ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলায় পৃথক দুটি স্থানে পানিতে ডুবে দুই শিক্ষার্থীর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। এই ঘটনাগুলো এলাকায় শোকের ছায়া ফেলেছে এবং পরিবারগুলোতে গভীর শোকের ছাপ রেখেছে।
মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে কালীগঞ্জ উপজেলার শিবনগর গ্রামে চিত্রা নদীতে গোসল করতে গিয়ে অনামিকা দাস (১২) নামের এক কিশোরী পানিতে ডুবে মারা যায়। অনামিকা শিবনগর দাসপাড়া এলাকার বাসিন্দা শিপন দাসের মেয়ে। সে স্থানীয় চাঁচড়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
নারায়ণগঞ্জের জেলার মামুনুর রশিদের কোটি কোটি টাকার সম্পদ ঝিনাইদহে!
জানা গেছে, অনামিকা নদীতে তার বন্ধুদের সঙ্গে গোসল করতে নেমেছিল। গোসল করার সময় সে পানির গভীরে চলে যায় এবং সেখান থেকে আর উঠে আসতে পারেনি। স্থানীয়রা অনেক চেষ্টার পর তাকে উদ্ধার করে, কিন্তু তখনও তার শারীরিক অবস্থা সঙ্কটাপন্ন ছিল। পরে তাকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
এই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর, শিবনগর গ্রামে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। সহপাঠী, পরিবার ও গ্রামের লোকজন সকলেই অনামিকার আকস্মিক মৃত্যুতে শোকাহত। শিক্ষকরা জানিয়েছেন, অনামিকা একজন মেধাবী ছাত্রী ছিল এবং তার মৃত্যুতে পুরো বিদ্যালয় স্তব্ধ হয়ে গেছে।
ঝিনাইদহ পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ
একই দিন বিকেল সাড়ে তিনটার দিকে, কালীগঞ্জ পৌরসভার বলিদাপাড়া এলাকায় পুকুরে গোসল করতে নেমে রাইয়ান (৭) নামে আরেক শিশুর মৃত্যু ঘটে। রাইয়ান ঝিনাইদহ সদর পৌরসভার হামদহ পাড়ার ফরিদ উদ্দীনের ছেলে এবং স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্র ছিল।
রাইয়ানের ঘটনাটি ঘটে যখন সে তার বন্ধুর সঙ্গে পুকুরে গোসল করতে যায়। কিছুক্ষণ পরে, তার সঙ্গীরা তাকে পানিতে ডুবতে দেখে চিৎকার করে এবং স্থানীয়দের খবর দেয়। স্থানীয় লোকজন দ্রুত পুকুরে নেমে তাকে উদ্ধার করে কালীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যায়। তবে, হাসপাতালে পৌঁছানোর আগেই সে মারা যায়।
এইচএসসি পরীক্ষায় ফেল করায় ঝিনাইদহে এক ছাত্রীর আত্মহত্যা
দুটি পরিবারেই শোকের মাতম চলছে। অনামিকা ও রাইয়ানের মৃত্যুতে তাদের পরিবারে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে। অনামিকার বাবা শিপন দাস ও রাইয়ানের বাবা ফরিদ উদ্দীন তাদের সন্তানদের হারিয়ে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন। তারা কেউই এ ধরনের দুর্ঘটনার জন্য প্রস্তুত ছিলেন না। এ ছাড়া, প্রতিবেশীরাও এ ঘটনা মেনে নিতে পারছেন না। তাদের মতে, দুই শিশু ছিল পরিবারের জন্য আশীর্বাদ, কিন্তু এভাবে তাদের চলে যাওয়া অকল্পনীয়।
ঝিনাইদহ পুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর আসিফ হাসান জানিয়েছেন, পানিতে ডুবে যাওয়ার এই দুই মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনায় স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছে। দুর্ঘটনার পর পরই পুলিশ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে এবং সেখান থেকে প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহ করেছে।
তিনি আরও জানান, শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পরিবারগুলোকে আরও সতর্ক হতে হবে। বিশেষ করে, শিশুদের যখন পুকুর বা নদীতে গোসল করতে পাঠানো হয়, তখন পরিবারের সদস্যদের অবশ্যই নজর রাখতে হবে। পানির আশেপাশে থাকা শিশুদের পর্যবেক্ষণ করার প্রয়োজনীয়তা গুরুত্বের সাথে তুলে ধরেছেন তিনি।
পানিতে ডুবে মৃত্যু প্রতিরোধে পরিবার ও সমাজের সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। ঝিনাইদহসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে প্রতি বছর এমন অনেক দুর্ঘটনা ঘটে যেখানে শিশুদের মৃত্যু হয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এই দুর্ঘটনাগুলো শিশুদের একা পানিতে নামার ফলে ঘটে থাকে। এই ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে শিশুদের সাঁতার শেখানো এবং তাদের পুকুর, নদী বা অন্য যে কোনো জলাশয়ে একা নামতে না দেওয়ার বিষয়ে অভিভাবকদের সতর্ক থাকতে হবে।
স্থানীয় প্রশাসন এবং স্কুলগুলোও শিশুদের নিরাপত্তা নিয়ে কাজ করতে পারে। বিদ্যালয়গুলোতে সাঁতার শেখানোর কার্যক্রম চালু করা এবং শিক্ষার্থীদের পানিতে ডোবার ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন করার উদ্যোগ নেওয়া উচিত।
প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদের সঙ্গে হাইকোর্ট বিভাগের ছয় বিচারপতি সাক্ষাৎ
কালীগঞ্জ উপজেলায় ঘটে যাওয়া এই দুটি দুর্ঘটনা দুই পরিবারের জন্য চরম বেদনার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনামিকা দাস এবং রাইয়ান নামে দুটি কোমলমতি শিক্ষার্থী এভাবে প্রাণ হারানো অত্যন্ত মর্মান্তিক। এই ধরনের দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে প্রয়োজন সচেতনতা, সতর্কতা এবং পরিবারের নজরদারি। সমাজের সকল স্তর থেকে শিশুদের সুরক্ষার জন্য আরও উদ্যোগ নেওয়া উচিত, যেন আর কোনো পরিবারকে এভাবে তাদের সন্তান হারাতে না হয়।