ঝিনাইদহে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের সিনিয়র নায়েবে আমীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ ফয়জুল করিম, যিনি পীর সাহেব চরমোনাই হিসেবে পরিচিত, এক গণসমাবেশে বলেছেন, বার বার নেতা পরিবর্তন করে নয়, বরং নীতি ও আদর্শের পরিবর্তনের মাধ্যমে দেশকে প্রকৃত অর্থে পরিবর্তন করা সম্ভব। তিনি উল্লেখ করেন, নেতা পরিবর্তনের মাধ্যমে কখনোই শান্তি বা সমতা প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব নয়, বরং এর জন্য নীতির পরিবর্তন অত্যন্ত জরুরি। নীতির পরিবর্তন না হলে জনগণকে বার বার রক্ত দিতে হবে, কিন্তু তাদের ভাগ্য বদলাবে না।
শৈলকুপায় চাঁদাবাজি থেকে রক্ষা পাচ্ছে না নিজ দলীয় কর্মীরাও!
গণসমাবেশে পীর সাহেব বলেন, বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থা গরীবদের ধনী হতে দিচ্ছে না; বরং ধনীরা আরো বেশি ধনী হচ্ছে। তিনি জানান, বাংলাদেশের মুসলিম জনগণের অধিকার এবং ইসলামী নীতির প্রতিষ্ঠার জন্য ইসলামী আন্দোলন কাজ করে যাচ্ছে। তিনি দাবি করেন, ধনী-গরীব বৈষম্য দূর করতে এবং সুষ্ঠু বিচার ব্যবস্থা কায়েম করতে হবে।
তাঁর মতে, বাংলাদেশে কোনো “বাতিল ইসলাম” কায়েম হতে দেওয়া হবে না। তিনি বলেন, “আমরা ফেয়ার সিস্টেমে নির্বাচন চাই, যেখানে সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণ থাকবে।” ইসলামী আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে ন্যায়বিচার ও সাম্য প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করে তিনি জানান, তাঁর সংগঠন ক্ষমতায় এলে দেশে ইনসাফ (ন্যায়বিচার) কায়েম হবে এবং সকলের অধিকার রক্ষা পাবে।
পীর সাহেব চরমোনাই অতীতের ইতিহাস উল্লেখ করে বলেন, “এই ভূখণ্ডে মুসলমানরা শাসন করেছে, কিন্তু কিছু মুনাফিকের কারণে আমরা পরাজিত হয়েছি।” তিনি অভিযোগ করেন, দিল্লির ষড়যন্ত্রে হাজার হাজার মাদ্রাসা ধ্বংস করা হয়েছিল এবং আলেমদের হত্যা করা হয়েছিল। তিনি অতীতের আলেমদের অবদান স্মরণ করে বলেন, “ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে এই ভূখণ্ড থেকে তাদের বিতাড়িত করেছিলেন ওলি-আউলিয়ারা।”
ঝিনাইদহে আড়াই বিঘা জমির পাকা ধান পুড়িয়ে দিয়েছে দুর্বৃত্তরা।
পীর সাহেব বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করার সময়েও মুসলমানরা নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হয়েছিল। তিনি উল্লেখ করেন, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরসহ অনেক হিন্দু জমিদার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন। তবুও নবাব স্যার সলিমুল্লাহ (রহ.) তার প্রচেষ্টায় সফল হয়েছিলেন। সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য মুসলমানরা রক্ত দিয়েছিল, কিন্তু এখন তাদের “সাম্প্রদায়িক” বলা হয়, যা ইতিহাসের ভুল ব্যাখ্যা বলে তিনি দাবি করেন।
পীর সাহেব চরমোনাই পাকিস্তানের গঠনের ইতিহাস উল্লেখ করে বলেন, মুসলমানদের জন্য আলাদা রাষ্ট্র পাকিস্তান গঠিত হয়েছিল। তবে, পূর্ব পাকিস্তানের মানুষ বৈষম্যের শিকার হয়ে পুনরায় স্বাধীনতার জন্য লড়াই করেছিল, যার মাধ্যমে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। কিন্তু, তিনি অভিযোগ করেন যে, স্বাধীনতার পর ভারতের প্রভাবে ১৯৭২ সালের সংবিধানে গণতন্ত্র ও সমাজতন্ত্রের মতো মতবাদ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছিল, যা বাংলাদেশের মানুষের সাম্য ও ন্যায়বিচার পাওয়ার পথে বাধা সৃষ্টি করেছে।
পীর সাহেব চরমোনাই বর্তমান সরকারকে ফ্যাসিবাদী আখ্যা দিয়ে বলেন, শেখ হাসিনা এবং তার সরকারের নেতা-কর্মীরা দেশকে লুটপাট করেছে। তিনি দাবি করেন, “হাসিনার মন্ত্রী, এমপি ও সাধারণ নেতাকর্মীরা হাজার হাজার কোটি টাকার মালিক। শেখ হাসিনার পিয়ন ৪০০ কোটি টাকার মালিক হয়েছে, ছাত্রলীগ নেতা দুই হাজার কোটি টাকা পাচার করেছে, এবং মন্ত্রীরা বিদেশে সম্পদ গড়ছে।”
তিনি আরও বলেন, “এটাই কি দেশের মানুষ চেয়েছিল? জনগণ কি চেয়েছিল, দুর্নীতি ও লুটপাটের মাধ্যমে দেশের অর্থনীতির সর্বনাশ হবে?” তিনি এ ধরনের দুর্নীতির নিন্দা করে বলেন, “যারা আওয়ামী লীগ করে, তাদের জন্য সাত খুন মাফ, এটা কোনো সাম্যতা নয়।”
ঝিনাইদহে স্কুল শিক্ষক হত্যা মামলায় দুইজনের যাবজ্জীবন
পীর সাহেব চরমোনাই বলেন, ইসলামী আন্দোলনের মাধ্যমে দেশের মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন করা সম্ভব, যেখানে ঘুষ, দুর্নীতি, কালো টাকা এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য বন্ধ হবে।
পীর সাহেব চরমোনাই দেশে ইসলামি শাসন প্রতিষ্ঠার দাবি জানান, যেখানে সবার অধিকার রক্ষিত হবে। তিনি বলেন, “যদি কেউ মডারেট ইসলাম কায়েম করতে চায়, সে বেঈমান হবে। কোনোভাবেই মনগড়া ইসলাম কায়েম করতে দেওয়া হবে না।” তিনি আরও বলেন, “যারা দেশব্যাপী লুটপাট, চাঁদাবাজি এবং দখলদারিত্ব কায়েম করেছে, তাদের প্রত্যাখ্যান করতে জনগণকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।”
তিনি বলেন, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ ক্ষমতায় এলে দেশ মুসলমানদের জন্য হবে, তবে সবার অধিকার নিশ্চিত করা হবে। তিনি দাবি করেন, শুধুমাত্র ইসলামী শাসন ব্যবস্থার মাধ্যমেই বাংলাদেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হবে এবং জনগণের জীবনে শান্তি ফিরে আসবে।
গোসল করতে নেমে ঝিনাইদহে পানিতে ডুবে প্রাণ গেল দুই শিক্ষার্থীর
গণসমাবেশে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে:
- ছাত্র-জনতার উপর গণহত্যায় জড়িতদের বিচার।
- হতাহতদের ক্ষতিপূরণ প্রদান।
- দুর্নীতিবাজদের বিচার।
- নির্বাচন কমিশনের পুনর্গঠন।
এছাড়া তারা সুষ্ঠু নির্বাচন, ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং সকলের অধিকার নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দেয়।
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলা শাখার সভাপতি ডাঃ এইচ এম মোমতাজুল করীমের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত গণসমাবেশে কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা শোয়াইব হোসেন, ইসলামী যুব আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সংগঠনিক সম্পাদক মুফতি আহমদ আব্দুল জলিল, এবং অন্যান্য নেতারা বক্তব্য রাখেন।
তারা সকলেই দেশে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতির অবসান এবং ইসলামী নীতির অনুসরণ করে রাষ্ট্র পরিচালনার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে কথা বলেন।
নারায়ণগঞ্জের জেলার মামুনুর রশিদের কোটি কোটি টাকার সম্পদ ঝিনাইদহে!
পীর সাহেব চরমোনাইয়ের বক্তব্যে মূলত দেশের রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থার তীব্র সমালোচনা করা হয়েছে। তিনি মনে করেন, নীতি ও আদর্শের পরিবর্তন ছাড়া দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ন্যায়বিচার, সাম্য এবং সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানানো হয়েছে, যা তাদের দলীয় এজেন্ডার মূল লক্ষ্য। দেশকে প্রকৃত অর্থে উন্নত করতে হলে ইসলামী শাসনব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং সব ধরনের দুর্নীতি ও বৈষম্যের অবসান ঘটাতে হবে বলে তিনি উল্লেখ করেছেন।