বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহত কিশোর সিফাত উল্লাহর পরিবারের অনুদানের টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মো. আকাশ ব্যাপারী (২১) নামের একজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)। আজ শুক্রবার মাদারীপুর থেকে সিআইডি তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে। সিআইডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানানো হয়েছে।
সিআইডির সাইবার পুলিশ সেন্টার জানায়, গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে তারা জানতে পারে যে, সিফাত উল্লাহর পরিবার প্রতারণার শিকার হয়েছে। অভিযুক্ত মো. আকাশ ব্যাপারী প্রতারণামূলকভাবে সিফাতের পরিবারের কাছ থেকে ব্যাংক হিসাবের তথ্য এবং এটিএম কার্ডের গোপন তথ্য সংগ্রহ করেন। প্রথমে তিনি অনুদান দেওয়ার কথা বলে সিফাতের পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। এরপর টাকা পাঠানোর প্রক্রিয়ার অজুহাতে ওটিপি (ওয়ান-টাইম পাসওয়ার্ড) সংগ্রহ করে, ব্যাংক কার্ডের মাধ্যমে তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা সরিয়ে নেন।
পরে সেই টাকা দিয়ে তিনি বিভিন্ন অনলাইন কেনাবেচার প্ল্যাটফর্মে ভুয়া নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বর ব্যবহার করে বিভিন্ন পণ্য কেনেন। সিআইডি অনুসন্ধানে জানতে পারে, অভিযুক্ত ব্যক্তি সিফাতের পরিবারের অসহায় পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে এ ধরনের প্রতারণা চালিয়েছে।
সিফাত উল্লাহ (১৯) কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়া উপজেলার মুনিয়ারীকান্দা গ্রামের বাসিন্দা। তিনি গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার মাওনা এমদাদুল উলুম জামিয়া ইসলামিয়া মাদ্রাসার ছাত্র ছিলেন। সিফাত বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় এক সংঘর্ষের ঘটনায় প্রাণ হারান, যা দেশের বিভিন্ন মহলে তীব্র প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি করে। এই আন্দোলনটি বিভিন্ন সামাজিক ও রাজনৈতিক বৈষম্যের বিরুদ্ধে চলছিল, যেখানে ছাত্ররা বৈষম্যের শিকার হওয়া বিভিন্ন ইস্যুতে প্রতিবাদ করছিল।
সিফাতের মৃত্যুতে তার পরিবার গভীর শোক ও দুঃখের মধ্যে ছিল। সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ এবং সংগঠন থেকে তাদের জন্য অনুদান দেওয়া হচ্ছিল, যা পরিবারের জন্য কিছুটা হলেও আর্থিক সান্ত্বনা দিচ্ছিল। তবে, এই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে প্রতারক মো. আকাশ ব্যাপারী তাদের অনুদানের টাকা আত্মসাৎ করেন। সিফাতের পরিবারের আর্থিক অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে এই প্রতারণা চালানো হয়, যা অত্যন্ত হৃদয়বিদারক এবং নিন্দনীয়।
জালিম সরকারের সিন্ডিকেট এখনও চলছে, তা ভাঙা সম্ভব হয়নি: জামায়াতের আমির ডাঃ শফিকুর রহমান
সিআইডি জানিয়েছে যে, এই ধরনের প্রতারণার ঘটনায় প্রযুক্তি ব্যবহার করে অপরাধীদের সনাক্ত করা হয়েছে। সাইবার পুলিশ সেন্টারের তদন্ত দল প্রতারণার ধরণ ও পদ্ধতি বিশ্লেষণ করে আকাশ ব্যাপারীকে সনাক্ত করে এবং তার অবস্থান নিশ্চিত করার পর মাদারীপুর থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে। এ ধরনের অপরাধের শিকার হওয়া ব্যক্তিদের সুরক্ষার জন্য সিআইডি প্রতিনিয়ত কাজ করে যাচ্ছে এবং এ বিষয়ে জনগণকে সচেতন থাকার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
বিগত জালিম সরকারের সিন্ডিকেট এখনও বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি করছে: জামায়াতের আমীর ডা. শফিকুর রহমান
সিফাত উল্লাহর মৃত্যুর পর তার পরিবার এবং এলাকাবাসী দারুণভাবে মর্মাহত হয়েছিলেন। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে তার অংশগ্রহণ এবং মৃত্যুর ঘটনা দেশব্যাপী আলোচিত হয়। এই প্রতারণার ঘটনায় সিফাতের পরিবার আরও বিপর্যস্ত হয়েছে, কারণ তারা আগে থেকেই শোকগ্রস্ত ছিলেন এবং এখন অর্থনৈতিক ক্ষতির মুখোমুখি। সমাজের বিভিন্ন মহল থেকে এই প্রতারণার ঘটনায় তীব্র নিন্দা প্রকাশ করা হচ্ছে।
ঝিনাইদহে স্কুলছাত্রকে ডেকে নিয়ে হত্যার অভিযোগে আদালতে মামলা
সিফাত উল্লাহর পরিবারের সঙ্গে ঘটে যাওয়া এই প্রতারণার ঘটনা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এটি একটি অমানবিক কাজ, যা সাইবার অপরাধের ভয়াবহতা তুলে ধরে। এই ঘটনায় অভিযুক্ত ব্যক্তি গ্রেপ্তার হলেও, এ ধরনের অপরাধ প্রতিরোধে আরও কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন। সাইবার অপরাধের বিরুদ্ধে কার্যকরভাবে লড়াই করার জন্য প্রযুক্তিগত দক্ষতা বাড়ানো এবং জনগণকে সচেতন করা অত্যন্ত জরুরি।