ভারতের মুম্বাই শহরে একজন প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ বাবা জিয়াউদ্দিন সিদ্দিককে প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনাটি দেশজুড়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। শনিবার রাতে, তার ছেলের অফিস থেকে বের হওয়ার সময় তার গাড়ির কাছে গুলি চালানো হয়, যার ফলে তিনি গুরুতরভাবে আহত হন এবং হাসপাতালে তার মৃত্যু হয়। এই হত্যাকাণ্ড রাজনৈতিক অঙ্গনে উত্তেজনা তৈরি করেছে এবং আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
ভারত ও কানাডার মধ্যে সম্পর্ক কীভাবে চরম সংকটের মধ্যে
বিহারে জন্মগ্রহণকারী বাবা সিদ্দিক, মাত্র পাঁচ বছর বয়সে তার বাবা-মায়ের সাথে মুম্বাইতে আসেন। মুম্বাইতে আসার পর থেকে তিনি শিক্ষাজীবনের পাশাপাশি ধীরে ধীরে রাজনীতির দিকে ঝুঁকতে শুরু করেন। তার রাজনৈতিক জীবনের শুরু হয়েছিল কংগ্রেস দলের ছাত্র শাখার মাধ্যমে। তিনি তার যোগ্যতার প্রমাণ দিয়ে মুম্বাই কংগ্রেসের যুব শাখার সভাপতি নির্বাচিত হন এবং স্থানীয় রাজনীতিতে বড় পদক্ষেপ নেন। এরপরে তিনি পরপর তিনবার মহারাষ্ট্র বিধানসভার সদস্য নির্বাচিত হন এবং মন্ত্রী হিসেবেও কাজ করেন।
তার রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি, সিদ্দিক তার সামাজিক কার্যক্রমের জন্যও বেশ পরিচিত ছিলেন। বিশেষত, তিনি রমজান মাসে আয়োজিত ইফতার পার্টিগুলোর জন্য বিখ্যাত ছিলেন যেখানে বলিউডের বিখ্যাত তারকা থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা অংশগ্রহণ করতেন।
জার্মানির সিনেমা হলে অভিযুক্তকে গুলি পুলিশের
শনিবার রাতে সিদ্দিক তার ছেলের অফিস থেকে বের হওয়ার সময় তাকে টার্গেট করা হয়। বান্দ্রা এলাকার ব্যস্ততম রাস্তায় গাড়িতে উঠতে গেলে তিনজন বন্দুকধারী তার ওপর হামলা চালায়। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বন্দুকধারীরা তাকে ছয় থেকে সাতটি গুলি করে। তার পেটে এবং বুকে আঘাত লাগে এবং তৎক্ষণাৎ তাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা তার প্রাণ রক্ষা করতে ব্যর্থ হন।
পুলিশ ঘটনার পরপরই তিনজন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করে এবং জানায় যে তারা একটি কুখ্যাত গ্যাংয়ের সদস্য। এই গ্যাংটির নেতা বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। তবে হত্যাকাণ্ডের মূল উদ্দেশ্য এখনো পরিষ্কার নয়। পুলিশের মতে, সন্দেহভাজনরা একটি “ধোঁয়া আতশবাজি” দিয়ে সিদ্দিকের ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষীদের বিভ্রান্ত করে এবং তাকে লক্ষ্য করে গুলি চালায়।
পুলিশ এখনো তদন্ত চালিয়ে যাচ্ছে এবং আরও কয়েকজন সন্দেহভাজনের সন্ধানে অভিযান পরিচালনা করছে। পুলিশের দাবি, তারা ইতিমধ্যে বন্দুকধারীদের কাছ থেকে অস্ত্র এবং গোলাবারুদ উদ্ধার করেছে। তদন্তকারীরা বলছেন যে গ্রেপ্তার হওয়া ব্যক্তিরা সম্ভবত বিষ্ণোই গ্যাংয়ের সদস্য, যার নেতা লরেন্স বিষ্ণোই বর্তমানে কারাগারে রয়েছে। বিষ্ণোই গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে অতীতে বহু অপরাধমূলক কার্যক্রমে জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে জনপ্রিয় পাঞ্জাবি র্যাপার সিধু মুসেওয়ালা হত্যার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা।
তদন্তকারীরা ফেসবুকে একটি পোস্টের বিষয়েও তদন্ত করছে যেখানে এক ব্যক্তি দাবি করেছে যে সিদ্দিক হত্যার পেছনে বিষ্ণোই গ্যাং রয়েছে। তবে পুলিশ এখনো এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বক্তব্য দেয়নি।
সিদ্দিকের হত্যাকাণ্ড রাজ্যের রাজনৈতিক অঙ্গনে বিরাট আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। মহারাষ্ট্র বিধানসভার আসন্ন নির্বাচনের প্রেক্ষাপটে এই হত্যাকাণ্ড রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। কংগ্রেস এবং অন্যান্য বিরোধী দলগুলি এই ঘটনাটিকে রাজ্য সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে উল্লেখ করেছে এবং মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডের নেতৃত্বাধীন সরকারের সমালোচনা করেছে।
কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খড়গে এই হত্যাকাণ্ডকে “মহারাষ্ট্রে আইনশৃঙ্খলার সম্পূর্ণ ব্যর্থতা” বলে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে, দিল্লির প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ালও ঘটনাটি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন এবং বলেছেন যে এই ঘটনা শুধু মহারাষ্ট্রবাসীকেই নয়, সমগ্র দেশকেই ভীত করেছে।
ভর্কুটা এখন রাশিয়ার সবচেয়ে শীতলতম এবং সবচেয়ে পরিত্যক্ত শহরগুলির একটি হিসেবে পরিচিত।
এই হত্যাকাণ্ড মুম্বাই শহরের সেই অন্ধকার সময়কে স্মরণ করিয়ে দেয় যখন ১৯৯০-এর দশকে মুম্বাই আন্ডারওয়ার্ল্ডের হাত ধরে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ব্যবসায়ী এবং বলিউড তারকাদের লক্ষ্য করে খুনের ঘটনা ঘটত। সে সময় মুম্বাইয়ের আন্ডারওয়ার্ল্ড বেশ সক্রিয় ছিল এবং ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক নেতাদের টার্গেট করা হতো। যদিও বর্তমান পরিস্থিতি আগের চেয়ে উন্নত হয়েছে, তবুও এই ধরনের হত্যাকাণ্ড আবারো সেই সময়ের স্মৃতি ফিরিয়ে আনছে।
সিদ্দিকের হত্যাকাণ্ডের পরপরই বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যম এবং সংবাদমাধ্যমে জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। মানুষ আতঙ্কিত এবং ক্ষুব্ধ। অনেকেই এই হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র হিসেবে দেখছেন, আবার অনেকেই এটিকে মুম্বাইয়ের অপরাধ জগতের পুনরুত্থান হিসেবে মনে করছেন। বিশেষ করে, বিষ্ণোই গ্যাংয়ের জড়িত থাকার সম্ভাবনা নিয়ে বিভিন্ন মহলে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
ইসরায়েলের সর্বশেষ হামলা নেতানিয়াহুর পরবর্তী পদক্ষেপ
মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী একনাথ শিন্ডে তার সরকারের পক্ষ থেকে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়া হবে এবং এই ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে তা নিশ্চিত করার জন্য সব ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া হবে। তিনি বলেছেন, “আমাদের দায়িত্ব হলো নাগরিকদের নিরাপত্তা প্রদান করা এবং যারা হুমকি পাচ্ছেন তাদের পর্যাপ্ত সুরক্ষা দেওয়া।”
এই হত্যাকাণ্ডের তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত এবং প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত না করা পর্যন্ত এ নিয়ে আরও জল্পনা চলবে। রাজনৈতিক অঙ্গনেও এই ঘটনা নিয়ে আরও বিতর্ক এবং দোষারোপের খেলা চলতে থাকবে। মুম্বাইয়ের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে যে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে, তা সমাধান করতে রাজ্য সরকারকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে।
এই হত্যাকাণ্ড শুধু একজন রাজনৈতিক নেতার মৃত্যু নয়, বরং মুম্বাইয়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক পরিস্থিতির উপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।