁদাবাজি এবং দখলদারি বন্ধ করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। তিনি বিল্লাল ও মামুনের কর্মকাণ্ডকে হঠকারীতা হিসেবে বর্ণনা করেছেন এবং এটিকে দলের অবস্থানের বিপরীত বলে উল্লেখ করেছেন।
বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে ওয়াইফাই রাউটারগুলি সাইবার আক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছে
কালীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু আজিফ জানিয়েছেন, এখন পর্যন্ত থানায় কেউ কোনো অভিযোগ দায়ের করেনি। তবে লিখিত অভিযোগ পেলে আইনগত প্রক্রিয়া অনুসরণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন তিনি। এ ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কোনো গ্রেপ্তার বা আইনি পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি, যা স্থানীয় জনগণের মাঝে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে।
কালীগঞ্জে বিজেপির মোটরসাইকেল র্যালি ও লিফলেট বিতরণ
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে এলাকায় রাজনৈতিক উত্তেজনা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পর বিএনপির সমর্থকদের মধ্যে বিভিন্ন অভিযোগ উঠে আসছে, যেগুলোতে বিভিন্ন ধরণের অপকর্মের কথা বলা হয়েছে। বিল্লাল ও মামুনকে নিয়ে আগেও বিভিন্ন ধরনের অপকর্মের অভিযোগ উঠেছে, তবে এই ঘটনা যেন নতুন করে তাদের কর্মকাণ্ডকে প্রকাশ্যে নিয়ে এসেছে।
১০ম গ্রেড বাস্তবায়নের দাবিতে ঝিনাইদহে সহকারী শিক্ষকদের মানববন্ধন
দোকান দখলের ঘটনা কালীগঞ্জে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। এলাকাবাসীরা এই ঘটনাকে অত্যন্ত নিন্দনীয় এবং অগ্রহণযোগ্য বলে বিবেচনা করছেন। অনেকেই মনে করছেন, এটি শুধু একটি দোকান দখল নয়, বরং এটি একটি রাজনৈতিক ক্ষমতার প্রদর্শনী এবং স্থানীয় প্রভাব বিস্তারের কৌশল।
এলাকায় বর্তমানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। এ ধরনের ঘটনা আইনশৃঙ্খলার উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকে। দোকান দখলের ঘটনা থেকে যদি রাজনৈতিক সহিংসতা জন্ম নেয়, তবে তা সামগ্রিকভাবে কালীগঞ্জের সামাজিক ও অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতাকে প্রভাবিত করতে পারে।
স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা ঘটনাটি নিয়ে দুইভাগে বিভক্ত। একদিকে বিএনপির স্থানীয় নেতৃত্ব এই ঘটনাকে নিন্দা জানিয়েছে এবং দখলদারি বন্ধ করার আহ্বান জানিয়েছে, অন্যদিকে দলীয় নেতাদের কিছু অংশের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগও রয়েছে যে, তারা এসব কর্মকাণ্ডের পৃষ্ঠপোষকতা করছেন। ফলে, রাজনৈতিক দলগুলোর অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব এবং মতপার্থক্য আরও প্রকট হয়ে উঠছে।
ঝিনাইদহ পৌরসভায় সেবা ব্যবস্থার দুরবস্থা
এই ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত এবং ন্যায়বিচার নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে, যাতে জনগণের মাঝে আতঙ্কের পরিবেশ না সৃষ্টি হয়। এছাড়া, রাজনৈতিক দলগুলোকেও তাদের কর্মীদের নিয়ন্ত্রণে রাখার ব্যাপারে আরও সতর্ক হতে হবে এবং স্থানীয় পর্যায়ে সঠিক নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এমন অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা প্রতিরোধ করতে হবে।
ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে মুরগীর দোকান দখলের এই ঘটনা রাজনৈতিক উত্তেজনা এবং সামাজিক অস্থিরতার ইঙ্গিত বহন করছে। স্থানীয় প্রশাসন ও রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ করতে হবে, অন্যথায় এটি আরও বড় ধরনের সহিংসতার রূপ নিতে পারে।