ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলায় মদ পান করে স্বপ্না বাওয়ালী (১৬) নামে এক স্কুলছাত্রীর মৃত্যু হয়েছে। রবিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে। স্বপ্না উপজেলার গাজিরটেক ইউনিয়নের চর অযোধ্যা গ্রামের বাসিন্দা পঞ্চানন বাওয়ালীর মেয়ে এবং সে স্থানীয় চর অযোধ্যা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্রী ছিল।
এর আগে রবিবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘোষণা করা হয়। এ নিয়ে গত দুদিনের ব্যবধানে ফরিদপুরে মদ পান করে তিনজনের মৃত্যু হলো। গত শনিবার বিষাক্ত মদপানে পূজা ও রত্না নামে দুই বান্ধবীর মৃত্যু হয়।
টেকনাফ-সেন্টমার্টিন নৌপথে দুর্ঘটনায় স্পিডবোট ডুবে ৯ জন র মধ্যে ৮ জন উদ্ধার একটি শিশু নিখোঁজ
পরিবার সূত্রে জানা যায়, স্বপ্না তাদের চার ভাইবোনের মধ্যে দ্বিতীয়। গত শনিবার সন্ধ্যায় তার বড় বোন সুস্মিতার সঙ্গে পূজামণ্ডপে ঘুরতে বের হয়। রাত সাড়ে ১০টার দিকে তারা বাড়ি ফিরে এসে খাওয়া-দাওয়া করে ঘুমিয়ে পড়ে। পরদিন রবিবার সকালে স্বপ্না বমি করতে শুরু করে। পরিবারের লোকজন তাকে স্থানীয় একজন চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যান। সেখানে চিকিৎসক তাকে অবিলম্বে ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। বিকেল ৫টার দিকে স্বপ্নার শারীরিক অবস্থা আরও খারাপ হতে শুরু করে। এসময় পরিবার জানতে পারে, সে মদ পান করেছে।
অসুস্থ হওয়ার পর পরিবারের কাছে স্বপ্না মদ পানের কথা স্বীকার করে। বিষয়টি জানার পর পরিবারের লোকজন তাকে দ্রুত ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে রাত সাড়ে ৮টার দিকে চিকিৎসকরা স্বপ্নাকে মৃত ঘোষণা করেন।
স্বপ্নার এই অকাল মৃত্যুতে তার পরিবার শোকাহত। গাজিরটেক ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. ইয়াকুব আলী স্বপ্নার মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন এবং জানান, এই ঘটনায় স্থানীয় জনগণের মধ্যেও শোকের ছায়া নেমে এসেছে।
সংশোধিত – নিউজ মামলায় হেরেও অন্যের জমি দখল করলেন সাবেক পৌর কাউন্সিলর
স্বপ্নার স্কুলের প্রধান শিক্ষক বিঞ্চু কুমার চক্রবর্তী জানান, “স্বপ্না খুবই মেধাবী ছাত্রী ছিল। তার এই অকাল মৃত্যুতে আমরা সবাই হতবিহ্বল হয়ে গেছি।” স্থানীয়ভাবে তাকে একটি দায়িত্বশীল ও সুশৃঙ্খল ছাত্রী হিসেবে বিবেচনা করা হতো।
চরভদ্রাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল গাফফার ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, অতিরিক্ত মদপানের কারণেই স্বপ্নার মৃত্যু হয়েছে।” তিনি আরও জানান, এই ঘটনায় একটি অপমৃত্যুর মামলা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে এবং স্বপ্নার মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
স্বপ্নার মৃত্যুর ঘটনা চরভদ্রাসনের মানুষদের মধ্যে গভীর শোকের পাশাপাশি উদ্বেগও সৃষ্টি করেছে। অনেকেই মদ পানের ক্ষতিকর দিকগুলো নিয়ে কথা বলছেন। বিশেষ করে কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে মদ্যপানের প্রবণতা নিয়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ ধরনের অপ্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে মদ্যপানের প্রভাব নিয়ে অভিভাবক এবং শিক্ষকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় এক বাসিন্দা জানান, “এই ধরনের ঘটনা খুবই দুঃখজনক। আমরা বুঝতে পারছি না, কিভাবে একজন স্কুলছাত্রী মদ পানে জড়িত হলো।”
এ ঘটনা স্থানীয় প্রশাসনকেও চিন্তিত করেছে। মদ্যপানসহ অন্যান্য ক্ষতিকর আচরণ থেকে কিশোর-কিশোরীদের রক্ষা করতে কী ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। অভিভাবকদের আরও সতর্ক থাকার পাশাপাশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়ানোর পরামর্শও উঠে আসছে।
স্বপ্নার মৃত্যু শুধুমাত্র একটি মর্মান্তিক ব্যক্তিগত ঘটনা নয়, এটি সমাজে মদ্যপানের ভয়াবহতা সম্পর্কেও একটি সতর্ক সংকেত। কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে মদ্যপানের প্রবণতা, তাদের সহজলভ্যতা এবং ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে পরিবার ও সমাজকে আরও সচেতন হতে হবে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, কিশোর বয়সী ছেলেমেয়েদের মধ্যে সঠিক মূল্যবোধ ও সচেতনতা তৈরি করতে হবে, যাতে তারা এই ধরনের ক্ষতিকর কাজ থেকে দূরে থাকে।
স্বপ্নার মর্মান্তিক মৃত্যুর পর, স্থানীয় প্রশাসন এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছে। তারা মদ বিক্রি ও সেবনের ওপর কড়া নজরদারি এবং অবৈধ মদের ব্যবসার বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
ঝিনাইদহে ৩ কৃষকের ২ বিঘা জমির পান বরজ কেটে দিয়েছে দুর্বত্তরা
ওসি আব্দুল গাফফার বলেন, “আমরা এই বিষয়ে আরও তদন্ত করছি। অবৈধভাবে মদ সরবরাহের সাথে জড়িতদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে।” এছাড়াও প্রশাসন কিশোর-কিশোরীদের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর জন্য উদ্যোগ নিতে চাচ্ছে।
স্বপ্না বাওয়ালীর মৃত্যু শুধু তার পরিবারের জন্যই নয়, পুরো এলাকার জন্য এক বিরাট শোক ও উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একজন মেধাবী ছাত্রীর এই অকাল মৃত্যু সামাজিকভাবে মদ্যপানের বিপজ্জনক দিকগুলোকে সামনে নিয়ে এসেছে।
প্রসঙ্গত,এর আগে মদপানে ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থী মাগুরার শালিখা উপজেলার দেবিলা গ্রামের সাধন বিশ্বাসের মেয়ে পূজা বিশ্বাস (২০) ও একই কলেজের ডিগ্রির শিক্ষার্থী ফরিদপুরের বোয়ালমারী পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের আমগ্রাম এলাকার রতন কুমার সাহার মেয়ে রত্না সাহা (২৬) মারা যান। তবে তারা কাদের সঙ্গে এবং কখন এই মদ পান করেছিল সে তথ্য এখনো জানা যায়নি।
প্রশাসন, পরিবার, শিক্ষক এবং সমাজের অন্যান্য অংশের উচিত কিশোর-কিশোরীদের সুরক্ষার জন্য সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া, যাতে ভবিষ্যতে এ ধরনের মর্মান্তিক ঘটনা আর না ঘটে।