ড. মুহাম্মদ ইউনূস, বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, সম্প্রতি যুক্তরাজ্যভিত্তিক গণমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের এক সাক্ষাৎকারে আওয়ামী লীগ ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্পর্কিত কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অচিরেই শেখ হাসিনা ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অবস্থান থাকবে না এবং দেশে তাদের কোনো স্থান হবে না।
তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয় চিঠির পর এসব সাংবাদিকের ব্যাংক যাবতীয় তথ্য চেয়েছে বিএফআইইউ।
ড. ইউনূসের বক্তব্যে আওয়ামী লীগের দীর্ঘমেয়াদী অবস্থান নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়। তিনি বলেন, “গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় কোনো ফ্যাসিবাদী দলের অস্তিত্ব থাকতে পারে না।” ড. ইউনূসের মতে, আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক মেকানিজম তৈরি করেছে এবং নিজেদের স্বার্থে দেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোকে ব্যবহার করেছে। এ কারণে আওয়ামী লীগের ভবিষ্যত রাজনৈতিক সাফল্যের বিষয়ে তিনি অনিশ্চয়তা প্রকাশ করেন।
তিনি আরও জানান, বর্তমান সরকার শেখ হাসিনাকে ভারত ফেরত পাঠানোর বিষয়ে কোনো চাপ প্রয়োগ করবে না। এটি বাংলাদেশের বড় প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে কূটনৈতিক উত্তেজনা এড়ানোর কৌশল হিসেবে দেখছেন তিনি। তবে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার সম্ভাবনা প্রসঙ্গে তিনি উল্লেখ করেন যে, বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এমন কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করবে না, যা রাজনৈতিকভাবে বিতর্কিত হতে পারে।
পুলিশ, মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানাভুক্ত মিরপুরের সাবেক ডিসি রংপুর থেকে গ্রেপ্তার ।
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের নির্দেশে শেখ হাসিনাসহ আরও ৪৫ জনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। ড. ইউনূস বলেন, এ মামলার রায় ঘোষণার পরই শেখ হাসিনাকে প্রত্যর্পণ চুক্তির আওতায় ফেরত আনার প্রক্রিয়া শুরু করা হতে পারে। তিনি জানান, “রায় হওয়ার আগে এটি করার প্রয়োজন নেই,” ইঙ্গিত করেন যে আন্তর্জাতিক বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বর্তমান পরিস্থিতির সমাধান হবে।
দেশের আটটি কারাগারের জেল সুপারদের বদলি
ড. ইউনূস জানান, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অন্যতম কাজ হবে দেশের রাজনৈতিক অবস্থা স্বাভাবিক করা এবং সংবিধান সংস্কার। নির্বাচনের প্রস্তুতি চূড়ান্ত হলে রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলাপ-আলোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নির্ধারণ করা হবে। তিনি ব্যক্তিগতভাবে কোনো রাজনৈতিক দল গঠনের বা রাজনীতিতে সরাসরি অংশ নেওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেননি।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সম্প্রতি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। ড. ইউনূস জানান, ৫ আগস্টের গণ-অভ্যুত্থানের পর হিন্দুদের বিরুদ্ধে কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটে, যদিও এ ঘটনাগুলোর প্রধান কারণ ধর্মীয় নয় বরং রাজনৈতিক। ড. ইউনূস দাবি করেন, হামলার শিকার অধিকাংশ হিন্দু আওয়ামী লীগের সমর্থক ছিলেন এবং এই কারণে তারা টার্গেট হয়েছেন।
ড. ইউনূস ভারত-বাংলাদেশ সম্পর্কের বিষয়ে উল্লেখ করেন, “আমরা প্রতিবেশী। আমাদের একে অপরের প্রয়োজন। আমাদের অবশ্যই সবচেয়ে ভালো সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে, যেমনটি দুই প্রতিবেশীর মধ্যে থাকা উচিত।” তিনি দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক আরও সুসংহত করার পক্ষে কথা বলেন।
ড. ইউনূসের এ বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একটি বড় প্রভাব ফেলেছে। তার সাক্ষাৎকারের মন্তব্যগুলোকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এটি বর্তমান সরকারের জন্য একটি কঠিন চ্যালেঞ্জ। তবে দেশে গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার এবং রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অর্জনে এ ধরনের বক্তব্য ও পদক্ষেপ কতটা কার্যকর হবে তা সময়ই বলে দেবে।