বাংলাদেশে বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের সময়কালীন পরিস্থিতিতে জাতীয় সংসদের স্পিকারের প্রশাসনিক ও আর্থিক দায়িত্ব পালনে আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে দায়িত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্তটি রাজনৈতিক অঙ্গনে বিশেষ গুরুত্ব বহন করছে। আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বে থাকা আসিফ নজরুলের এই নতুন ভূমিকা আগামী কিছুদিনের জন্য দেশের সংসদীয় কার্যক্রমের ভারসাম্য বজায় রাখতে সহায়ক হতে পারে।
“গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো ফ্যাসিবাদী দলের অস্তিত্ব থাকতে পারে না।” ড. ইউনূস
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, স্পিকারের পদটি বর্তমানে শূন্য থাকায় সংসদের প্রশাসনিক ও আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনায় কারও দায়িত্ব প্রয়োজন। স্পিকার সংসদের প্রধান কর্মকর্তা হিসেবে সমস্ত প্রশাসনিক, আর্থিক এবং কর্মপরিকল্পনা পরিচালনা করে থাকেন, এবং সংসদের সভা পরিচালনা থেকে শুরু করে অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব পালন করে থাকেন। তবে বর্তমানে কোনো স্পিকার না থাকায় সংসদের প্রশাসনিক এবং আর্থিক কার্যক্রমে কিছুটা জটিলতা দেখা দিতে পারে বলে সরকার মনে করছে।
প্রেস সচিব শফিকুল আলম বলেন, “স্পিকারের আর্থিক এবং প্রশাসনিক দায়িত্ব ছিল। এখন যেহেতু স্পিকারের পদটি শূন্য, সেই কাজটি কে করবে, সেটা নিয়ে একটা সিদ্ধান্ত হয়েছে। আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল এই দায়িত্ব পালন করবেন।”
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় চিঠির পর এসব সাংবাদিকের ব্যাংক যাবতীয় তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ।
বাংলাদেশে বর্তমান সরকারের অন্তর্বর্তীকালীন সময়ে রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক পরিস্থিতিতে কিছু পরিবর্তন এসেছে। সাধারণত, সংসদ কার্যক্রমে দায়িত্ব পালন করতে সংসদ সদস্যদের নির্বাচিত একজন স্পিকারই আর্থিক ও প্রশাসনিক কাজগুলো দেখাশোনা করেন। তবে বিশেষ পরিস্থিতিতে স্পিকার না থাকায় একজন নির্ভরযোগ্য প্রশাসনিক কর্মকর্তাকে এই দায়িত্ব দেওয়া প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে। আইন উপদেষ্টা হিসেবে আসিফ নজরুল বর্তমানে সরকারের গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করছেন, এবং তার দীর্ঘদিনের প্রশাসনিক ও আইনগত অভিজ্ঞতা তাকে এই পদে দায়িত্ব পালনে যোগ্যতা প্রদান করেছে।
আসিফ নজরুলের জন্য এ দায়িত্ব গ্রহণে কিছু চ্যালেঞ্জ দেখা দিতে পারে। স্পিকার হিসেবে তিনি সংসদে পক্ষ-বিপক্ষের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা, সংসদের সদস্যদের দাবিদাওয়া শুনে সেই অনুযায়ী পদক্ষেপ নেওয়া এবং সংসদীয় কার্যক্রমকে স্বাভাবিকভাবে চলমান রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবেন। যদিও এটি একটি সাময়িক দায়িত্ব, তবুও এই পদক্ষেপের ফলে সংসদীয় কার্যক্রমের কার্যকারিতা এবং প্রক্রিয়া কীভাবে প্রভাবিত হবে, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞরা বিভিন্ন দিক থেকে বিশ্লেষণ করছেন।
তাছাড়া, সরকারের বর্তমান পদক্ষেপের ফলে সংসদে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার অংশগ্রহণকারীদের মতামতের প্রতিফলন এবং সংসদীয় সংস্কৃতির উপর এর প্রভাব বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন বলে মত দেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। এছাড়াও, সংসদের নিয়মিত সভাগুলোর নেতৃত্ব দেওয়ার পাশাপাশি আইনগত ও নীতিগত বিষয়সমূহে তিনি সঠিক পদক্ষেপ নেবেন কি না, সেটাও ভাবার বিষয়।
পুলিশ, মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত মিরপুরের সাবেক ডিসি রংপুর থেকে গ্রেপ্তার ।
জাতীয় সংসদে প্রতিদিন বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা, বিতর্ক এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। স্পিকার হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য যথেষ্ট অভিজ্ঞতা এবং যোগ্যতা থাকা প্রয়োজন, কারণ এই দায়িত্বে থাকা ব্যক্তিকে সব দলের সমান সুযোগ দেওয়ার দিকেও লক্ষ্য রাখতে হয়। আইনি উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্বে থাকা আসিফ নজরুলকে এই ভূমিকা পালন করতে গিয়ে সংসদীয় কার্যক্রমের সুষ্ঠু পরিচালনা, বিরোধী দলের দাবিগুলোকে গুরুত্ব দেওয়া এবং সংসদ সদস্যদের স্বার্থকে সমুন্নত রাখতে সতর্ক থাকতে হবে।
এছাড়া, সাম্প্রতিক সময়ে সংসদীয় অঙ্গনে দলীয় অবস্থান এবং নীতিগত বিভিন্ন জটিলতার কারণে সংসদের কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে প্রশাসনিক দক্ষতা ও সঠিক পরামর্শের গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে। আসিফ নজরুলের দক্ষতা এবং বর্তমান সরকারের প্রতি তার নিরপেক্ষ ভূমিকা আশা করা হচ্ছে সংসদীয় কার্যক্রমকে সুস্থির রাখতে সহায়তা করবে।
দেশের আটটি কারাগারের জেল সুপারদের বদলি
প্রেস সচিব শফিকুল আলম আরও জানান, এ দায়িত্বটি সাময়িকভাবে কার্যকর থাকবে এবং নতুন স্পিকার নির্বাচিত হলে সংসদের দায়িত্ব এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় স্থায়ী পরিবর্তন আসবে। তবে, এই সিদ্ধান্তে জাতীয় সংসদের অভ্যন্তরীণ কার্যক্রম এবং প্রশাসনিক ব্যবস্থায় আরও প্রাতিষ্ঠানিক স্থিতিশীলতা আসবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে আশা করা হচ্ছে।
নতুন স্পিকার নির্বাচনের মাধ্যমে জাতীয় সংসদ পুনরায় পূর্ণ কার্যকরী অবস্থায় ফিরে আসবে, এবং তখন সংসদের নিয়মিত কাজ এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম সঠিকভাবে সম্পন্ন হবে।
বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, সরকারের এই সিদ্ধান্তে জাতীয় সংসদে একটি নিরপেক্ষ এবং সুশাসনমূলক ব্যবস্থার প্রতিফলন ঘটতে পারে। তবে, কেউ কেউ উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন যে, আইন উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে সংসদের অন্য সদস্যদের সমান সুযোগ এবং অংশগ্রহণ নিশ্চিতে কিছু সমস্যা দেখা দিতে পারে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সংসদীয় কার্যক্রমে যাতে কোনো রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্বের সুযোগ না থাকে, সেদিকে সরকারের বিশেষ মনোযোগ প্রয়োজন। সংসদীয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণকারীদের সক্রিয় ভূমিকা এবং তাদের মধ্যে সুষ্ঠু সম্পর্ক বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ।
আসিফ নজরুলকে দেওয়া এই দায়িত্ব শুধুমাত্র প্রশাসনিক বা আর্থিক কার্যক্রম পরিচালনার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকবে নাকি এর বাইরেও কোনো দায়িত্ব তিনি পালন করবেন, এ বিষয়ে এখনো কোনো সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা দেওয়া হয়নি। তবে আইন উপদেষ্টা হিসেবে তার পূর্ববর্তী কাজের অভিজ্ঞতা সংসদীয় কার্যক্রমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এ সিদ্ধান্তের ফলে বাংলাদেশের রাজনৈতিক এবং প্রশাসনিক পরিস্থিতিতে একটি স্থায়ী প্রভাব পড়বে বলে ধারণা করা হচ্ছে।