ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুরে একটি মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে, যেখানে পারিবারিক কলহের জেরে এক নারী তার স্বামীকে ৯ টুকরো করে সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেন। নিহত ব্যক্তির নাম অরুণ মিয়া (৬৫), যিনি ফরদাবাদ গ্রামের বাসিন্দা। মঙ্গলবার (১ অক্টোবর) রাতে পুলিশ এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটন করে অরুণ মিয়ার মরদেহ উদ্ধার করে।
ঝিনাইদহে ধান ক্ষেতে পচন রোগ দেখা দিয়েছে, দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ফলন কম হওয়ার আশংকা করছে কৃষক
অরুণ মিয়ার প্রথম স্ত্রীর মৃত্যুর পর প্রায় ৩৫ বছর আগে তিনি মোমেনা বেগমকে বিয়ে করেন, যিনি একই গ্রামের তারু মিয়ার মেয়ে। অরুণ ও মোমেনার দাম্পত্য জীবন শুরু থেকেই অশান্ত ছিল। তাদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে। স্থানীয়দের মতে, পরিবারে প্রায়ই কলহ লেগে থাকত, যা ক্রমে এই নিষ্ঠুর হত্যাকাণ্ডের দিকে গড়ায়।
গত শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) বিকেল থেকে অরুণ মিয়া নিখোঁজ হন। তার প্রথম স্ত্রীর ছেলে লুৎফর রহমান রুবেল সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বাঞ্ছারামপুর মডেল থানায় একটি নিখোঁজ ডায়েরি করেন। এর পর থেকেই পুলিশ এবং স্থানীয় লোকজন তাকে খুঁজতে থাকে।
মঙ্গলবার সন্ধ্যায় অরুণ মিয়ার প্রতিবেশী সৌদি প্রবাসী মনির হোসেনের বাড়ির সেপটিক ট্যাংক থেকে দুর্গন্ধ বের হতে দেখে সন্দেহ হয় এলাকাবাসীর। টর্চ লাইট দিয়ে সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে তারা পলিথিনে মোড়ানো কয়েকটি বস্তু দেখতে পান। দ্রুত পুলিশে খবর দেওয়া হয়।
ছাত্রলীগ নিষিদ্ধের প্রজ্ঞাপন জারি
পুলিশ রাত ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে এসে ট্যাংক থেকে অরুণ মিয়ার লাশের খণ্ডিত অংশগুলো উদ্ধার করে। ঘটনাস্থল থেকেই নিহতের স্ত্রী মোমেনা বেগম, ছেলে রাসেল এবং মেয়ে লাকী আক্তারকে আটক করে পুলিশ।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মোমেনা বেগম স্বীকার করেন যে, পারিবারিক কলহের জেরে গত শুক্রবার (২৭ সেপ্টেম্বর) তিনি শাবল দিয়ে অরুণ মিয়ার মাথায় আঘাত করেন। আঘাতের পর অরুণ মিয়া মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এবং ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। এরপর মোমেনা বেগম নিজের হাতে লাশটি ৯ টুকরো করে পলিথিনে মুড়ে ইট দিয়ে বেঁধে পাশের বাড়ির সেপটিক ট্যাংকে ফেলে দেন।
ঝিনাইদহের মহেশপুরে কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা সংখ্যালঘু পরিবারের জমি দখলের অভিযোগঝিনাইদহের মহেশপুরে কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে প্রভাবশালী ভূমিদস্যুরা সংখ্যালঘু পরিবারের জমি দখলের অভিযোগ
বাঞ্ছারামপুর মডেল থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সুজন কুমার পাল জানিয়েছেন, ঘটনার পরপরই নিহতের স্ত্রী এবং তার দুই সন্তানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের পর মোমেনা বেগম হত্যার কথা স্বীকার করেছেন। এ ঘটনার প্রকৃত কারণ এবং আরও কোনও ব্যক্তি এর সাথে জড়িত আছে কিনা তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ। বুধবার (২ অক্টোবর) গ্রেপ্তারকৃতদের আদালতে সোপর্দ করা হবে।
এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডে পুরো এলাকা স্তব্ধ হয়ে গেছে। পারিবারিক কলহের জেরে এমন অমানবিক ঘটনা মানুষকে হতবাক করেছে। স্থানীয়রা বিশ্বাস করতে পারছেন না যে, একজন স্ত্রী এমন ভয়াবহভাবে তার স্বামীকে হত্যা করতে পারেন। সমাজে পারিবারিক সমস্যা থাকলেও এমন ধরনের সহিংসতা খুব কমই দেখা যায়।
পারিবারিক কলহের কারণেই অধিকাংশ সময় এ ধরনের সহিংসতার জন্ম হয়। এই ঘটনার মাধ্যমে বাংলাদেশের সমাজে পারিবারিক সহিংসতার আরও একটি উদাহরণ যুক্ত হলো। মনস্তাত্ত্বিক ও সামাজিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, পারিবারিক কলহ এবং মানসিক চাপের কারণে অনেকেই হিংস্র ও সহিংস হয়ে ওঠেন, যা এমন ভয়াবহ অপরাধের দিকে ধাবিত করে।
এ ধরনের ঘটনা রোধে পরিবারের মধ্যে সচেতনতা, যোগাযোগ এবং সমঝোতার গুরুত্ব অপরিসীম।