ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতির অভিযোগ উঠছে। দীর্ঘদিন ধরে একই পদে থেকে তিনি বিপুল সম্পত্তির মালিক হয়েছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কুষ্টিয়া, ঝিনাইদহ, ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে তার নামে ও বেনামে অঢেল সম্পত্তি রয়েছে। এক সময় ৬ষ্ঠ গ্রেডের একজন কর্মকর্তা হিসেবে কর্মজীবন শুরু করা কামাল উদ্দিন এখন কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক, যা স্বাভাবিকভাবে তার আয় থেকে অর্জন করা সম্ভব নয়।
এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় ঝিনাইদহে এক ছাত্রীর আত্মহত্যা
কামাল উদ্দিনের গ্রামের বাড়ি কুষ্টিয়ার কুমারখালী উপজেলায় হলেও তিনি তার পেশাগত জীবন শুরু করেন শৈলকুপা পৌরসভায়। ১৯৯২ সালে তিনি উপ-সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে যোগ দেন এবং ধীরে ধীরে পদোন্নতি পেয়ে ৬ষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তা হয়ে ওঠেন। ঝিনাইদহ পৌরসভায় দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে তিনি পৌরসভার সাবেক মেয়র সাইদুল করিম মিন্টুর আস্থাভাজন হন এবং তার আশীর্বাদে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে পদোন্নতি পান।
তার সম্পদের পরিমাণের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে কুষ্টিয়ার হানিফনগরে একটি তিনতলা বাড়ি, যার আনুমানিক মূল্য কয়েক কোটি টাকা। ঝিনাইদহের মহিষাকুন্ডু ভিআইপি রোডে জমিসহ একটি বাড়ি, শৈলকুপায় জমি, এবং ঢাকায় একটি ফ্ল্যাটও তার নামে আছে বলে জানা গেছে। এই বিপুল সম্পদের মধ্যে অনেকগুলোই বেনামে রয়েছে, যা প্রকৃতপক্ষে তার দুর্নীতির মাধ্যমে অর্জিত বলে স্থানীয় জনগণ অভিযোগ করছে।
প্রকৌশলী কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে গুরুতর অভিযোগ হচ্ছে পৌরসভার বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা আত্মসাৎ করা। বিশেষ করে পৌরসভার সোলার লাইট প্রকল্পের দ্বিতীয় কিস্তির সাত কোটি টাকা আত্মসাৎ করার অভিযোগ উঠেছে। পৌরসভার বিভিন্ন প্রকল্পে নির্ধারিত রোলার গাড়ি ভাড়া দিলেও সেই অর্থ যথাযথভাবে জমা দেওয়া হয়নি।
পৌরসভার একটি সূত্র জানায়, সাবেক মেয়র কাইয়ুম শাহরিয়ার জাহেদী হিজলের সময়ে ৪৬ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ হয়, যার ৩% ঘুষ হিসেবে নেওয়া হয়। প্রকৌশলী কামাল উদ্দিন সেই ঘুষ নেওয়ার অন্যতম প্রধান ব্যক্তি ছিলেন এবং আরও দুই কর্মকর্তাও এই ঘুষ গ্রহণের সঙ্গে জড়িত ছিলেন। আরও জানা গেছে, কামাল উদ্দিন সাবেক মেয়রের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় ঠিকাদার নাঈমের সঙ্গে যোগসাজশ করে বেশির ভাগ কাজ করিয়েছেন এবং এভাবে নিজের আর্থিক সুবিধা বাড়িয়েছেন। ঠিকাদার নাঈমের মালিকানাধীন একটি প্রাইভেট কার ব্যবহার করে কামাল উদ্দিন প্রতিদিন অফিসে যাতায়াত করতেন।
নানা অনিয়মের মধ্যে প্রতি মাসে পৌরসভার বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, বিশেষ করে বৈদ্যুতিক বাল্ব কেনার নামে ১৫ থেকে ২২ লাখ টাকা উত্তোলন করার অভিযোগও রয়েছে। এসব অর্থও আত্মসাৎ করা হয় বলে অভিযোগ উঠেছে।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে হাইকোর্ট বিভাগের ছয় বিচারপতি সাক্ষাৎ
কামাল উদ্দিনের বিরুদ্ধে আনিত এসব অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে পৌর নাগরিক আনারুজ্জামান জাহিদ তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। তার বক্তব্য অনুযায়ী, একজন ৬ষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তা হিসেবে তার মাসিক বেতন প্রায় ১ লাখ টাকা হলেও এত বিপুল পরিমাণ সম্পদের মালিক হওয়া সম্ভব নয়, যদি না তিনি দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকেন।
আনারুজ্জামান আরও বলেন, “প্রকৌশলী কামাল হোসেন পৌরসভার সকল দুর্নীতির মূল হোতা। তার এই সম্পদের আয়ের উৎস খুঁজে বের করতে হবে।” তিনি দাবি করেন, বিগত দিনের পৌরসভার বিভিন্ন প্রকল্পের ব্যয় ও আয় অনুসন্ধান করা হলে কামাল উদ্দিনের দুর্নীতির প্রকৃত চিত্র বেরিয়ে আসবে
সাবেক বিমানমন্ত্রী ফারুক খান ও কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক গ্রেপ্তার
এই সমস্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে প্রকৌশলী কামাল উদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করেন। তিনি দাবি করেন, “আমি কোনো দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত নই। আমার যা সম্পত্তি আছে, তা আমি আমার পারিবারিক ও চাকরির উপার্জিত অর্থ দিয়ে অর্জন করেছি।” তবে তার এই বক্তব্য অনেকের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি, বিশেষ করে যখন তার বিপুল সম্পত্তির সঙ্গে তার আয়ের অসঙ্গতি পরিলক্ষিত হচ্ছে।
ঝিনাইদহ পৌরসভার জনগণের মধ্যে এই দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ বিরাজ করছে। অনেকেই মনে করেন, পৌরসভার উন্নয়নের নামে কামাল উদ্দিন এবং তার সহকর্মীরা সরকারি অর্থ লুটপাট করে নিজেদের সম্পদ বাড়িয়েছেন। এর ফলে স্থানীয় উন্নয়ন কার্যক্রম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, এবং শহরের নাগরিক সুবিধাগুলো যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি।
পৌর নাগরিকরা দাবি করছেন, এই দুর্নীতির ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন এবং অপরাধী প্রমাণিত হলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। জনগণের মধ্যে সচেতন মহল বলছে, সরকারি কর্মকর্তাদের এমন দুর্নীতি না থামালে দেশের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে এবং সাধারণ মানুষের ওপর তার নেতিবাচক প্রভাব পড়বে
ফরিদপুরে অতিরিক্ত মদ পানে আরও এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু
এই ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ ওঠার পর দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এর তদন্তের দাবি উঠছে। দুদক যদি সুষ্ঠুভাবে এই ধরনের দুর্নীতির তদন্ত করে এবং অপরাধীদের শাস্তি দেয়, তবে তা ভবিষ্যতে এ ধরনের দুর্নীতির প্রবণতা কমাতে সহায়তা করবে। বিশেষ করে সরকারি কর্মকর্তাদের আর্থিক অবস্থার স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দুদকের নজরদারি বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন অনেকে।
একজন ৬ষ্ঠ গ্রেডের কর্মকর্তা হিসেবে কামাল উদ্দিনের এই বিপুল সম্পত্তি এবং তার বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ স্থানীয় জনগণের মধ্যে তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। জনগণের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে এই ধরনের অভিযোগের সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। সরকার এবং দুর্নীতি দমন কমিশনের যৌথভাবে ব্যবস্থা নিয়ে এই ধরনের দুর্নীতির ঘটনা প্রতিরোধে উদ্যোগ নেওয়া উচিত, যাতে প্রশাসনিক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা যায়।