সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান এবং সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাককে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সোমবার (১৪ অক্টোবর) রাতে এই দুই গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বকে পৃথক ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়, যা বাংলাদেশে রাজনীতির অঙ্গনে বড় ধরনের আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
গোপালগঞ্জ-১ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য ফারুক খানকে তার ঢাকার ক্যান্টনমেন্ট এলাকার বাসা থেকে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) গ্রেপ্তার করে এবং পরে তাকে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়। ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। ফারুক খানের বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা রয়েছে, যার মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য হলো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হতাহতের ঘটনায় তার সংশ্লিষ্টতা।
ফরিদপুরে অতিরিক্ত মদ পানে আরও এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু
ফারুক খান একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে গোপালগঞ্জ-১ আসন থেকে জয়লাভের পর তিনি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে তার নাম বেশ কয়েকটি বিতর্কিত মামলার সাথে যুক্ত হয়ে ওঠে। এর মধ্যে একটি মাদ্রাসা ছাত্র সুমন ইসলামের হত্যাকাণ্ডের সাথে তার নাম আসায় তার বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এই মামলাটি ২০ সেপ্টেম্বর তারিখে নিহত ছাত্রের মা মোছা. কাজলী দায়ের করেন। মামলার সূত্র ধরে ফারুক খানকে আইনের আওতায় আনা হয়।
সোমবার রাতে আরেকটি বড় ঘটনা ঘটে যখন সাবেক কৃষিমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাককে রাজধানীর ইস্কাটন এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়। ডিবি পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার রেজাউল করিম মল্লিক জানান, রাত পৌনে ৮টার দিকে আব্দুর রাজ্জাককে ডিবি পুলিশ গ্রেপ্তার করে। তার বিরুদ্ধেও একাধিক মামলা রয়েছে, যা তাকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরে নিয়ে আসে।
টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে দুর্ঘটনায় স্পিডবোট ডুবে ৯ জন র মধ্যে ৮ জন উদ্ধার একটি শিশু নিখোঁজ
আব্দুর রাজ্জাক বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনে (বিএডিসি) বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা হিসেবে তার কর্মজীবন শুরু করেছিলেন এবং ২০০১ সালে চাকরি থেকে অবসর নেন। পরবর্তীতে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে যুক্ত হন এবং খাদ্য ও কৃষিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি টাঙ্গাইল থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন এবং আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ছিলেন। তবে শেখ হাসিনার সর্বশেষ মন্ত্রিসভায় তার কোনো পদ ছিল না।
সাবেক দুই মন্ত্রীর গ্রেপ্তার রাজনৈতিক অঙ্গনে ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ গ্রেপ্তারগুলো বর্তমান সরকার এবং বিরোধী দলের মধ্যে চলমান সংঘাতের প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে, ছাত্র-জনতার আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী বিক্ষোভ এবং সাম্প্রতিক নির্বাচনী সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে এই ধরনের গ্রেপ্তার রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।
সংশোধিত – নিউজ মামলায় হেরেও অন্যের জমি দখল করলেন সাবেক পৌর কাউন্সিলর
বিরোধী দল এবং সরকারের মধ্যে বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে উত্তেজনা বেড়েছে, যা সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি আন্দোলন এবং সংঘর্ষের কারণ হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের গ্রেপ্তার পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে করে তুলেছে। অনেকেই ধারণা করছেন, এটি শুধুমাত্র আইনের প্রয়োগ নয়, বরং রাজনৈতিক বিরোধের অংশ হিসেবেও দেখা যেতে পারে।
সাবেক দুই মন্ত্রীর গ্রেপ্তারের পর রাজনৈতিক মহল, মিডিয়া এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে। একদিকে অনেকেই আইনের শাসনের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন, অন্যদিকে কিছু রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং বিরোধী দলের নেতারা এ ঘটনাকে রাজনৈতিক প্রতিহিংসার অংশ হিসেবে দেখছেন।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় অপরাধের সাথে জড়িত যে কোনো ব্যক্তিকে বিচারের আওতায় আনা হবে, তা তিনি যে রাজনৈতিক দলেরই হোন না কেন। সরকার এ ঘটনাগুলোকে আইনি প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে ব্যাখ্যা করছে এবং এর সাথে রাজনৈতিক কোনো উদ্দেশ্য নেই বলে দাবি করছে।
সাবেক মন্ত্রীর গ্রেপ্তারের পর আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে এবং দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হতে পারে। বিশেষ করে, আসন্ন নির্বাচনের আগে এ ধরনের ঘটনা দলের মধ্যে বিভেদ এবং বিরোধের জন্ম দিতে পারে।
ঝিনাইদহে ৩ কৃষকের ২ বিঘা জমির পান বরজ কেটে দিয়েছে দুর্বত্তরা
সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটনমন্ত্রী লেফটেন্যান্ট কর্নেল (অব.) ফারুক খান এবং সাবেক কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাকের গ্রেপ্তার বাংলাদেশের রাজনীতির বর্তমান বাস্তবতাকে প্রতিফলিত করে। এ ধরনের ঘটনা সাম্প্রতিক রাজনৈতিক সহিংসতা এবং উত্তেজনাকে কেন্দ্র করে ঘটেছে।